ব্যাংকে সুদিন ফেরার ইঙ্গিত

ইউনুছ আলী আলাল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ মে ২০১৭, ১০:১০ | প্রকাশিত : ১৫ মে ২০১৭, ০৯:০৬

বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ ১৭) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। এতে দেখা যাচ্ছে, ফুলে ফেঁপে উঠছে বেশিরভাগ ব্যাংকের তহবিল। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এই প্রান্তিকে দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি ভাল করেছে, এমন ব্যাংকের সংখ্যাও নেহায়েত কম না।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ ঘোষণার আগেও বছরে তিনবার লাভ-লোকসানের হিসাব প্রকাশ করতে হয়। এটা তিন মাস অন্তরই করতে হয়।

পুঁজিবাজারের জন্য ব্যাংক খুব গুরুত্বপূর্ণ খাত। ৩০টি ব্যাংকের বিশাল পরিশোধিত মূলধন থাকায় বাজারের সূচক উঠানামায় ব্যাংকের ভূমিকাই থাকে প্রধান। গত ডিসেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার পেছনেও ব্যাংকের লাভ বৃদ্ধিই কারণ বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। আর চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকের মত পরের প্রান্তিকগুলোতে ব্যাংক তার লাভের ধারাবাহিকতা চালু রাখতে পারলে চলতি বছর পুঁজিবাজার আরও ভাল হবে বলে মনে করছেন তারা।

এখন পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ হয়েছে যে ২৮টি ব্যাংকের, তার মধ্যে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি ভাল করেছে ১৮টি ব্যাংক। এর মধ্যে গত বারের চেয়ে ১০০ শতাংশের বেশি আয় বেড়েছে চারটি ব্যাংকের। গত বারের চেয়ে লাভ কম করেও লাভে আছে আটটি ব্যাংক। আর লোকসানে দুটি ব্যাংক।

যেসব ব্যাংকের লাভ বেড়েছে

যমুনা ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ৩৯ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ১০ পয়সা। এ হিসাবে ইপিএস বেড়েছে ২৯০ শতাংশ বা ২৯ পয়সা।

ওয়ান ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৬২ পয়সা। এ হিসাবে ইপিএস বেড়েছে ১১৭.৭৪ শতাংশ বা ৭৩ পয়সা।

পূবালী ব্যাংক: বছরের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের তিন মাসে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ৭৬ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৩৭ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় বেড়েছে শতভাগেরও বেশি, সব মিলিয়ে ১০৫ শতাংশ।

প্রিমিয়ার ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে এই ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪৩ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে এটি ছিল ২১ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি লাভ বেড়েছে এই ব্যাংকের।

ব্যাংক এশিয়া: প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪০ পয়সা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস ছিল ২১ পয়সা। আলোচিত সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৯০ শতাংশ।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের প্রথম তিন মাসে আয় হয়েছে ১ টাকা ৮ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫৯ পয়সা। এ হিসেবে ইপিএস বেড়েছে ৮৩.০৫ শতাংশ বা ৪৯ পয়সা।

রূপালী ব্যাংক: এই ব্যাংকের প্রথম প্রান্তিকে সমন্বিত আয় ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছে ০.৪২ টাকা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ০.২৫ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ৬৮ শতাংশ আয় বেড়েছে রূপালীর ব্যাংকের।

ব্র্যাক ব্যাংক: ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি ১৭-মার্চ ১৭) ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ১.৬২ টাকা। গত বছর প্রথম প্রান্তিকে এটি ০.৯৮ টাকা।

সাউথ ইস্ট ব্যাংক: বছরের প্রথম প্রান্তিতে মুনাফায় উল্লম্ফন ঘটেছে এই ব্যাংকটিরও। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন মাসে ব্যাংকটি আয় করেছে ৯৬ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ৫৩ শতাংশ আয় বেড়েছে এই ব্যাংকটিতে।

প্রাইম ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে এই ব্যাংকের সমন্বিত মুনাফা ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৭৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ৫১ পয়সা।

ঢাকা ব্যাংক: জানুয়ারি থেকে মার্চ কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ৬০ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৪৩ পয়সা। এ হিসাবে ইপিএস বেড়েছে ১৭ পয়সা বা ৩৯.৫৩ শতাংশ।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক: গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এই ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের প্রথম তিন মাসে শাহজালালের শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৫১ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৩৮ পয়সা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে এই ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় ২৭.৫০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছর তিন মাসে ইপিএস হয়েছে ০.৫১ টাকা। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ০.৪০ টাকা।

ইসলামী ব্যাংক: বছরের প্রথম তিন মাসে এই ব্যাংকের সমন্বিত আয় হয়েছে ৬২ পয়সা। আগের বছর এটি ছিল ৫০ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় এই ব্যাংকের আয় বেড়েছে ২৪ শতাংশ।

এনসিসি ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ৩৮ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৩৪ পয়সা। এ হিসেকে ইপিএস বেড়েছে ১১. ৭৬ শতাংশ।

ইস্টার্ন ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের তিন মাসে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় ১ টাকা ৩৪ পয়সা। যা গত বছর একই সময়ে এটি ছিল ১ টাকা ২৩ পয়সা। অর্থাৎ এই ব্যাংকের আয় বেড়েছে ৮.৯ শতাংশ।

আইএফআইসি ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫৬ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৫২ পয়সা। এ হিসাবে ইপিএস বেড়েছে দশমিক চার পয়সা বা ৭.৭ শতাংশ।

ট্রাস্ট ব্যাংক: বছরের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এই ব্যাংকের আয় বেড়েছে চার শতাংশ। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে এক টাকা ১০ পয়সা। গত বছর যা ছিল এক টাকা ছয় পয়সা।

কমেছে যেসব ব্যাংকের আয়

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক: চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এই ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা কমেছে ৫ শতাংশ। চলতি বছর সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ০.২০ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিল ০.২১ টাকা।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক: গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এই ব্যাংকটির আয়ও সামান্য কমেছে। গত বছর প্রথম প্রান্তিকে আয় ছিল ৭৩ পয়সা। এবার ৯.৫৮ শতাংশ কমে একই সময়ে তা হয়েছে ৬৬ পয়সা।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক: এই ব্যাংকের চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি সমন্বিত মুনাফা কমেছে ১২ শতাংশ। চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২.৯১ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৩.২৯ টাকা। এ হিসাবে ইপিএস কমেছে ০.৩৮ টাকা।

সিটি ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা কমেছে ১৫ শতাংশ। গত বছর প্রথম প্রান্তিকে এই ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৭৯ পয়সা। সেটি এবার কমে হয়েছে ৫৬ পয়সা।

আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৭১ পয়সা, যা গত বছর ছিল ৯১ পয়সা। অর্থাৎ চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় কমেছে ২০ পয়সা বা ২৮ শতাংশ।

এবি ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ৩৫ পয়সা, যা গত বছর ছিল ৯৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এবার অর্ধেকেরও কম আয় করেছে এবি ব্যাংক।

এসআইবিএল: এই ব্যাংকটির প্রথম প্রান্তিকে আয় কমেছে ৫০ শতাংশ। গত বছর প্রথম তিন মাসে আয় ছিল ২০ পয়সা। সেটি কমে এবার দাঁড়িয়েছে ১০ পয়সায়।

ইউসিবি: বেসরকারি খাতের আরেক ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল লাভে থাকলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ৭৬ শতাংশ। চলতি বছর প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ৪২ পয়সা।

লোকসানে দুই ব্যাংক

এক্সিম ব্যাংক: বেশিরভাগ ব্যাংক যখন গত বছরের চেয়ে বেশি লাভ করেছে, চলতি বছর সেখান থেকে ব্যতিক্রম এক্সিম ব্যাংক। প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.৫৩ টাকা। যা গত বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.০৬ টাকা।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক: দীর্ঘ দিন ধরে লোকসানে থাকা ব্যাংকটি এখনও এই বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ১১ পয়সা।

যেসব ব্যাংকের প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ হয়নি এখনও

প্রথম প্রান্তিক প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা ব্যাংকের সংখ্যা দুই টি। এগুলোর আজ সোমবার বোর্ড মিটিং করে হিসাব প্রকাশ করার কথা আছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এই সংবাদ দেয়া আছে। ব্যাংক দুটি হল উত্তরা এবং এনবিএল।

ঢাকাটাইমস/১৫মে/ইউএএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :