লোকসানে চলছে শ্যামলী সিনেমা হল

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৭, ০৮:২৬ | আপডেট: ১৯ মে ২০১৭, ১১:১৮

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

দেশে যখন একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন পুরানো হল ভেঙে নতুন পরিসরে আবারও সিনেমা হল চালু করেছে হল মালিকরা। শ্যামলী সিনেমা হল তাই এক অন্যরককম অনুপ্রেরণা আর স্রোতে গা না ভাসানোর নাম। এম এ গাফফারের হাতে তৈরি এ সিনেমা হলের পেছনে রয়েছে ঐতিহ্যের লম্বা ইতিহাস। আর সেই ঐতিহ্য রক্ষা করতেই হলটি আবারো চালু করা হয়েছে বলে দাবি বর্তমান মালিকদের। ২০১৪ সালের পর থেকে হলটি ডিজিটাল হলেও এখনো পর্যন্ত লাভের মুখ দেখতে পারেনি। দর্শক জনপ্রিয়তা থাকলেও মানসম্মত দেশি সিনেমার অভাবে এখনো লোকসান গুণতে হচ্ছে হল কর্তৃপক্ষকে।

১৯৭৬ সালের ২৬ শে মার্চ উদ্বোধন হয় হলটি। 'জাল থেকে জ্বালা' সিনেমা দিয়ে শ্যামলীতে শুরু হয় সিনেমা প্রদর্শনী। তখন আসন ছিলো ১৩ শ টি। সত্তুর-আশির দশকে হলটির দর্শক জনপ্রিয়তা বাড়ে। প্রতিটি শো চালু হলে হলটি হাউজফুল থাকতো। কিন্তু হঠাৎ দেশের চলচ্চিত্রের মন্দা শুরু হয়। ৯০ দশকের পর থেকে হলে দর্শক সমাগম কমতে শুরু করে। ২০০০ সালের দিকে ডিশ অ্যান্টেনা, ভিসিপি-ভিসিআর চলে আসে মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে। হল ব্যবসায় বড় রকমের আকাল দেখা দেয়। এরপর সিডি-ভিসিডি, ডিভিডি সহজলভ্য হয়ে যায়। বিনোদন হয়ে যায় ড্রইং রুম কেন্দ্রিক। হল মালিকদের মাথায় হাত। তখন থেকেই অনেক সিনেমা হল বন্ধ করতে বাধ্য হয় হল মালিকরা।

২০০৭ সালের ৩১ শে আগস্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয় শ্যামলী সিনেমা হলও। পুরোনো হল ভেঙে সে জায়গায় গড়ে তোলা হয় আকাশছোঁয়া শপিং মল। নাম রাখা হয় শ্যামলী স্কয়ার। কিন্তু বাবার নিজের হাতে গড়া সিনেমা হলটিকে ঠিক বিদায় বলে দিতে পারেননি এমএ গাফফারের পাঁচ ছেলে। বাবার স্মৃতি রক্ষার্থে মরহুম এম এ গাফফারের পাঁচ ছেলে নতুন করে আবারও সিনেমা হলটি চালু করেন। নামও বদলাননি, রয়েছে আগের নামই, শ্যামলী সিনেমা হল। তবে নতুন করে সংযোজিত হয় টু-ডি, থ্রি-ডি প্রজেক্টর মেশিন, ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম, কম্পিউটারাইজড টিকিট সিস্টেম, ক্যাফেসহ নানান সুবিধা। কিন্তু আগের ১৩শ সিটের পরিসর কমিয়ে করা হয় ৩০৬টি আসন। চালু করার পর পরই বেশ কিছু ভালো ভালো বাংলা সিনেমা রিলিজ পাবার কারণে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল দর্শকরা। কিন্তু ২০১৫ ও ২০১৭ সালে দিকে প্রতি শো'তে হল ভরার মতনও দর্শক পাচ্ছে না শ্যামলী। ২০/২২ জন দর্শক হলেও শো চালু করছে হলটি। মালিক পক্ষ বলছে ঐতিহ্য ও সুনাম ধরে রাখতে কম দর্শক পেলেও শো চালু রাখছেন তারা।

হলটির হাউজ ম্যানেজার আহসানউল্লাহ হাসান দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে এ হলের সাথেই আছেন। এক সময় তিনি কাউন্টারে বসে টিকিট বিক্রি করতেন।

বর্তমানে তিনিই এখন শ্যামলী হল দেখা শোনা করেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হল চালুর পর থেকে ব্যাপক চাহিদা ছিল দর্শকদের কাছে। কিন্তু এই বছর কয়েকটি সিনেমাই ঘুরিয়ে পেচিয়ে দেখিয়েছি। ভালো সিনেমা তৈরি হয় না আমাদের দেশে। প্রতিবছর যদি ১০/১২ টা মানসম্মত সিনেমা তৈরি হতো তাহলে হল মালিকরা হল বন্ধ করত না। ঐতিহ্য রক্ষায় শ্যামলী সিনেমা হলের মালিকরা নতুন ভাবে হলটি চালু করেছে। কিন্তু তারপরও এখনো হলটি লাভের মুখ দেখতে পারেনি। বছরে অন্তত ৩৬ লাখ টাকা হলে শ্যামলী হলের পক্ষে লাভের মুখ দেখা সম্ভব।’

তবে তার মতে দর্শক ভালো সিনেমা পেলে এখনও হলে যায়। বড় প্রমাণ ২০১৬ সালের বেশ কয়েকটি দেশি ও যৌথ প্রযেজনার সিনেমা। এর মধ্যে আয়নাবাজি, বাদশা, শিকারি, ধ্যাততেরিকি! ইত্যাদি সিনেমা।

জানালেন শ্যামলী হলটি নতুন পরিবেশের কারণে নির্দিষ্ট কিছু দর্শক তৈরি হয়েছে। তারা এখানে নিয়মিত সিনেমা দেখে। তাই তাদের ধরে রাখতে উপায় না পেয়ে মাঝে মাঝে হলিউড মুভি চালাতে হচ্ছে।

ছবি: সাইফুল ইসলাম

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/সিসা/এজেড/কেএস)