শেখ হাসিনার ফিরে আসার দিন

প্রকাশ | ১৭ মে ২০১৭, ১৬:৩৫

অঞ্জন রায়

১৯৮১ সালের ১৭ মে বিকাল সাড়ে চারটায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে এখন পর্যন্ত তার পথে পথে ফুল নয়- গ্রেনেড ছড়ানো। চারদিকে ঘাতকের ষড়যন্ত্র। কখনো ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, কখনো বোমা পুঁতে রাখা, কখনো গ্রেপ্তার। এর মধ্য দিয়েই কেটে গেছে এতোগুলো বছর।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরের পাঁচ বছর ৯ মাস নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা। পাঁচটি বছর তার ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার জন্য ছিল ভয়ঙ্কর এক সময়। বাবা-মা ভাইসহ সবার হত্যার খবর শুনেছেন। একবার সেই স্বজনের কবরটাও দেখতে পারছেন না তারা- উল্টো দুই বোনকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলেছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার সময়ে স্বামীর সঙ্গে দেশের বাইরে থাকায় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার প্রাণ রক্ষা পায়।

ওই দিন বিকাল সাড়ে চারটায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে শেখ হাসিনা দিল্লী থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে পৌঁছান। প্রকৃতি তখন গম্ভীর- শুরু হলো অঝোর বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে হাসিনার চোখের জল মিশছে। তিনি বিমানবন্দর থেকে এগোলেন- কয়েক লাখ মানুষ বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন বঙ্গবন্ধুর সন্তানের জন্য। তিনি এগোলেন মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দিকে। বৃষ্টির পরোয়া না করে সেখানে সমাবেত মানুষের মিলিত স্লোগান- আমরা সবাই মুজিব হব-মুজিব হত্যার বদলা নেব’, ‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সঙ্গে’, ‘বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আদর্শের মৃত্যু নাই, হত্যাকারীর রেহাই নাই’, ‘মুজিব হত্যার পরিণাম, বাংলা হবে ভিয়েতনাম’।

মঞ্চে উঠলেন শেখ হাসিনা। তিনি কাঁদছেন- কাঁদছে সমাবেশ। তিনি তার সেদিনের বক্তব্যে বলেছিলেন ‘আজকের জনসভায় লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু, মা, ভাই, আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। স্বামী সংসার ছেলে রেখে আপনাদের কাছে এসেছি। বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি এসেছি। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।'

শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই। স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি জাতি রক্ত দিয়েছে। কিন্তু আজ স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। ওদের রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করি। আপনাদের ভালোবাসার আশা নিয়ে আমি আগামী দিনের সংগ্রাম শুরু করতে চাই। ’

৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে দলের নেতারা নেতৃত্ব অর্পণ করেন। সম্মেলনে দলীয় সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার নাম ঘোষণায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা উল্লাসে করতালি দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।

এদিকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরছেন- এমন কথা শোনার পরই সেই সময়ের তৈরি করা হয়েছিলো- ‘শেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি’। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের আবেগ আর প্রতিরোধে সেই কমিটি হারিয়ে গিয়েছিল।

১৮ মে পরবর্তী সময়ে বারবার ঘাতকের ষড়যন্ত্র রুখে বেঁচে আছেন শেখ হাসিনা। ঘাতকেরা তাকে হত্যার জন্য ২০ বারেরও বেশি চেষ্টা করেও সফল হয়নি। হয়নি বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে নতুন এক মাত্রা নিয়ে, শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশ নয়- বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অনন্য উচ্চতায়।

অঞ্জন রায়

ডেপুটি হেড, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, একুশে টেলিভিশন।