১৪ বছরেও সম্মেলন হয়নি আলফাডাঙ্গা ছাত্রলীগের

প্রকাশ | ১৫ মে ২০১৭, ১৪:৩৪

মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর)

১৪ বছরেও গঠন হয়নি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটি। গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এ ছাত্র সংগঠনটি। ১৪ বছরে সম্মেলন না হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগে দেখা দিয়েছে এক ধরনের স্থবিরতা।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিবছর সম্মেলনের কথা থাকলেও বছরের পর বছর সম্মেলনের কোন খবর নেই। এতে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সম্মেলন ও নতুন নেতৃত্ব না আসায় তৃনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে ছাত্রলীগ সভাপতি মো. লিয়াকত শিকদার, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু ও ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির, সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মুখার্জি আলফাডাঙ্গায় এসে সম্মেলন করেছিলেন। তখন মিজানুর রহমান মিজানকে সভাপতি ও তৈয়াবুর রহমান জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা কমিটি করে দেন।

কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন দেয়নি জেলা ছাত্রলীগ।

ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কমিটির বয়স হচ্ছে দেড় বছর। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে গত মাসে। আমাদের আগের মেয়াদে যারা ছিল, তারা কেন সম্মেলন দেয়নি- তা আমরা জানি না। তবে আমরা অতি তাড়াতাড়িই শুধু আলফাডাঙ্গা না- সব উপজেলা, থানাতেই সম্মেলন দেয়ার ব্যবস্থা করব।’

সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জীবন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে গত মাসে। আমরা শিগগির সকল উপজেলা, থানা কমিটি করে ফেলব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের বেশিরভাগ নেতাই অনেক আগে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন, অনেকে বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবী। জীবিকার তাগিদে অনেকে থাকেন প্রবাসেও।

তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের উপর তারা বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে এক প্রকার কর্মী শূন্য হয়ে পড়েছে বর্তমান কমিটির নেতারা।

নতুন কমিটির পদ প্রত্যাশীরা আশা প্রকাশ করেন, ‘নতুন কমিটি হলে সংগঠনটি প্রাণ ফিরে পাবে। ঝিমিয়ে পড়া উপজেলা ছাত্রলীগ হয়ে উঠবে উজ্জীবিত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘বর্তমান কমিটির ৭৩ জনের মধ্যে ৫ থেকে ৬ জন সক্রিয় থাকলেও বাকিরা নিষ্ক্রিয়। বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের অনেকেই রয়েছেন অন্য সংগঠনে। সভাপতি অনেক আগেই ছাত্রত্ব হারিয়েছেন, তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বর্তমানে তিনি দুই সন্তানের জনক। সহ-সভাপতি মো. এনায়েত হোসেন বর্তমানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক তৈয়াবুর রহমান জুয়েল বর্তমানে সরকারি চাকরি করায় ছয় বছর পর প্রবাস থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের হাল ধরেছেন এস এম তৌকির আহমেদ ডালিম। সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বর্তমানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক পদে রয়েছেন।’

তৃণমূল ছাত্রলীগের নেতারা দুঃখ করে বলেন, ‘নতুন কমিটি না হওয়ায় আমরা যারা পদ প্রত্যাশী আমাদেরও ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পথে।’

কমিটি না হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে বলেও মনে করেন তারা।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতারাও মনে করেন, ‘নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি করা অত্যন্ত জরুরি।’

উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌকির আহমেদ ডালিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি সম্মেলন হওয়ার পক্ষে। আমি যদি দেশে থাকতাম, তাহলে অনেক আগেই সম্মেলনের ব্যবস্থা করতাম। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় সম্মেলন করতে পারিনি। আমি চাই- এ কমিটি ভেঙে  নতুনদের জায়গা করে দিতে। কিন্তু একার পক্ষে তো সব করা সম্ভব না, তাই হচ্ছে না।’ 

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে কয়েকবার কল গেলেও তা তিনি রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/প্রতিনিধি/এলএ)