‘আমরা লেখাপড়া করার পরিবেশ চাই’

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৭, ২২:০১

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল

‘আমরা লেখাপড়া করার মতো পরিবেশ চাই।’ নিজেদের খাতার পাতায় লিখে যথাযর্থ কর্তৃপক্ষকে জানান দিল শিশুরা। সাংবাদিকের বাইক দেখে সম্ভাবনা আশা খুঁজে পেলেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকরাও। ওমনি বাইক থামিয়ে স্কুলে যাওয়ার আমন্ত্রণ।

মফস্বলের শিশুরাও জানে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ মানেই একটা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যম। ভবনের অভাবে শিশুরা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে। অমানবিক এই চিত্রটি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার সদরের মডেল স্কুলের। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তাদের শ্রেণি কক্ষ নাই কেন? তারা নিরাপদ শ্রেণিকক্ষ চায়।

এই মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। রয়েছে শিক্ষক সংকটও। বিদ্যালয়টি কাগজে কলমে মডেল হলেও পায়নি বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা। কক্ষ সংকটের কারণে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের পাঠ দান হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিদ্যালয়ের নানা সমস্যার কথা লিখিতভাবে জানানো হলেও আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর উন্নয়নের কোন সুফল মেলেনি। বিদ্যালয়টি তার মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে ধীর্ঘদিন ধরে। ফলে বিদ্যালয়ে পাঠদানে হচ্ছে নানা সমস্যা। প্রতিকূল অবস্থা বিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থাকে পেছনে  টেনে রাখছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৮ খ্রি. বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে মডেল হিসেবে বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি বিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা  ৮শ জন এবং শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১০ জন। দুইটি ভবন রয়েছে তার একটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। দুইটি ভবনে শ্রেণি কক্ষ রয়েছে মাত্র ৭টি। এই ৭টি কক্ষে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসিয়েও শ্রেণি কক্ষের সংকট দেখা যায়। সে জন্য বাধ্য হয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করা হয়।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের একাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠ গ্রহণ করছে। কিন্তু ওরা বুঝতে পারছে না- যে কোনো সময় ভবন ধসে দুর্ঘটনার শিক্ষার হতে পারে। প্রশাসন জানার পরও চলছে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান। এ অবস্থায় অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের পাঠাতে ভয় পায় এবং পাঠিয়েও ভয়ে থাকেন। কখন যেন দুর্ঘটনার শিকার হয় বাচ্চারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে,  বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে খোলা আকাশের নিচে পাঠ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয়টির দুইটি ভবনের একটির ছাদের ফাটল ধরার স্থানে সিমেন্ট দিয়ে প্রলেপ দেয়া হয়েছে।  ধ্বংস স্তূপ নিচে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সেখানে গাদাগাদি করে বসিয়ে পাঠদান চলছে। রয়েছে আসবাবপত্র সংকটও। শ্রেণি কক্ষ সংকট নিরসনে সরকারি খরচে একটি একটি টিনের ঘর দেয়া হলেও সেটিও ব্যবহার অনুপযোগী। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপজেলা রির্সোস সেন্টার অফিস রয়েছে। সে জন্য বিদ্যালয় মাঠ খেলার মাঠ নেই। নানা সমস্যার জর্জরিত বিদ্যালয়টি যেন দেখার কেউ নেই। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়েও প্রতিবছর শিক্ষকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় শতভাগ পাসসহ বিদ্যালয়টি ভাল ফলাফল অর্জন করে আসছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম মিয়া জানান, প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষ সংকট রয়েছে, রয়েছে শিক্ষক সংকটও। বিদ্যালয়টির নানা সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। তবে  আজ পর্যন্ত কোন সুফল মেলেনি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন অবগত আছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার গৌর চন্দ্র দে স্কুলটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার গৌর চন্দ্র দে জানান, ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টির নানা সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে সমস্যা দ্রুত সমাধানের কোন আশ্বাস পাওয়া যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির স্কুলটি পরিদর্শন করে সত্যতা পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষককের হাতে ঘর মেরামতের জন্য এ লাখ টাকা দিয়েছি। তবে ভবনের বিষয়টি ডিপার্টমেন্টের বিষয়।

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/প্রতিনিধি/এলএ)