‘দায়বদ্ধতা থেকে বাপজানের বায়োস্কোপ তৈরি করেছি’

মাহমুদ উল্লাহ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ মে ২০১৭, ০৯:২৯ | প্রকাশিত : ২০ মে ২০১৭, ০৭:২৭

তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা রিয়াজুল রিজু তার ক্যারিয়ারে প্রথম পরিচালিত ছবি ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ দিয়ে বাজিমাত করেছেন। ২০১৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যৌথভাবে ছবিটি নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়াও রিজু পাচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতার পুরস্কার। সর্বাধিক ৯টি ক্যাটাগরিতে ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ জাতীয়ভাবে পুরস্কার পাওয়ায় গৌরব অর্জন করেছে। এটি একজন নির্মাতার জন্য বড় প্রাপ্তি। কথা হয় এই মেধাবী নির্মাতার সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে তার স্বপ্ন এবং বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদ উল্লাহ।

এতগুলো ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেলেন। কেমন লাগছে?

সত্যি বলতে অনুভূতিহীন হয়ে গেছি। সবার প্রতি ভালোবাসা।

মিডিয়ায় আপনার শুরুর গল্প শুনতে চাই।

একদম রুট লেভেল থেকে আমি কাজ শুরু করেছি। ধুমকেতু নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে ছিলাম দীর্ঘদিন। বিভুতি ভট্টাচার্য ছিল আমার গুরু। ২০০৪-২০০৫ সালের দিকে নিমকো, ডিএফআই থেকে চলচ্চিত্র তৈরির উপর প্রশিক্ষণ নেই। বিভিন্ন শুটিং সেটে গিয়ে ঘুরে ঘূরে ডিরেক্টরদের কাজ দেখতাম। পরে শাহেদ শরীফ খানের নাটকে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করি।

এরপর নিজে কাজ শুরু করলেন কবে থেকে?

২০১০ সালে আমি প্রথম একটি সিরিয়াল নির্মাণ করি। সেটি মেহজাবীনেরও প্রথম কাজ ছিল। ২০১৩ পর্যন্ত বেশ কিছু নাটক টেলিফিল্ম বানাই। ২০১৩ সালে আমি এসএ টিভিতে প্রোগ্রাম প্রডিউসার হিসেবে যোগদান করি। ‘চারপাশ ‘ নামে পেশাজীবীদের নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রোগ্রাম করি। তখনই একটি চরে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয় যিনি বায়োস্কোপ দিয়ে মানুষদেরকে আনন্দ দিতেন। পরে খোঁজ নামে একটি ইনভেস্টিগেশন ক্রাইম প্রোগ্রামও চালু করি। এই চাকরি থাকা অবস্থাতেই আমি বাপজানের বায়োস্কোপ সিনেমাটি তৈরির কাজ শুরু করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরি ধরে রাখা আর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই চাকরি ছেড়ে দেই। বউ বাচ্চাদেরকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেই। ছবিটি তৈরি করি কারুকাজ ফিল্মসের ব্যানারে। এই প্রডাকশন হাউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি নিউজ পোর্টালও আছে। এখন এগুলো নিয়েই আছি। সিনেমা তৈরি করতে গিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে ছিলাম, এখনো আছি।তাই চলচ্চিত্র পুরস্কার আমার সিনমোর প্রতি আমার ভালোবাসার প্রতিদান স্বরুপ পেলাম বলা চলে।

সিনেমার বর্তমান অবস্থান সর্ম্পকে কিছু বলুন?

আমরা মিডিয়ার লোকজন নিজেরাই নিজেদের সম্মান দিতে জানি না। তাই আমাদের শিল্পের আজ এই অবস্থা। মুচি হোক বা মেয়র সবারই নিজ নিজ কাজের প্রতি সম্মান থাকতে হয়। তাহলে সে সেই সেক্টরে ভাল করতে পারে। এটা আমার বিশ্বাস। কাজের প্রতি আন্তরিকতা ভালোবাসা থাকলে তা তার প্রতিদান মিলবেই। তাই বলবো কাজের প্রতি আমার ডেডিকেশন, এনভলবমেন্ট, ড্রিমই একজন মানুষকে সেরা জায়গায় পৌঁছে দেয়।

পেশা হিসেবে সিনেমা কেন?

আমি নিজে একজন হোমিও ডাক্তার। আমার বাবাও হোমিও ডাক্তার। টাঙ্গাইলে তার অনেক সম্মান আছে। আমি এখন গ্রামেই আছি। এখনো যদি আবার হোমিও চিকিৎসা শুরু করি আমি ভালোভাবেই চলতে পারবো। কিন্তু সিনেমার প্রতি ভালোবাসাই আমাকে টেনে নিয়ে যায়।সেই ভালোবাসা থেকেই আমার সিনেমা তৈরি। আমৃত্যু সিনেমা তৈরি করে যেতে চাই।

আমাদের সিনেমায় কী ধরনের সমস্যা রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন, প্রদর্শনের জায়গাটা ঘোলাটে। এটা যদি কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমে চলতো তাহলে আমাদের সিনেমার অবস্থান অনেক উন্নত হতো। টেলিভিশন যেমন একটি সার্ভার থেকে প্রোগ্রাম আপ করে। তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্যাবল অপারেটররা ডাউনলোড করে চালায়। সেরকম একটি সিস্টেম তৈরি হলে থার্ড পার্টি মাঝ থেকে ফল ভোগ করতে পারবে না। কারণ থার্ড পার্টিরাই সিনেমা ধ্বংস করছে। সার্ভার সিস্টেমের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউশন হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কম হতাম। প্রতিটা সেক্টরের মতোই চলচ্চিত্র ব্যবসায়ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে। তারা সব জায়গাই নষ্ট করে ফেলে।

একটি চলচ্চিত্র দিয়ে ৯টি পুরস্কার। সংখ্যার দিক দিয়ে এটি অনেক। কিভাবে সম্ভব হল?

আমাদের এতগুলো ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়ার মূলে আমি বলবো আমাদের পুরো টিমটাই প্রচন্ড কো-অপারেটিভ ছিল। কাজের প্রতি প্রত্যেকের প্রেম ভালোবাসা ছিল। আমি নিজেই ছবিটির প্রডিউসার ছিলাম। মানে বিভিন্নভাবে ফান্ড কালেক্ট করে আমি ছবিটি তৈরি করি। অনেকটা সমিতির মতো করে। সিনেমার সবার ভালো্বাসার কারণেই সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশে সিনেমা তৈরি কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মুখোমুখী?

এটা সত্যিই বিশাল চ্যালেঞ্জ। আমরা বাংলাদেশিরা অনেক মেধাবী। পৃথিবীর বড় বড় ডিরেক্টারদেরকে এত প্রতিকূলতার মধ্যে সিনেমা বানাতে হলে তারা বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতো। আমরা সুপারম্যানের মতো কাজ করি। আর একটু সময় লাগবে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র ঘুরে দাড়াবে। আমি অনেক আশাবাদী।

বাপজানের বায়োস্কোপ মুক্তির দুদিন পরেই প্রায় সব হল থেকে নামিয়ে দিয়া হয়েছিল। এই পুরস্কার কি তাহলে সেইসব মানুষদের বিরুদ্ধে একটি স্বীকৃতি?

সেসব কথা আমি আর বলতে চাইনা। আমার পরবর্তী সিনেমা বানাতে হবে। পরে সমস্যা হোক আমি চাই না। আর হল মালিকরা এখন শাকিব খানের ছবি দেখতে চায়। সে তো তিন নম্বর সাইড নায়ক ছিল। এখন এই জায়গায় আসছে একমাত্র তার নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা ও একাগ্রতা। আমি সিনেমা ভালোবাসি। সিনেমার প্রতি আমার প্রেমই আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

আমার মতে ফিল্ম তিন ধরনের। গুড ফিল্ম, ব্যাড ফিল্ম ও হিট ফিল্ম। আমি একটি গুড ফিল্ম বানিয়েছি। এখন একটি হিট ফিল্ম বানাতে চাই। সেটির কাজই করছি। এখন প্রি-প্রডাকশনের কাজ চলছে। নভেম্বর ডিসেম্বরে শুটে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

আপনার ছবিতে অ-বাণিজ্যিক বিষয় নির্বাচনের কী কারণ ছিল?

এক ধরনের দায়বদ্ধতা ছিল। সেই জায়গা থেকেই ছবিটি বিষয় বাছার কারণ হিসেবে বলতে পারেন। ছবিটিতে ৫২, ৬৯ ও ৭১ টেকনিক্যালি দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথম মুভি হিসেবে ছবিটিতে দায়বদ্ধতা অনেক বেশি কাজ করেছে।

পুরস্কার প্রাপ্তিতে আপনার পরিবার কেমন মনে করছে?

আমার বউ আমার সহযোদ্ধা। সে আমাকে ভয়ঙ্কর ছাড় দেয়। রাতের পর রাত আমি চরে গিয়ে কাটিয়েছি। আমার শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ি আমার এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে অনেক এক্সাইটেড।

শেষ কথা?

তিনজনের নাম না বললেই নয়। ড. জি মওলা, শাহেদ শরীফ খান ও ছবিটির প্রডিউসার এম এ হোসেন মঞ্জু। এই তিনজন মানুষের অবদান ছাড়া আমার পক্ষে সিনেমা বানানো সম্ভব হতো না।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনাকে ও ঢাকাটাইমসকেও অনেক ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/২০মে/এমইউ/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :