পিরোজপুরে পুলিশি বাধায় বিএনপির সভা পণ্ড, অতিথির নিন্দা

সৈয়দ মাহ্ফুজ রহমান, পিরোজপুর থেকে
| আপডেট : ১৩ মে ২০১৭, ২২:৪৭ | প্রকাশিত : ১৩ মে ২০১৭, ২২:৪১

পিরোজপুর জেলা বিএনপির ‘বিশেষ সভা’ পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে দুজনকে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ওই সভা বর্জন করেন প্রধান অতিথি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।

শনিবার সকালে জেলার দলীয় কার্যালয়ে সভার করা হয়েছিল।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, পিরোজপুরে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ গাজী নুরুজ্জমান বাবুলের সভাপতিত্বে বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুস রহমান, মাহাবুবুল হক নান্নু।

এছাড়া, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিন, বিশেষ বক্তা হিসেবে কেন্দ্রীয় পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক, অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল কবির লাবু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম মাহাতাব, এলিজা জামান।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেনের পরিচালনায় প্রধান বক্তা অ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিন সভার প্রথমে বক্তব্য শুরু করেন। কার্যালয়ের বাইরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় অবস্থান করছিলেন। এসময় পিরোজপুর সদর থানা পুলিশের একটি দল কোনো রকম উস্কানি ছাড়াই অবস্থানরত নেতাকর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ফলে ভেতরে বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এক পর্যায় দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কেন্দ্রীয়সহ জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা। লাঠিচার্জে অন্তত ১০জন আহত হন। এছাড়াও পুলিশের বিরুদ্ধে দুজনকে আটক, নারী নেত্রীর সাথে অশোভন আচরণ ও কয়েকটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন অবরুদ্ধ থেকে বক্তব্য রাখবেন না বলে জানিয়ে দেন। তিনি ওই সভাকে বর্জন করে বলেন, সামরিক শাসন চলা ছাড়া অন্য কোনো অবস্থাতেই এমন পরিস্থিতির শিকার হইনি। আজ আপনারা দেখেছেন একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি পুলিশের মারমুখী আচরণ।

প্রশাসনের উদ্দ্যেশে বলেন, এই যে বাড়বাড়ি করলেন তাকে কি সরকারের সুনাম বয়ে আনলেন, না সরকারের দুর্নাম করলেন। এ ঘটনা যখন সংবাদপত্রে, ইংরেজি পত্রিকায় ছাপা হয় তখন বিদেশিরা ঠিকই জেনে যাবে। যারা মনে করেন এরা সরকারের শুভাকাঙ্খী, আসলে তা মেটেই নয়, তারা সরকারের শুভাকাঙ্খি নন, সরকারের ক্ষতি করছেন।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশে কি ১/১১ (ওয়ান ইলেভেন) চলছে, এটা তো বাকশালকেও ছাড়িয়ে গেছে। পুরো দেশ আজ জেলখানায় পরিণত হয়েছে, দেশ আজ অবরুদ্ধ, গণতন্ত্র অবরুদ্ধ, সংবিধান অবরুদ্ধ হয়ে আছে। আমরা এই অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।

সভা বর্জন করে উপস্থিত সাংবাদকর্মীদের সাথে একান্ত আলাপকালে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আপনারা আমাদের বক্তব্য শুনতে এসেছিলেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা সম্ভব হলো না। তা আপনারা দেখলেন। আমাদের একটি ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১০জন আহত, দুই জনকে আটক করা হয়েছে, নারী নেত্রীর সাথে অশোভনীয় আচরণ করা হয়েছে।

আমাদের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুস রহমানের সাথে পুলিশ অশোভনীয় আচরণ করেছে। জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন আহত হয়েছেন। দেশে কি আইনের শাসন আছে বলে তিনি প্রশ্ন রাখেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে।

প্রধান বক্তা অ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, সরকার, প্রশাসন বিএনপিকে একটি ঘরে আটকে রাখতে চায়। নেতাকর্মীদের উদ্দ্যেশে বলেন, আপনারা প্রস্তুত থাকুন রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের জন্য।

সভা উপলক্ষ্যে কার্যালয়ে জেলার মঠবাড়িয়া, ভাণ্ডারিয়া, কাউখালী, ইন্দুরকানী, স্বরুপকাঠী, নাজিরপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিএনপি কার্যালয়ের সভা উপলক্ষে ডিউটিরত সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মামুন সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক এক বক্তব্যে বলেন, আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করেছি। ছাত্রদলের দুটি গ্রুপিং থাকায় এখানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যাদের গলায় দলীয় কোনো কার্ড ছিল না তারা এখানে (কার্যালয়ের কাছে) থাকতে পারবে না, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল আমাদের। আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। দুজন আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, রিয়াজ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। সে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছিল। কোন মামলায় তা তিনি তাৎক্ষণিক জানাতে পারেনি।

এ বিষয়ে পিরোজপুর সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুমুর রহমান বিশ্বাস ঢাকাটাইমসকে বলেন, তাদের ঘরোয়া অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তাদের সাথে এর আগে কথা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন, আমাদের আমন্ত্রিত অতিথিদের কার্ড থাকবে, কার্ড ছাড়া আমরা কোনো অতিথিকে ‘অ্যালাউ’ করবো না। আপনারাও করবেন না। ছাত্রদলের মধ্যে দুমুখী, তৃমুখী দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়েছে।

দুজন গ্রেপ্তার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, রিয়াজ সিকদার নামে একজন গ্রেপ্তার আছে। মাদক মামলায়।

মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে বলেন, দুটি মোবাইল লাঠিচার্জের সময় পাওয়া গেলেও তা পরে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

(ঢাকাটাইমস/১৩মে/প্রতিনিধি/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :