সবাইকে দাওয়াত দেবেন না, আশরাফকে ইঙ্গিত করে যুবলীগকে কাদের

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৭, ১৩:৫৬ | আপডেট: ১৯ মে ২০১৭, ১৪:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে যুবলীগের আলোচনায় কথা দিলেও ‘অসুস্থতার কারণে’ যোগ দেননি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আর এক দিন পর যুবলীগের অনুষ্ঠানে গিয়েই ওবায়দুল কাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে বলেছেন, যারা কথা দিয়েও আসেন না, তাদেরকে যেন ভবিষ্যতে দাওয়াত দেয়া না হয়।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এক আলোচনায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে যুবলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ৩৭ তম বার্ষিকীতে এবার যুবলীগ চার দিনের আয়োজন রেখেছে। ১৬ মে হইতে ১৯ মে পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির তৃতীয় তলার তিন নং গ্যালারিতে ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জীবনভিত্তিক সংবাদচিত্র প্রদর্শনী’ ও চতুর্থ তলার মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে চারদিন।

১৭ মে যুবলীগের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামীকাল ১৮/০৫/২০১৭ইং তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০.০০ টায় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জীবন ভিত্তিক সংবাদচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি।’

যু্বগীগের এই আমন্ত্রণ পেয়ে আলোচনা সভায় গিয়েও আশরাফের বক্তব্য ছাড়াই ফিরতে হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে। যুবলীগের পক্ষ থেকে সেদিন  জানানো হয়, সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ এবং তিনি এ কারণে উপস্থিত হতে পারেননি।

পর দিন শুক্রবার যুবলীগের ধারাবাহিক আয়োজনের শেষ দিনের আলোচনায় প্রধান অতিথি করা হয় ওবায়দুল কাদেরকে। এ সময় তিনি আগের দিন আশরাফের অনুপস্থিতির বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘যেসব এমপি-মন্ত্রীরা আলোচনা সভায় আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন না আগামীতে তাদেরেকে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেবেন না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন একটা কালচার শুরু হয়েছে। মন্ত্রীরা বিভিন্ন প্রোগ্রামে যায়, পাঁচ মিনিট বসে ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে আসে। এ রকম যারা ব্যস্ততা দেখায়, তাদেরকে দাওয়াত দেবেন না।’

আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘মন্ত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ দিতে যান। পাঁচ জনকে দিয়ে বলে সময় নাই, কাজ আছে। এটা বলে চলে যায়। আর প্রধানমন্ত্রী গতকালকে খালিয়াজুড়িতে গিয়ে ২২৬ জনকে ত্রাণ দিয়েছেন। ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি চলে আসেননি।’

গত অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে নতুন সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। এর আগের দুই দফা এই দায়িত্ব সামলেছেন সৈয়দ আশরাফ। আশরাফের প্রস্তাবেই কাদের তখন দায়িত্ব পান। আর দায়িত্ব পাওয়ার পর আশরাফের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখাও করে আসেন ওবায়দুল কাদের।

মন্ত্রিসভার সবশেষ বৈঠকে আশরাফ ও তাদের পরস্পরের প্রতি ইঙ্গিত তীর্যক মন্তব্য করেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে কারও নাম উল্লেখ না করেই এই ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করেন আশরাফ। অন্যদিকে আশরাফের নাম উল্লেখ না করেই তার সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রাখেন কাদেরও।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই বৈঠকে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আমাদের দলের কিছু নেতা প্রকাশ্যে দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনা করছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হচ্ছে। জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে। দলের সমালোচনার জন্য দলীয় ফোরাম আছে, সেখানে কথা বলা যেতে পারে। প্রকাশ্য জনসভায় দলের দায়িত্বশীল নেতা হয়ে সমালোচনা মানায় না।’

সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের পর ওবায়দুল কাদের কথা বলা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘এখন দলে অনেক গতি এসেছে। দল চাঙ্গা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সবখানেই প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। আগে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা ঘুমিয়ে থাকতেন, দলও ঘুমিয়ে ছিল।’

দলের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে পরস্পরবিরোধী কথাবার্তায় মন্ত্রিসভার সদস্যরা অনেকটাই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। পরে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে কথা বলা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। আর মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সৈয়দ আশরাফ ও ওবায়দুল কাদেরকে কাছে ডেকে একান্তে কথা বলেন তিনি।

ঢাকাটাইমস/১৯মে/জিএম/ডব্লিউবি