‘মেয়েকে ফেরত চাইলে দুই লাখ টাকা রেডি রাখ’
প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৭, ১৮:৩৬
‘ভাবি কেমন আছেন? কোনো সমস্যা আছে কি না?’ জানতে চেয়ে ঘরে ঢোকেন সুমন নামে এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। পরে আমাকে ধাক্কা মেরে বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে তিন মাসের শিশু শিনকে অপহরণ করেন সুমন। পরে মোবাইলফোনে সে জানায়, মেয়েকে ফেরত পেতে চাইলে দুই লাখ টাকা রেডি রাখ।’
শুক্রবার দুপুরে কারওরানবাজারে র্যাবের গণমাধ্যম শাখায় এভাবে সন্তান অপহরণের বর্ণনা দিচ্ছিলেন শাখাওয়াত হোসেন ও রিতু ইসলাম দম্পতি।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত ১৭ মে সন্ধ্যা সাতটার দিকে সুমন তার বসতঘরের দরজায় নক করলে দরজা খুলে দেন তার স্ত্রী রিতু ইসলাম মিতু। এ সময় সুমন জিজ্ঞেস করে ভাবি কেমন আছেন? কোনো সমস্যা আছে কি? তার স্ত্রী জানান, ভাই কোনো সমস্যা নাই। বসলে বসতে পারেন বলে তার স্ত্রী শিশু বাচ্চাটিকে ড্রইং রুমের খাটের উপর রেখে পাশের রুমে যান। ফিরে এসে দেখেন মাঝের রুমের ছিটকিনি বাহির থেকে আটকানো। তিনি ভেতর থেকে দরজা খুলতে বলেন। কিন্তু পাশের রুম থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে শোর-চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন। এ সময় পাশের ফ্ল্যাট থেকে হেমা নামের এক নারী এসে দরজার ছিটকিনি খুলে দিলে তার স্ত্রী বের হয়ে দেখেন তার তিন মাসের কন্যা কিনারা রহমান শিনকে নিয়ে পালিয়েছে সুমন।
গৃহবধূ মিতুর অভিযোগ, তিনি সুমনকে রুমে না পেয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে না পেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে রাস্তা পর্যন্ত এসে তার মেয়েকে পাননি। পরে মিতু বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার স্বামী শাখাওয়াতকে জানান। এরপর শিশুটির বাবা শাখাওয়াত দ্রুত বাসায় ফিরে বিস্তারিত ঘটনা শুনেন। এ সময় সুমনের মোবাইলে বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
গণমাধ্যমকর্মীদের ওই দম্পতি বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা পর সুমন তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন দিয়ে জানায়, আমি তোর মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছি, তুই যদি তোর মেয়েকে ফেরত পেতে চাস তবে দুই লাখ টাকা রেডি রাখ। যখন বলবো নিয়ে আসবি। র্যাব-পুলিশ কাউকে জানালে তোর মেয়েকে পাবি না বলে সুমন ফোন কেটে দেয়। পরে বার বার চেষ্টা করেও তার ফোন খোলা পাওয়া যায়নি। তার ফোনের অপেক্ষায় থাকাবস্থায় রাত অনুমান ১১টার দিকে সুমন আবারও মিতুর মোবাইলে ফোন করে তাড়াতাড়ি টাকার ব্যবস্থা করে রাখ বলে ফোন লাইন কেটে দেয়।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে সুমন মিতুর মোবাইলে ফোন করে টাকার খবর জানতে চায়। কখন কোথায় টাকা নেবে তা পরে জানাবে বলে জানায়। এছাড়া তার মেয়ে ভালেলা আছে বলেও জানায়। এ ঘটনা থানা-পুলিশকে জানালে তার মেয়েকে হারাতে বলে হুমকি দেয়।
পরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন র্যাব-১০ অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুববর। তিনি বলেন, শিশুটির পিতা তার মেয়েকে উদ্ধারে আইনগত সহায়তা কামনা করেন। অভিযোগ প্রাপ্তির পর র্যাব-১০ গতকাল দুপুর দুইটা থেকে টানা অভিযান পরিচালনা করে মুক্তিপণ পরিশোধের ফাঁদ পেতে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার গোলাম বাজার কাঁচাবাজারের কাছে লাকড়ি ঘরের কাছ থেকে অপহরণকারী সুমনকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীর দেখানো মতে গোলাম বাজার হাবিব কলোনি গলির হাবিব মিয়ার দোতলার বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া আবদুল হক নলীর বাসায় থেকে তিন মাস বয়সী শিশু শিনকে র্যাব সদস্যরা উদ্ধার করেন। এ সময় শিশুটি কাঁদছিল। সে অসুস্থও হয়ে পড়ে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সুমন জানিয়েছেন, তিনি একজন অবিবাহিত যুবক। গত চার বছর ধরে এলাকায় ইলেক্ট্রনিকসের কাজ করেন। তিনি শিশুটিকে মুক্তিপণের লোভেই অপহরণ করেছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এএ/জেবি)