পরিবেশ ধ্বংস করছে বিদেশি তিনজাতের গাছ

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৭, ১৬:১৪ | আপডেট: ১৯ মে ২০১৭, ১৬:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য তিনটি বিদেশি জাতের গাছ ক্ষতিকর জানিয়ে সেগুলো রোপন না করার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশবাদী একটি সংগঠন। নদী বাঁচাও আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ‘এই গাছগুলো মাটির গভীর থেকে প্রচুর পানি টেনে নেয়। যার কারণে আশেপাশের অন্য গাছ লাগানো হলে তারা পানির অভাবে বড় হতে পারে না এবং যতটুকু ফলন হওয়ার তার চেয়ে অনেক কম হয়।’

শুক্রবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই পরামর্শ দেয় বাপা। এ সময় বলা হয়, এই তিনটি গাছের পাতা ও ফুলের রেণু প্রাণীদেহের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফলে এসব গাছে পাখিও বাসা বাঁধে না।

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও সামাজিক বনায়নের নামে সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে ইউক্যালিপটাস, ম্যালেরিয়া ও আকাশমনি লাগানো হচ্ছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

পরিবেশবিদরা বলেন, ভূতাত্ত্বিকভাবে এক এক দেশে এক এক রকম ইকোসিস্টেম দেখা যায়। বাংলাদেশের ইকোসিস্টেমের জন্য যে সকল বনজ, ফলজ, ভেষজ ও ঔষধি গাছ থাকার কথা তা আবহমান কাল ধরে ছিল ভরপুর। কিন্তু বর্তমানে এসব গাছ বিলুপ্তির পথে। মানুষ বিদেশি গাছ লাগানোর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। যেটা বাংলাদেশের মাটির উর্বরতা, ওজনস্তর নষ্ট, অসহনীয় তাপমাত্রা, জলজ প্রাণীর অভয়াশ্রম নষ্ট, প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়সহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে।

মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে (৫জুন) সামনে রেখে সারাদেশে একযোগে ‘টেকসই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি’র আয়োজন করবে নদী বাঁচাও আন্দোলন। এই খবর জানাতে আয়োজন করা সংবাদ সম্মেলনে দেশীয় গাছের উপকারিতার কথা তুলে ধরে বিদেশি গাছ বর্জনের আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আপনি যদি গাছ লাগান সেটা অবশ্যই হতে হবে পত্রবৃহৎ ও পাতাবহুল। লাগানো গাছের সঠিক পরিচর্যা নিলে গাছ আপনাকে পরিচর্যা করবে, তীব্র গরমে গাছের নিচে তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ৩-৪ ডিগ্রি কম থাকে। যার নিচে দাঁড়ালে আপনার ঠান্ডা লাগবে।’

নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘শুধু গাছ লাগালেই হবে না, সেটা হতে হবে পরিবেশ উপোযোগী। সরকার কেন পরিবেশবান্ধব গাছ না লাগিয়ে বিদেশি ক্ষতিকর গাছ লাগাচ্ছে এটা আমি বুঝতে পারছি না।’

‘সরকার সচেতন হোক আর না হোক আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাবই। আমরা নদীর ধারে এক লক্ষ তালগাছ লাগাব। এছাড়াও আরও অনেক গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের’-বলেন আনোয়ার সাদাত।

সংবাদ সম্মেলনে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য নূন্যতম ২৫% বনায়ন অপরিহার্য। সেখানে তার অর্ধেকও নেই বাংলাদেশে। তার উপর যা আছে সেটাও যদি পরিবেশবান্ধব না হয় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য খুব খারাপ হবে।

কোথায় কী গাছ লাগাবেন

১) নদীর পাড়ে রাস্তার ধারে: নিম, অর্জুন, সেগুন, গামারি, কড়ই, আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তাল ইত্যাদি বনজ ও ফলজ বৃক্ষ।

২) নদীর ঢালুতে: হিজল, তমাল, গাব, বট, পাকুড় ইত্যাদি জলজ বৃক্ষ।

৩) অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে: তালিপাম, নলি, ধূপ, বওলা, রিটা, লটকি, রুটিফল, সিঁদুর, ভূজপত্র, কোকো, আমলকি, মাইমুসপত্র, বাঁশপাতা ইত্যাদি বিপন্ন ভেষজ উদ্ভিদ।

৪) বাড়ির আঙিনায় বাসার ছাদে: তুলসী, বহেরা, ঘৃতকুমারী, পাথরকুচি, লজ্জাবতী, স্বর্ণলতা, চিরদা, আকন্দ, বাসক, কুঁচ, জারুল, নিশিন্দা, লবঙ্গ ইত্রাদি ভেষজ ও ঔষধী গাছ।

ঢাকাটাইমস/১৯মে/এনআই/ডব্লিউবি