শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১৮ মে ২০১৭, ২২:০৮

রাজশাহীর শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষের প্রতারণার কারণে ২০১৫-১৬ সেশনের ৫০ জন শিক্ষার্থী এবার প্রথম বৃত্তিমূলক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। ফলে তারা পরীক্ষাও দিতে পারছেন না।

শনিবার থেকে শিক্ষার্থীদের এই পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় বিক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখেন ক্ষব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এই কলেজটির চেয়ারম্যান রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।

কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক অনুমোদন সাপেক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৩-১৪ সেশন থেকে শাহমখদুম মেডিকেল কলেজকে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠদানের অনুমতি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয়।

কিন্তু বিষয়টি গোপন করে কর্তৃপক্ষ ২০১৫-১৬ সেশনে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এর কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কলেজটি পরিদর্শনে গিয়ে অসঙ্গতি দেখতে পায়। অ্যাকাডেমিক অনুমোদন না নিয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি করায় কলেজটিকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের অবকাঠামো দেখে ২৫ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য সুপারিশ করে।

এ নিয়ে কলেজের চেয়ারম্যান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর মিজান উদ্দিনের ওপর চড়াও হন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। পরে শাহমখদুম কলেজ কর্তৃপক্ষ জরিমানার মাত্র ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে অ্যাকাডেমিক অনুমোদন ছাড়াই আবার পরবর্তী সেশনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এতেই দেখা দেয় বিপত্তি।

কলেজের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী হিমিকা সরকার ও আয়মিন সুলতানা অভিযোগ করেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ কয়েকদফা তাদের প্রথম বৃত্তিমূলক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু আগামী ২০ মে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, অথচ আজও তাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। তাই তারা আন্দোলন শুরু করেন। এ জন্য তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ এসব শিক্ষার্থীদের।

ডা. প্রদীপ কুমার সরকার নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়েকে শাহমখদুম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করার জন্য তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামন স্বাধীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। স্বাধীন তাকে তখন বলেছিলেন- মাত্র তিনটি সিট খালি আছে। একই সাথে পাঠদানের জন্য তাদের সব ধরনের অনুমতি রয়েছে বলেও জানানো হয়।

তিনি ১৬ লাখের মধ্যে ৮ লাখ টাকা দিয়ে মেয়েকে ভর্তি করেন। পরে তার মেয়ের রোল ১৬ দেখে তিনি আশ্চর্য হয়ে যান। শুরু থেকেই কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ ডা. প্রদীপের।

জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামন স্বাধীন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি স্বাপেক্ষে তারা ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ভর্তি ক্ষমতা ২৫ জনে নামিয়ে দেয়। কিন্তু তারা আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করান।

তিনি বলেন, ‘জরিমানা করা নিয়ে আমাদের (প্রতিষ্ঠানটির) চেয়ারম্যানের (এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী) সঙ্গে রাবি উপাচার্যের ‘কথা কাটাকাটি’ হয়েছিল। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ৫০ জনের আর অনুমতি দেয়নি। আর বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে গেলে খারাপ দেখাবে, তাই আমরা আইনি লড়াইয়েও যাইনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এন্তাজুল হক বলেন, কলেজটিতে অ্যাকাডেমিক অনুমোদন ছাড়াই ছাত্র ভর্তি করায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাই ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রথম বৃত্তিমূলক পরীক্ষা দিতে পারবেন না। তবে শাহমখদুম কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি যথাশিগগির নিরসণ করতে পারে, তাহলে এসব ছাত্র-ছাত্রী আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/আরআর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :