বন্দরে শতবর্ষী গাছ নিধন চলছে জানে না কেউ

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ মে ২০১৭, ০৮:২০
অ- অ+

হাত-পা কেটে, পেটে ছুরি চালিয়ে বা গলা কেটে মানুষ খুন করার মতোই কাটা হচ্ছে শতবর্ষী গাছগুলো। কিন্তু এ নিয়ে কারও কোনো বিকার নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে তারা এ ব্যাপারে নাকি জানেই না। আর যারা জানে, তারা বলছে, সরীসৃপের ভয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে এসব গাছ।

চট্টগ্রাম বন্দরের মনোহরখালী আবাসিক এলাকায় এসব গাছ নিধন নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা।

যেখানে গাছ কাটা হচ্ছে সেখানকার আবাসিক এলাকায় থাকেন চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমি ও ভূ-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ভূমি বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার জিল্লুর রহমান। এমনকি তার বাসার পাশেও কাটা হচ্ছে একটি গাছ। এ ব্যাপারে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায় তার মুঠোফোন।

রবিবার (১৪ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল পর্যন্ত চারটি গাছের ডালপালা এমনকি গোড়া কেটে পুরো গাছ মাটিতে ফেলে খণ্ড খণ্ড করা হচ্ছে। আরও কয়েকটি গাছ কাটার প্রস্তুতি চলছে। মোট কয়টি গাছ কাটা হবে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান গাছ কাটার শ্রমিকরা।

আবদুল মাবুদ নামের একজন শ্রমিক জানান, ৪০-৪২ জন শ্রমিক গাছ কাটার কাজ করছেন। তারা কয়েক দলে ভাগ হয়ে একসঙ্গে তিন-চারটি গাছ কাটছেন। যখন যে গাছ কাটার জন্য বলা হয়, তারা সেটিই কাটেন।

আবদুল মাবুদ জানান, গাছগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই রেইনট্রি। প্রতিটি গাছের বয়স শত বছরের বেশি। গাছগুলো অনেক বড়। তাই কাটতেও বেশ সময় লাগছে। এসব গাছের এক একটির দাম ৫ লাখ টাকার বেশি হতে পারে বলে জানান তিনি।

গাছগুলো কাটার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম দাবি করেন, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না তিনি। তবে গাছ কাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কঠোর নীতিমালা রয়েছে। তাছাড়া পরিবেশের কথা ভেবে গাছ কাটার আগে ১০ বার ভেবে দেখা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

মো. জাফর আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ভূ-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ভূমি বিভাগ। কোনো গাছ কাটতে হলে অডিট বিভাগের সঙ্গে বসে যৌক্তিকতা নিরূপণ ও মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে মুক্ত নিলামে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু অডিট বিভাগের কেউ গাছ কাটার বিষয়ে জানেন না বলে জানান তিনি।

তবে বন্দরের চিফ অডিট অফিসার মো. রফিকুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রকৌশল বিভাগ তাকে জানিয়েছে নিয়ম মেনেই গাছ কাটা হচ্ছে।

একই কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল) কমোডোর জুলিফিকার আজিজ। তবে কী কারণে গাছ কাটা হচ্ছে সে ব্যাপারে কিছু না বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন, পরিবেশের ভারসাম্যের তোয়াক্কা না করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মনোহরখালি আবাসিক এলাকার শতবর্ষী এসব গাছ কেটে ফেলছে প্রকৌশল বিভাগ। রোববার পর্যন্ত মোট চারটি গাছ কাটা হয়েছে।

প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরীসৃপজাতীয় প্রাণী থাকতে পারে, ঝড়-ঝাপটায় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, এমন কারণ দেখিয়ে শতবর্ষী এসব গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে একই এলাকায় কেটে ফেলা হয় আরও দুটি গাছ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোহরখালি আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর বাংলোর দুটি এবং ৫ নম্বর বাংলোর দুটি শতবর্ষী রেইনট্রি কেটে ফেলার জন্য গোপন নিলাম ডাকা হয় গত ২৩ মার্চ। দর উঠেছে ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ভ্যাটসহ তা হবে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বন্দরের হিসাব বিভাগের এক কর্মচারী টেন্ডারের নামে পানির দরে তিনটি বিশাল গাছ কিনে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/মোআ)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিজয় দিবসে ঢাকা মহানগর ছাড়া সারা দেশে বিএনপির র‌্যালি
১৬ বছরের দুঃশাসন শেষ হতে ১৬ দিন লাগেনি: অসীম
মঈন খানের বাসভবনে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মধ্যাহ্ন ভোজ
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর করা হবে: তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা