শিশু ও গর্ভবতীদের ওষুধে সতর্কতা জরুরি

মুনিরুদ্দীন আহমেদ
  প্রকাশিত : ১৩ মে ২০১৭, ১৫:২১| আপডেট : ১৩ মে ২০১৭, ১৬:০৬
অ- অ+

শিশু, বয়স্ক ও গর্ভবতীদের ওষুধ প্রদানে সতর্ক হোন, একান্ত প্রয়োজন না হলে যখন-তখন ওষুধ দেবেন না। বাজারে আসা ওষুধ নতুন হলে আরও সাবধান। কারণ, জীবজন্তুর ওপর যেমন ওষুধের কার্যাবলী পরীক্ষা করা হয়, তেমনি ওষুধের টক্সিকোলজি বা বিষাক্ততার পরীক্ষাও জীবজন্তুর ওপর করা হয়।

কোনো ওষুধ জীবজন্তুর ক্ষেত্রে নিরাপদ প্রমাণিত না হলে সে ওষুধ দিয়ে মানবদেহে পরীক্ষা চালানো বিপজ্জনক। শিশু ও গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে অনেক ওষুধ প্রয়োগ করা হয় যা মানবদেহে প্রয়োগ করে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো সম্ভব হয় না।

শিশুদের শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠে না এবং তাদের শরীরের বিভিন্ন সিস্টেম, এনজাইম ও মেটাবলিক প্রক্রিয়া পরিপূর্ণতা লাভ করে না বলে তাদের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো বিপজ্জনক।

গর্ভবতীদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। পরীক্ষার নমুনা ওষুধটি যথেষ্ট নিরাপদ না হলে তা গর্ভবতীদের প্রয়োগ করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালালে মা ও গর্ভজাত সন্তানের প্রভূত ক্ষতি হতে পারে।

এ কারণে শিশু, নারী বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অনেকেই প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে। এরা নিজেদের দেশের মানুষ বাদ দিয়ে সরলতা, অজ্ঞতা ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে, কিছু আর্থিক সুবিধা দিয়ে অনুন্নত ও গরিব দেশের অসহায় দরিদ্র মানুষের ওপর নতুন ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়।

জীবজন্তুর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শুরু করে মানবদেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যন্ত অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রচুর সময় ও অর্থের প্রয়োজন। এ কারণে প্রতিটি ধাপে রয়েছে ম্যানিপুলেশন ও দুর্নীতির সুযোগ। অসাধু গবেষক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের যোগসাজশে ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেক ক্ষেত্রে সময় ও অর্থ বাঁচানোর জন্য অপর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ওষুধ বাজারজাত করে ফেলে।

এর ফলে বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা থাকে । ২০০৪ সালে বিশ্বের খ্যাতনামা ওষুধ কম্পানি মার্ক তাদের ব্লকবাস্টার ওষুধ ভায়োক্স (জেনেরিক-রফেকক্সিব) হাজার হাজার হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর কারণে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।

আরও একটি বিপজ্জনক ওষুধ থ্যালিডোমাইড। এই ওষুধটি গর্ভবতীদের প্রদানের কারণে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার শিশু অঙ্গ বিকৃতি বা অঙ্গহীন অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করার পর ওষুধটি বাজার থেকে তুলে নিতে বাধ্য হয় কম্পানি। নিষিদ্ধ ওষুধ রসিগ্লিটাজন ও আরও অনেক ওষুধের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। এসব করুণ পরিণতির জন্য দায়ী কিন্তু অপর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল।

লেখক: অধ্যাপক, ক্লিনিকাল ফার্মাসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘সবার আগে বাংলাদেশ’ আয়োজিত কনসার্ট-এর প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত
উত্তরখানে বিপুল চোলাই মদসহ ম্যাক্সওয়েল গ্রেপ্তার
কাকরাইলে র‍্যাব পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৫
একাত্তরকে ভুলে গেলে চলবে না: মির্জা ফখরুল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা