ফরিদপুরে চলছে সরকারি জমি দখল, ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্ধ থাকায় নীরব প্রশাসন

সাজ্জাদ বাবু, ফরিদপুর
| আপডেট : ১৬ মে ২০১৭, ১৭:২০ | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০১৭, ১৬:১৯

ফরিদপুরের পদ্মা-কুমার নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে মহোৎসব চলছে। এতে নদী তীরবর্তী বসতি এবং হাজার হাজার একর ফসলি জমি হুমকিতে পড়েছে। অন্যদিকে সরকারও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সম্প্রতি পদ্মা-কুমার-ভূপেনশ্বর নদসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বালু দিয়ে নিচু ও জলাভূমি ভরাটের ব্যবসা চলছে। রাতের আধারে নদীর পাড়ে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে ট্রলারে করে বিভিন্ন ঘাটে স্তূপ করা হয়। স্তূপকৃত বালু ট্রাকে করে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। এভাবে প্রতিদিন হাজার-হাজার ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রায় সারাবছরই অবৈধভাবে এ চক্রটির বালু উত্তোলন করলেও সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ফরিদপুরের প্রকপ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

কিন্তু গত ১১ মে হাইকোর্টের এক আদেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্ধের নির্দেশনার পর থেকেই আবারো অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা উত্তোলনকৃত বালু দিয়ে দূরবর্তী এলাকার নিচু ও জলাভূমি চুক্তিভিত্তিক ভরাট করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করছে। কিছুদিন ধরে চক্রটি প্রশাসনের কড়া দৃষ্টিতে ঘাপটি মেরে থাকলেও বতর্মানে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুর সদরের হাজীগঞ্জ, নর্থচ্যানেল, ডিগ্রিরচর ও কানাইপুরের তেতুলতলায় পদ্মা-কুমার নদীর পাড়ে ট্রাকের মাধ্যমে নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। জেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা ভরাটের চাহিদা মিটিয়ে পাশের বিভিন্ন এলাকায় বালু পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে বালু সরবরাহ করা হয়।

রাতদিন সমানভাবে বালু তোলার কারণে অসাধু স্বার্থান্বেষী চক্রের পকেট ভারি হলেও নদী-তীরবর্তী কৃষকদের ফসলি জমি, নদী শাসন এবং নদীপাড়ের বাসিন্দারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শেখ দুলাল জানান, প্রায় প্রতি বছর নদীর পানি কমার পরপরই এ চক্রটির মদদে বিভিন্ন সময়ে নদীর বুক থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। কখনো মোটা পাইপ স্থাপন করে ড্রেজারের মাধ্যমে পদ্মা-কুমার নদী থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরেও বালু সরবরাহ করা হয়ে থাকে। লাখ লাখ টাকা চুক্তিতে পুকুর, নিচু এলাকা এবং জলাভূমি ভরাট করার কাজে এ বালু ব্যবহার হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদ্মার চরের কয়েকজন জানান, নদী ভাঙনের পর স্থায়ী চর জেগে ওঠায় তারা আবার নিজের জমিতে নতুন করে বসতি স্থাপন করছেন। এভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলে নদীর পাড় ভেঙে তাদের হুমকির মুখে পড়তে হবে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার আবাদি জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

হাজিগঞ্জ এলাকার সালাম শেখ বলেন, দীপু নামে এক বালু ব্যবসায়ী কিছুদিন বালু তোলা বন্ধ করেছিল। কিন্তু কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকটা বড় মেশিন লাগিয়ে রাত-দিন বালু তুলছেন। নিজের বাড়ি পদ্মাপাড়ে হওয়ায় তিনি শঙ্কিত। মেশিনগুলো তার বাড়ির কাছে, তাই যেকোন সময় তার বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় দিন পার করছেন।

তিনি বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোন ফল পাচ্ছি না।

অন্যদিকে, ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার উদ্যোগে সম্প্রতি সরকারি জমি ও ফুটপাতে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে শহরের বিভিন্ন স্থানে সেই সব স্থানে রাতারাতি স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে।

সরজেমিনে দেখা গেছে, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকার পৌর অডিটোরিয়ামের উত্তর পাশে, জেলখানার দেয়াল সংলগ্ন এলাকায়, টেপাখোলা, মেডিকেল কলেজের পাশে, পিটিআইর পাশেসহ বিভিন্ন যায়গায় রাতারাতি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, শহরে বখাটেদের উপদ্রপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন যায়গা থেকে ইভটিজিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সরকারি সারদা সুন্দরী কলেজের ছাত্রীর এক মা ঢাকাটাইমসকে বলে, রবিবার কলেজ থেকে আমার মেয়ে রিকশাযোগে বাসায় ফেরার সময় ঝিলটুলি ভূমি অফিসের সামনে থেকে এক বখাটে মোটরসাইকেলে পথ রোধ করে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে তার পেছনে ওঠার জন্য জোড়াজুড়ি করে। পরে কয়েকজন পথিক ও রিকশাচালকের সহযোগিতায় সে মুক্ত হয়। বিষয়টি আমি প্রশাসনের গচরে আনি, কিন্তু কোন ফল পাইনি।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া এসব বিষয় স্বীকার করে জানান, আমাদের কাছে কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ স্থাপনা, অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলনের, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানার জমি দখল, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজালসহ নানাধরনের খবর আসছে। সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্ধের নির্দেশনার পর আপাতত আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারছি না। পরবর্তী নির্দেশনা পেলে আমরা তখন ব্যবস্থা নিতে পারব।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/নিজস্ব প্রতিবেদক/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :