আলফাডাঙ্গায় ঢাকাটাইমস সাংবাদিকদের ওপর হামলায় প্রতিবাদের ঝড়, শাস্তি দাবি
ঢাকাটাইমস২৪ ডটকমের আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি মুজাহিদুল ইসলাম নাঈমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।তারা বলেছেন, একজন পেশাদার সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন তারা।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম জালালউদ্দিন সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘ঢাকাটাইমস সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমি ঘটনাটি আপনার মাধ্যমে জানলাম। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। একজন পেশাদার সাংবাদিকের উপর হামলা হতে পারে না।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন এই হামলাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব ঘটনা কেউ সমর্থন করতে পারে না। আমিও করি না। এই ঘটনায় দোষী ব্যক্তির শাস্তি হউক। এটা আমি চাই।’
তবে এলাকায় এসব ঘটনা আগেও ঘটেছে উল্লেখ করে আকরাম হোসেন বলেন, ‘আগে আমরা এই ধরনের উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতাম। কিন্তু আমরা এখন আর করছি না । কারণ তারা অর্থের লোভে বিভিন্ন জায়গায় গাঁটছড়া বাঁধে। আর আমাদের কথা শোনে না।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বাশারকে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ আমিনুর রহমান জানান, ‘তন্ময় নামে এক সন্ত্রাসী নাঈমের উপর হামলা করেছে। তন্ময় একজন সন্ত্রাসী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তিনি এর আগে নিজের চাচা ও বাবাকে মেরেছে। মূলত সে নেশাখোর।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের প্রতিবাদ সভা হবে। আমরা মানববন্ধনও করবো।’
আলফাডাঙ্গা কৃষকলীগের সভাপতি সোলায়মান আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিক নাঈদের ওপর হামলার ঘটনা আমি শুনেছি। এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এ ঘটনার জন্য দায়ী তন্ময়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির চাই আমি। তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি করছি।পাশপাশি আমি কৃষকলীগের পক্ষ থেকেও এ ঘটনার জন্য প্রতিবাদ করছি। শাস্তি দাবি করছি।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি একটু অসুস্থ। আমি হামলার ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনাটি খুবই ন্যাক্কারজনক। অপরাধীর শাস্তি দাবি করছি। তাকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হউক।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এনায়েত হোসেন বলেন, ‘ঘটনা আমি শুনেছি। হামলাকারী জেলা ছাত্রলীগের নেতা। আমরা সাংগঠনিকভাবেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাবো। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে বলবো। ঘটনা তদন্ত করে যেন তারা ব্যবস্থা নেয়।’
জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা এ হামলার নিন্দা জানাই। শুধু এ হামলা নয় যে কারও উপর হামলার নিন্দনীয়। অন্যাকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক হলে শাস্তি চাই। আমার দল কখনও সন্ত্রাসী সমর্থন করে না।
বোয়লমারী পৌরসভার মেয়র মোজাফফর হোসেন বাবলু বলেন, সাংবাদিকের উপর হামলা দু:খজনক। আমি এ হামলার নিন্দা জানাই। দোষি প্রমানিত হলে হামলাকারির শাস্তি চাই।
আলফাডাঙ্গা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুকিবুল হাসান পুটু বলেন, ‘ছেলেটা বদ। সে অন্যায়ভাবে সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখন্ এটি পুলিশ দেখবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলার ঘটনা ন্যাক্কারজনক। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।’
আলফাডাঙ্গা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহমেদ ডালিম বলেন, ‘আমরা একজন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। আমরা এটা সাংগঠনিকভাবেও মানতে পারি না। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমি মনে করি হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’
আলফাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহাদুল হাসান বলেন, ‘আমি শুনেছি দুজন কিলাকিলি করছে। চাইছিলাম মিলমিশ করে দিতে। কিন্তু শুনলাম মামলা হয়েছে। এখন আইনিভাবেই বিষয়টি সুরাহা হবে। এটাই ভালো হইছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মারামারি কেউ পছন্দ করে না। আমিও পছন্দ করি না।’
আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম জানান, ‘আমি ঘটনাটি জেনেছি পরে। জানার পরে আহত সাংবাদিককে দেখে এসেছি। হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। সে যেই হোক। অবিলম্বে হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
বোয়ালমারী উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মুসা বলেছেন, ‘হামলাকারী যেই হোক তার শাস্তি চাই। একজন সাংবাদিকের ওপর কেন হামলা হবে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘সংগঠনে সন্ত্রাসীর কোনো জায়গা নেই। আমরা সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী তন্ময়ের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। সেই প্রস্তুতি আমাদের চলছে। আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও কথা বলেছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পিকুল জানান, ‘আলফাডাঙ্গায় মারামারিতে যারা অংশ নিয়েছে দুই গ্রুপই সাংবাদিক। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি মিটিয়ে দিতে।’
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ রুবেল বলেন, ‘আসলে আমি ঘটনাটি জানি না। আামাদের সঙ্গে উপজেলার সাংবাদিকরা যোগাযোগ রাখে না। যে কারণে আমরা অনেক বিষয় জানি না। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক। এর প্রতিবাদ জানাই।’
বোয়ালমারী পৌরসভার মেয়র মোজাফফর হোসেন বাবলু বলেন, ‘আমি এলাকায় নেই। যেকারণে বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। এলাকায় গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেব।’
ফরিদপুর জেলা পরিষদ সদস্য দেবপ্রসাদ রায় বলেন, ‘সাংবাদিকরা হলেন কলম সৈনিক। এদের উপর হামলা করা মানে কলমের উপর হামলা করা। এটা নিতান্তই দুঃখজনক। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। হামলাকারীর শাস্তি দাবি করছি।’
ফরিদপুর জেলা পরিষদ সদস্য মির্জা আহসানউজ্জামান তাজাউল বলেন, ‘আমি আসলে ঘটনা জানি না। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তাদের উপর হামলাকারী যেই হোক তার শাস্তি হওয়া উচিত। সাংবাদিকরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লেখার কারণে অনেকেই তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়। এর কারণে হামলার ঘটনা ঘটে। এটা হওয়া উচিত না।’
ফরিদপুর সাংবাদিক সমিতি ঢাকার সাধারণ সম্পাদক আলী আজম বলেন, ‘ঢাকাটাইমস সাংবাদিকের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটি ন্যাক্কারজনক। হামলাকারী সন্ত্রাসীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
মধুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজার রহমান মোল্লা বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। যেই হামলা করুক তার বিচার হতে হবে। তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
আলফাডাঙ্গার পাচুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এটি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।’
বোয়ালমারীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অধ্যাপক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ঢাকাটাইমসের সাংবাদিকের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটি জঘন্য অপরাধ। এটি সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। তবে আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি সেটা শুনে খারাপ লাগতেছে। দ্রুত আসামির গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শেখ কুবাদ হোসেন জানান, বিষয়টি আমি জানি না। তবে ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মতের অমিল থাকতে পারে তাই বলে কাউকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কাম্য নয়।
ফরিদপুর জেলা পরিষদ সদস্য বিউটি বেগম জানান, সাংবাদিক হামলার ঘটনা ন্যাক্কারজনক। যে হামলা করেছে তার শাস্তি চাই।
শ্রমকি লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি জানি না। তবে এ ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয় সন্ত্রাসী তন্ময় উদ্দৌলা ঢাকাটাইমস প্রতিনিধির উপর হামলা করে। আহত সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম নাঈমকে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। তন্ময়ের বাড়ি আলফাডাঙ্গা সদরে। তার বাবার নাম অদর উদ্দৌলা।এ ঘটনায় আলফাডাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/ ১৮ মে/এমএম/ এইচএফ)
মন্তব্য করুন