পুঁজিবাজারের গতিবিধি নিয়ে বিভ্রান্তিতে বিনিয়োগকারীরা

ইউনুছ আলী আলাল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ মে ২০১৭, ১২:১৫ | প্রকাশিত : ১৪ মে ২০১৭, ১০:৪৮

পুঁজিবাজারের গতিবিধি ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে- তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েই গেছে। একদিন সূচক বাড়ছে তো লেনদেন কমছে। আবার পরদিন সূচক কমছে তো লেনদেন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন। গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে একদিন সূচক ১৮ পয়েন্ট কমলেও লেনদেন বেড়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিক্রয় চাপে সাপোর্টহীন হয়ে পড়েছে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে। টানা ৫ কার্যদিবসে অব্যাহত পতনে বৃহস্পতিবার দিনশেষে ডিএসই’র সাধারণ মূল্য সূচক সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক শ্রেণির বিনিয়োগকারী রয়েছে বাংলাদেশে। কিছু বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা অন্য পেশায় থাকলেও পুঁজিবাজার বোঝেন ও সবসময় খোঁজ-খবর রাখেন। তারা নিয়মিত লেনদেন না করলেও দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করেন। ক্যাপিটাল গেইনের পাশাপাশি বছর শেষে ডিভিডেন্ড-দুইভাবেই মুনাফা করেন তারা। সংখ্যায় কম হলেও প্রকৃত অর্থে এরাই বিনিয়োগকারী।

আর একটি শ্রেণি রয়েছে, যাদের মূল পেশাই শেয়ার ব্যবসা। এরা প্রতিদিন বাজারে আসেন; নিয়মিত লেনদেন করেন। বাজার তেমন না বুঝলেও অন্যের পরামর্শে এক শেয়ার বিক্রি করে অন্যটা কেনেন। গুজবে কান দিয়ে লেনদেন করেন। বছরের পর বছর ব্যবসা করেও তারা তেমন সুবিধা করতে পারেন না। পুঁজিবাজারে ধস নামলে এই শ্রেণিটাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের পুঁজিবাজারে এই শ্রেণির বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেশি।

আরেক শ্রেণির বিনিয়োগকারী রয়েছেন, তারা বিভিন্ন কাম্পানির শেয়ার ডিভিশনের কর্মকর্তার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখেন। মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগেই জেনে যান তারা। নিশ্চিত খবর পেয়ে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফাও বের করে নেন। সংখ্যায় অল্প হলেও এরা বেশ পেশাদার। এ ব্যবসা করেই এক সময় অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যান। দেশের পুঁজিবাজারে এরাই সবচেয়ে সুবিধাভোগী।

গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক ধারা চলছে চলছে। মাঝে দু-একদিন একটু চাঙ্গাভাব ফিরলেও আবার গত পাঁচ কার্যদিবস থেকে নেতিবাচক প্রবণতায় চলছে লেনদেন। বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না। কারণ সামনের দিনগুলোয় বাজারের গতিবিধি কোনদিকে যাবে তা পূর্বানুমান করাও সম্ভব হচ্ছে না। অনেকের বিনিয়োগ আটকে গেছে। পোর্টফোলিও নেগেটিভ থাকায় তারা বের হয়েও আসতে পারছেন না। ফলে ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারীরা বাজার ইতিবাচক হওয়ার অপেক্ষা করছেন।

বর্তমান বাজার নিয়ে হযরত আমানতশাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেড ডিএসইর অনুমোদিত প্রতিনিধি দেবাশীষ সাহার অবশ্য বলেছেন, বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে চলছে। উত্থান-পতন এটা পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। এতে বিনিয়োগকারীদের বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই। তাই গুজবে কান না দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

দেবাশীষ বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় সবারই খেয়াল রাখা উচিৎ। কোন স্টক থেকে কত শতাংশ মুনাফা নিতে চানবা কত লোকসান হলে শেয়ারটা ছেড়ে দেবেন, সেটা আগেই ঠিক করা উচিত। অতি মুনাফার লোভে প্রলুব্ধ যেন কেউ না হয়ে যায়। কারণ এই লোভে পরেই বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ হয়ে যায়। মুনাফার দিকে যতটা না বেশি নজর থাকবে, তার চেয়ে লোকসান যেন কম হয় সেই দিকটাই বেশি করে খেয়াল রাখা উচিত। তাহলে লাভ একসময় হবেই।

বিনিয়োগকারী মতিউল আলম চৌধুরী সোহেল বলেন, পুঁজিবাজারে মাঝে-মধ্যে ছন্দপতন ঘটলেও পরিস্থিতি এখনও অনুকূলে রয়েছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত রয়েছে বিনিয়োগের অনুকূলে। একইসঙ্গে বর্তমানে বাজারে অতিমূল্যায়িত শেয়ার নেই বললেই চলে। যে কারণে এ বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে সাধারণ জনগণ।

এই বিনিয়োগকারীর মতে, বর্তমানে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার অনেক কম। সুদ কম হওয়ায় ব্যাংক ছেড়ে পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন অনেকে। কারণ ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে লভ্যাংশের মাধ্যমেই ব্যাংকের চেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৩৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৫টির, কমেছে ১৫৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির। এ সময় ডিএসইতে ৮৮ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৬১টি শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। গত সপ্তাহে ৪ কার্যদিবসে ডিএসইতে ২ হাজার ৮৩১ কোটি ২৯ লাখ ৫৫৫ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহের ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৪১ কোটি ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৬ টাকা। সে হিসাবে সার্বিক লেনদেন কমেছে ০.৩৭ শতাংশ। মোট লেনদেনের ৯২.১৯ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ৫.১৩ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ১.২৫ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং ১.৪৩ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে লেনদেন হয়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪৪.৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪৯৬.২১ পয়েন্টে। গত সপ্তাহে ডিএসই দর শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর মূল্য সূচক ডিএসইএস ১.৬৯ পয়েন্ট কমে ১২৭৩.৩৮ পয়েন্টে ও ডিএস-৩০ সূচক কমেছে ৯.৭৬ পয়েন্ট। সপ্তাহের শুরুতে ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। সপ্তাহের শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৪০৯ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ০.৫৫ শতাংশ।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৮৫ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত সপ্তাহে ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড ১ কোটি ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৫১ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার টাকা। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার দর দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির ১ কোটি ৮০ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৯৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির ৪০ লাখ ৪ হাজার ৪২৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৬৮ কোটি ৭১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- আর্গন ডেনিমস, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি, ন্যাশনাল ফিড মিল, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস,ওয়ান ব্যাংক,ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

পিই রেশিও কমেছে: সমাপ্ত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কমেছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে পিই রেশিও কমেছে দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৪ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে পিই রেশিও অবস্থান করছে ১৫ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।

বিশ্লেষকদের মতে, পিই রেশিও যতদিন ১৫ এর ঘরে থাকে ততদিন বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। সপ্তাহ শেষে খাতভিত্তিক ট্রেইলিং পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ৮.৪ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ২৫.২ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ২৫.৮ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ২১.২ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের ২৪.৪ পয়েন্টে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১৩ পয়েন্টে, সাধারণ বিমা খাতে ১২.৮ পয়েন্টে, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ২৬.৩ পয়েন্টে।

এছাড়া পাট খাতের পিই রেশিও মাইনাস ১৮.২ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ২৮.৭ পয়েন্টে, এনবিএফআই খাতে ২২.৫ পয়েন্ট, কাগজ খাতের মাইনাস ৩২.৯ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৯.৮ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতের ১৭.১ পয়েন্টে, চামড়া খাতের ১৭.৫ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৯.৪ পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের ২৮ পয়েন্টে এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ২২.১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ঢাকাটাইমস/১৪মে/ইউএলএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

পুঁজিবাজার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা