মাদকে সয়লাব ময়মনসিংহ, প্রতিরোধ জরুরি

সরকার মো. সব্যসাচী
 | প্রকাশিত : ১৯ মে ২০১৭, ১১:৫০

'নিজের থুথু উপরের দিকে ছুড়ে দিলে তা নিজের উপরই এসে পড়ে' - এই প্রবাদটি জানার পরেও আজ কিছু বলতে বাধ্য হচ্ছি।

আমার প্রিয় ময়মনসিংহ, যেখানে আজো আমার স্বপ্নগুলো ডানা মেলে। যেখানে আমার প্রতিটি নিশ্বাস-প্রশ্বাস বাঁকে বাঁকে মিশে আছে। আজ এক অভিশাপ ভর করেছে আমার প্রিয় জন্মস্থানে। আজ ময়মনসিংহের বাতাস ক্রমে ক্রমে বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের ভয়াল থাবা গ্রাস করে বেড়াচ্ছে আমার প্রিয় ময়মনসিংহে।

ময়মনসিংহের চিহ্নিত কিছু স্থানে প্রকাশে বিক্রি ও সেবন হচ্ছে মাদক দ্রব্যাদি। যারা মাদক দ্রব্য বিক্রি করছে তারা যেমন ময়মনসিংহ শহরে যেমন বুক ফুলিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে আর যারা মাদক দ্রব্য কিনছে ও সেবন করছে তারাও কম কিসে। ধীরে ধীরে এসকল মাদক চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ জনতা।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বেশিসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরাই নিজেদেরকে মাদক দুনিয়ায় যুক্ত করে ফেলছে। কেননা, ময়মনসিংহে মাদক দ্রব্য হয়ে উঠেছে অত্যন্ত সহজলভ্য। চাইলেই আপনি পাচ্ছেন সকল ধরনের মাদক দ্রব্য। আজ এই মাদক চক্রগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এখনি যদি চক্রগুলোর দৌরত্ম বন্ধ করা না যায় তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম থুবড়ে পড়বে আস্তাকুঁড়ে।

মাদক চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সময় এখনই। এদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছি আমার, আপনার মতো লোকজনেরাই। কারো একার পক্ষে এটার সমাধান করা অসম্ভব। সমাজের সর্বস্তরের মানুষজনদের সাথে নিয়ে প্রশাসনকে এর সমাধান করতে হবে। তা না হলে মাদকের নিরাপদ অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে আমাদের প্রাণের ময়মনসিংহ।

স্কুল-কলেজের বহু ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন চক্রের সাথে জড়িত হয়ে মাদক সেবন করছে নদীর এপারে-ওপারে, বিপনী পার্ক, জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালার সামনে দিয়ে চলে যাওয়া নদীর পার, জয়নুল আবেদীন পার্কের সারিন্দা থেকে ব্রহ্মপুত্র ভ্যালির আশেপাশে সেবন করছে মাদক। তাই প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষকগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, পাশাপাশি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি প্রত্যেক বাবা-মার প্রতি, আপনারা আপনাদের সন্তানের প্রতি সোচ্চার হোন। আপনারা আপনাদের সন্তানের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেন। বেশী করে খোঁজ খবর নেন আপনার সন্তানের।

অনেক সময় দেখা যায়, অবাধ্য সন্তানের ভয়ে বাবা-মা কিছু বলেন না-তাতে করে বিপদ আরো বেশি হয়। অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করার চেষ্টা করুন তা না হলে আপনার এই অবাধ্য সন্তানকে প্রশাসনের কাছে তুলে দেন।

ময়মনসিংহের কয়েকটি কলেজের রাতের চিত্র আরও ভয়াবহ। যেখানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাদক। আর মাদক সেবন করার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে কলেজগুলো। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা আরো বিপথগামী করে তুলেছে ময়মনসিংহবাসীকে।

আপনার সন্তান কলেজের ভিতরে কী করছে রাতের আঁধারে তা খোঁজ নেন দয়া করে। কলেজ প্রশাসনদের গা ছাড়া ভাব দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়। আপনি ইচ্ছা ও অনিচ্ছাকৃতভাবে এসব না দেখার ভান করে পার করে দিবেন প্রতিদিন। তার বিনিময়ে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের প্রজন্ম। তার দায়ভার আপনাদের উপরই বর্তায়।

আর নয় প্রতিবাদ, এবার হোক প্রতিরোধ। যে সকল এলাকায়, যে সকল স্কুল-কলেজে মাদকের অভয়ারণ্য সেগুলোর আশ্রয়দাতা দের খুঁজে বের করুন। সমাজের যে সকল মানুষ এ চক্রের সাথে জড়িত তাদের কথা সকলেরই জানা। কিছু নীতি-আদর্শবিহীন, স্বার্থান্বেষী নেতারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে এদের নিজেদের দাপট টিকিয়ে রাখার জন্যে।

তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রইলো এখনি সময় আমাদের প্রাণের শহর ময়মনসিংহকে বদলে দেওয়ার। এখনি সময় প্রশাসনের সমাজের গুণীজনদের সাথে নিয়ে দল গঠন করে আদর্শবান মানুষদেরকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আর লক্ষ্য রাখতে হবে যারা মাদক নিয়ে চোরাকারবার করছে তারাই যেন মাদক নির্মূলের মিছিলে সামনে থেকে নেতৃত্ব না দেয়। মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়দাতাদের নির্মূল করেই শুরু হোক মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ ছাত্রলীগ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :