আমার কিছু কথা
২০১৩ সালের ১৪ মে ছিল ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের ১ম বর্ষপূর্তি। বিশেষ ওইদিনকে সামনে রেখে লিখেছিলেন সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন। ‘আমার কিছু কথা’-শিরোনামে বিশেষ স্মৃতিগদ্যটি ওইদিন ঢাকাটাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল। আজ (১৪ মে) ঢাকাটাইমসের ৫ম বর্ষপূর্তি। পাঠকদের জন্য লেখাটি পুনঃপ্রকাশিত হলো।
জীবনটা ছকে বাঁধা-বন্ধুদের অনেককে এমন বলতে শুনেছি। শুভাকাঙ্খী,আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেও প্রায়শই বলেন, ছকে বাঁধা জীবনেই স্বস্তিবোধ করেন তারা। কিন্তু ছকে বাঁধা জীবনে থিতু হতে চাইনি কখনো। এভাবে যে জীবনের ৪০ টা বছর পার হয়ে যাবে কে জানত! সকালে আম্মা বললেন, বাবা আজ তোর জন্মদিন। তাইতো! হিসেব কষতে বসলাম। পাক্কা ৪০ বছর পার করে দিলাম দেখতে দেখতে। যমজ দুই কণ্যার জনক আমি।
৪০ বছরের জীবনে বহুবার জীবননাশের হুমকি এসেছে। সর্বশেষ গত সোমবার আর প্রথমবার ‘৯৯ সালে। প্রথম জীবননাশের হুমকি পাই ‘৯৯ সালে। ঝিনাইদহের কোর্টচাদপুরের হুন্ডি কাজলের লোকজনের কাছ থেকে এই হুমকি আসে। মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা তুলে অধিকহারে সুদ দেওয়ার লোভ দেখান কাজল। আসলে সবই ধোকাবাজি। সাপ্তাহিক ২০০০ এর প্রচ্ছদ কাহিনীতে হুন্ডি কাজলের মুখোশ তুলে ধরি। এই কারণে আসে হুমকি। প্রিয় সম্পাদক প্রয়াত শাহাদাত চৌধুরী বললেন, এক সময় দেখবে এসব গা সওয়া হয়ে গেছে। সত্যিই তাই। ২০০০ সালে প্রথম আলোতে যোগ দিয়ে আলোচনায় আসার মতো রিপোর্ট করি ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, লক্ষীপুরের গডফাদার আবু তাহেরকে নিয়ে। ‘ভয়াবহ আতঙ্কের শহর লক্ষীপুর’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন জেলা সম্পাদক ও পৌর চেয়ারম্যানের মুখোশ উন্মোচন করি। তুলে ধরি কীভাবে আইনজীবি ও বিএনপি নেতা নুরুল ইসলামকে টুকরো টুকরো করে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয় তাহের পুত্র ও তার ক্যাডাররা। চারিদিকে রীতিমতো হৈ-চৈ পড়ে যায়। যথারীতি মৃত্যু হুমকি আসে,তাহেরের লোকজনের কাছ থেকে। ফেনীতে আশ্রয় নেই। ফেনীর প্রথম আলো প্রতিনিধি প্রিয় তাহের ভাই একাধিকবার জায়গা বদল করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করেন।
মনে আছে, প্রথম আলোর আমার শ্রদ্ধেয় সম্পাদক মতিউর রহমান বলেছিলেন, আরিফ চারিদিক থেকে অসংখ্য ফোন পাচ্ছি তোমার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য। খোদ লতিফুর রহমান (প্রথম আলোর মালিক) না-কি মতি ভাইকে বলেছিলেন আচ্ছা কি লিখেছেন বলেন তো! বাংলা পড়তে না জানা লতিফুর রহমান মতি ভাইকে বলেন সবাই বলছে, প্রথম আলো লক্ষীপুরের আসল কাহিনী ছেপে সরকারের দৈন্যতা প্রকাশ করে দিয়েছে।
মতি ভাইয়ের মুখে এই কথা শুনে তাহের পুত্রের প্রাণনাশের হুমকি তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল।
২০০১ এ ফেনীর তৎকালীন গডফাদার জয়নাল হাজারীর লোকজনের হুমকির মুখে কতবার যে ফেনী শহরে জায়গা বদল করেছি তার বর্ণনা দিলে ছোটখাটো সিনেমার কাহিনী হয়ে যাবে। ওই সময়ে ইউএনবির ফেনী প্রতিনিধি (বর্তমানে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি) টিপু সুলতানকে হাজারীর ক্যাডার বাহিনী বেধড়ক পিটিয়ে প্রায় মৃত অবস্থায় যখন রাস্তায় ফেলে গেলো তখন ঢাকা থেকে ফেনী ছুটে গিয়েছিলাম। মিডিয়ার ঢাকা ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা সাহস করে কেউই ওই ঘটনা লিখতে রাজি নয়। কিন্তু পুরো বৃত্তান্ত ছাপা হল প্রথম আলোতে। সারা দেশে তোলপাড় শুরু হল। যথারীতি হুমকি। তন্নতন্ন করে হাজারীর ক্যাডাররা ফেনীতে খুঁজতে থাকলো আরিফুর রহমানকে। পাবে কি করে? আমি তো কুমিল্লা থেকে আসা-যাওয়া করছি। আর সাধারণ মানুষ হয়ে ঘুরে ঘুরে তথ্য জোগাড় করছি।
২০০০ সালে তাহেরের অত্যাচারে লক্ষীপুরে বিএনপির এমপি থেকে শুরু করে নেতারা সকলেই শহর ছাড়া। আমার একেরপর এক প্রতিবেদনে যেন সাহস সঞ্চার হয় বিএনপি নেতাদের মনে। বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪০ জনের সাংসদ দল যায় লক্ষীপুরে। কিন্তু ওখানে গিয়ে ঘটে আরেক ঘটনা। বি. চৌধুরী যখন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন আমার অবস্থান এমন জায়গায় ছিল যে কারণে না-কি আজকের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপকে ক্যামেরায় দেখা যাচিছল না। যায় কোথায়!! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন আমাকে। বললেন, দেখে নেবেন। বিস্ময়কর হলো সেই জয়নাল আবদিন ফারুকের সঙ্গে এখন দেখা হলে অধিকাংশ সময়ই আর আগে সালাম দিতে পারিনা। উনিই হাত উচিয়ে সালাম জানান আগেভাগে।
বহুবার খুলনায় গিয়েছি পেশাগত কারণে। অধিকাংশবারই প্রথম আলোয় থাকাকালে। কখনো সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু ভাই কিংবা হারুন অর রশীদ, রাজনীতিক মঞ্জুরুল ইমাম, এ এস এম রবের হত্যাকান্ড পরবর্তী অবস্থা কাভার করতে। কখনো বা সন্ত্রাস কবলিত দক্ষিণাঞ্চলের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে ও পাঠককে জানাতে। সন্ত্রাসী আসাদুজ্জামান লিটুসহ অনেক গডফাদারের মুখোশ উন্মোচন করেছি। কেন খুলনায় সস্তায় ভাড়াটে খুনি পাওয়া যায়, গডফাদারের গডফাদার কারা এসব যখন লিখেছি একেরপর এক তখন সহকর্মীদের কেউ কেউ সাবধান করে দিয়েছেন। অধিকাংশক্ষেত্রে আমি বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু প্রথম আলোর খুলনা অফিসের শেখ আবু হাসান, শামসুজ্জামান শাহীন বহুবার আমার রিপোর্টের কারণে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন।
বাগেরহাটের এম এ এইচ সেলিমের সঙ্গে পুরনো জানাশোনা। মতি ভাইয়ের সঙ্গেও বিএনপির এই নেতার ভাল যোগাযোগ ছিল তখন। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে যখন বাগেরহাটে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হলো তখন প্রথম আলোতে সিরিজ প্রতিবেদন লিখেছি। তুলে ধরেছি কিভাবে এম এ এইচ সেলিমের লোকজন বাগেরহাটে সন্ত্রাস করছে। চাঁদাবাজি,টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে আছে। তারেক রহমানের ঘনিষ্টজন সেলিম পরে নাকি আক্ষেপ করে বলেছেন, তার মন্ত্রী হওয়া বাধা ছিল। প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনের কারণেই না-কি তিনি মন্ত্রী হতে পারেন নি।
২০০৪ সালে যখন রাজশাহী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাংলা ভাই তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার পৈশাচিক কর্মকান্ডের আদ্যপান্ত তুলে এনেছি প্রথম আলোতে। সঙ্গী প্রথম আলোর তখনকার রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার সদাহাস্য আনু মোস্তফা। নওগার আত্রাই,আত্রাই রাণীনগরে স্কুলে,মাদ্রসায় ক্যাম্প বসিয়ে বাংলা ভাই বাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী যেমন খুঁজে বের করেছি। তেমনি বাংলা ভাইয়ের ক্যাডাররা যখন পুলিশ ও প্রশাসনের সামনে গোটা রাজশাহী দাপিয়ে বেড়াল তখন মিছিলের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে খবরের সন্ধান করেছি। ওই সময় রিপোর্টার্স ইউনিটির সেরা রিপোর্টের পুরষ্কার পেয়েছিলাম।
যশোরে জনকন্ঠের সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যাকান্ডের কাহিনী লিখতে গিয়ে অসংখ্যবার গডফাদারের হুমকি-ধামকির মধ্যে পড়েছি।
টঙ্গীর জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ সাংসদ আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার পরে যখন গাজীপুরের ছায়াবিথীতে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দীন আল মামুনের বিলাসবহুল অট্টালিকার কাহিনী লিখি তখন বিভিন্ন মহল থেকে নানা কথা শুনতে হয়েছিল। আর গিয়াসউদ্দীন আল মামুনের ব্যবসা-বানিজ্যের বৃত্তান্ত লেখার পরে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, দোলন ভাই কত লোকে আমার সঙ্গে খাতির করতে মুখিয়ে থাকে আর আপনি উল্টোটা করলেন।
২০০৫ সালের ঘটনা। প্রথম আলোতে রাজনৈতিক রিপোর্ট করি বেশি। বিএনপির কোন কোন সাংসদের মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা এমন একটি তালিকা ছাপা হয় প্রথম আলোতে। বগুড়ার জি এম সিরাজের নামও ছিল। ফোন করেন আমাকে। সরাসরি আক্রমণ। বলেন,‘৬২ সাল থেকে ঢাকায় থাকি। দেখে নেবো। আমিও উত্তেজিত ছিলাম। কারণে,অকারণে। বলেছিলাম,আপনার মতো এমপিকে পাত্তা দিয়ে ঢাকায় থাকবো কেন ভাবলেন? সত্যি সত্যি জি এম সিরাজ ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাননি। দেখা হয়েছে পরে। জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বললেন, ভাই আপনিই জিতলেন। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ। (জিএম সিরাজ সংস্কারপন্থী হিসেবে একেবারে ফ্রন্টলাইনার ছিলেন)।
২০০২ এ বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব ও তৎকালীন চিফহুইপ খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পুত্রদের অনিয়ম, চাঁদাবাজির মুখোশ খুলে দিয়ে রীতিমতো জীবন বিপন্ন হওয়ার অবস্থা। দেলোয়ার পুত্র পবনের চাঁদাবাজিতে মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা মহাদেবপুর বাজরের ব্যবসায়ীরা রীতিমতো অতিষ্ঠ। প্রথম আলোতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হল। ব্যস!! আর যায় কোথায়। রাত ১ টা নাগাদ ফোন পবনের ভাই ডাবলুর। ফোন করেই বললেন, তোর দিন শেষ। গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক বন্ধুর পরামর্শে তেজগাঁও থানায় জিডিও করেছিলাম। পরে ক্লিনহার্ট অপারেশনে পবনকে গ্রেফতার করেছিল যৌথ বাহিনী। পরে গাড়ী চুরির ঘটনায়ও পবন একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিএনপির ক্ষমতার একেবারে শেষ সময়ের ঘটনা। হঠাৎ অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে লেগে লেগেন সাংসদ ইলিয়াস আলী। তুমুল ঝগড়া। এতটাই যে ক্ষেপে গিয়ে সাইফুর রহমান পদত্যাগ করেন করেন অবস্থা। পত্রিকা, টিভিতে ইলিয়াস আলীর বক্তব্য অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। মুখে কলুপ এঁটে বসে আছেন সাইফুর রহমান। তিনি পদত্যাগ করলে ওসমান ফারুক অর্থমন্ত্রী এমন খবরও আসছে। মিডিয়া সাইফুর রহমানের বক্তব্য নিতে মরিয়া। কিন্তু প্রবীণ নেতা কথা বলবেন না। প্রথম আলোতে এনিয়ে অনেক আলোচনা তখন। সম্পাদক মতিউর রহমান এক পর্যায়ে বললেন, ওনাকে পাওয়া সম্ভব নয়। আর প্রথম আলো শুনলে তো নয়ই। আমাকে (মতিউর রহমান) এক বছর ধরে অ্যাপয়নমেন্ট দিচ্ছেন না। আর তুমি (আমি) কি করে পাবে? আমি কনফিডেন্ট। মতি ভাইকে পড়ন্ত বিকেলে বললাম সাইফুর রহমানকে ধরা আমার জন্য কোন ব্যাপারই না। লিড লিখে দিয়ে গেলাম বার্তা সম্পাদক সানাউল্লাহ লাবলু ভাইকে। সাইফুর রহমান দায়িত্ব ছাড়লে ওসমান ফারুক অর্থমন্ত্রী। বিকেলে গেলাম সাইফুর রহমানের বাসায়,গুলশানে। সোজা তার বেডরুমে। বারান্দায় বসা সাইফুর রহমান,স্যুপ হাতে। সালাম দিয়ে বললাম, আপনাকে নিয়ে হাজার কথা বাইরে। আপনি কিছু বলছেন না যে! এতে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। মনে হল কথা পছন্দ হয়েছে তার। বললেন, কি বলবো বল। ওই ছোকড়াকে (ইলিয়াস আলী) নিয়ে কিছু বলা সাজে আমার!! এরপর অনর্গল বলে চললেন। সব কথা। এক ঘন্টার ওপরে ইন্টারভিউ চললো। মুঠোফোনে মতি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলালাম। অফিসে ফিরলাম রাত সাড়ে দশটায়। সোজা সম্পাদকের রুমে। মাইগ্রেনের রুগি আমি। মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজ পাগল মতি ভাই আমাকে নিয়ে এলেন নিউজ রুমে। বার্তা সম্পাদককে বললেন, সাইফুর রহমানের ইন্টারভিউ লিড স্টোরি। আর যাই কোথায়! লেখা শুরু করলাম। লিখছি, আর বার্তা সম্পাদক প্রিন্ট করে ১ পাতা করে নিয়ে যাচ্ছেন। পৌনে এক ঘন্টারও কম সময়ে লেখা শেষ। অন্তত দুই হাজার শব্দ। পরদিন প্রথম আলোয় ছাপা হলো সাইফুর রহমানের ইন্টারভিউ,‘ম্যাডামকে বলেছি অবসর নিতে চাই’।
লেখা শেষে মতি ভাই রুমে ডেকেছিলেন। হাতে ধরিয়ে দিলেন প্যাকেট। খুলে দেখি ২০ হাজার টাকা। টাকা কেন? উত্তরে মতি ভাই বলেছিলেন, তোমার পুরষ্কার। সম্পাদকের এই পুরস্কারে দারুণ উৎসাহ পেয়েছিলাম। (সাইফুর রহমানকে কিভাবে পেয়েছিলাম সেটা রহস্যই থাক)
২০০৯ সালের ঘটনা। তখনও আমি প্রথম আলোতে। মতি ভাই বললেন, বহুদিন যশোর অঞ্চল থেকে ভালো রিপোর্ট হয়না। আরিফ গেলে নিশ্চয়ই কিছু খুঁজে বের করতে পারবে। গেলাম। অনেক অনিয়ম,স্বজনপ্রীতির খবর পেলাম। আর খুঁজে পেলাম যশোরের নতুন গডফাদার শাহীন চাকলাদারকে। আদ্যপান্ত লিখলাম,ছাপা হলো প্রথম আলোর প্রথম পাতায়। ‘যশোরে শাহীন চাকলাদারকে নিয়ে শঙ্কা’ এই শিরোনামে। প্রথম আলোর প্রতি যশোরের মানুষের আস্থা বাড়ল,সবাই জানল আসল কাহিনী। ক্ষেপলেন শাহীন চাকলাদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান। ঝাড়ু মিছিল হলো প্রথম আলোর বিরুদ্ধে। হুমকি দেওয়া হলো আরিফুর রহমানকে।
২০১০ সালের মার্চ মাসে প্রথম আলো ছেড়ে উপসম্পাদক হিসেবে যোগ দিলাম বসুন্ধরা গ্রুপের বাংলাদেশ প্রতিদিনে। কাগজ বের হওয়ার প্রথম ছয় মাসে পৃথক তিনটি প্রতিবেদনে লিখেছিলাম এই সরকারের আমলে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু পুরোপুরি অনিশ্চিত। কেন বিশ্বব্যাংক অসন্তুষ্ট, কেন জাপান সরকার টাকা দেবেনা এসব বিস্তারিত ছিল প্রতিবেদনে। মন খারাপ করেছিলেন তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্র্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। আমাকে নিয়ে নালিশ দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি বহুদূর গড়িয়েছিল। সরকারের শীর্ষস্থানীয় এক নীতিনির্ধারকের হস্তক্ষেপে ওই যাত্রায় নিস্তার পেয়েছিলাম।
যা লিখেছিলাম পদ্মা সেতু নিয়ে তাই যখন ঠিক হতে যাচ্ছে একথা হুমকিদাতাদের মনে করিয়ে দিলে তারা লজ্জা পান।
ছকে বাঁধা জীবনে বিশ্বাস করিনি বলেই জনপ্রিয় কাগজ বাংলাদেশ প্রতিদিন ছাড়তে দ্বিধা করিনি। যখন ছাড়ি তখন শাজাহান সরদার সম্পাদক নঈম নিজাম ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। রাতদিন খেটেছি। ওই কাগজের জন্য কি করেছি তারা জানেন,সহকর্মীরা সবাই জানেন। বসুন্ধরা গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে কৃতজ্ঞ তারা এখনো ভালোবাসেন, স্নেহ করেন।
বন্ধুবর খালেদ মুহীউদ্দিনকে সহযোগিতা করার জন্য কিছুদিন আমাদের অর্থনীতির উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি। দেশের ধনাঢ্য কয়েকজন ব্যবসায়ীর আগ্রহের কারণে কয়েকমাস পরিশ্রম করেছি মিডিয়ায় একটি নতুন উদ্যোগ যাতে তারা নিতে পারেন। রাজনৈতিক কারণে তারা যখন পিছিয়ে যান তখন রাজনীতিক এক বড় ভাইযের আগ্রহে যোগ দেই বাংলাভিশন টেলিভিশনে। নিউজ এডিটর হিসেবে। সত্যি বলতে কি এই কাজে আনন্দ পাচ্ছিলাম না।
তাই ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর আলী ভাই যখন আমাদের সময়ে যোগ দিতে বললেন তখন দ্বিধা করিনি। কিন্তু নাঈম ভাই আর নুর আলী ভাইদের মধ্যে মামলার কারণে যখন আমাদের সময় বন্ধ হলো তখন অনেকে ঘাবড়ালেও আমি ঘাবড়ায়নি। জীবন তো এমনই। জীবন চলার পথে কত বাক। আমাদের সময়ের কর্মী ধরে রাখতে ২৪ ঘন্টার নোটিশে ঢাকা টাইমস২৪.কম শুরু করি নুর আলী ভাইয়ের পরামর্শে। কিন্তু মামলায় আমাদের সময় নুর আলী ভাইরা পেয়ে গেলে ঢাকা টাইমস এর প্রতি কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহ তৈরি হয়।
কিন্তু ঢাকা টাইমস২৪.কম যে আমারই সন্তান। একে আমি ছাড়ি কি করে!!! তাইতো আমাদের সময় ছেড়ে শুরু করলাম নতুন যুদ্ধ। ঢাকা টাইমস২৪.কম যাতে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেড়ে ওঠে, দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিচয় দেয় সেজন্য সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাই।
লেখক: সম্পাদক, ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম ও সাপ্তাহিক এই সময়
মন্তব্য করুন