এমপিদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কাছে তৃণমূলের নালিশ

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ মে ২০১৭, ১৬:৪৬ | প্রকাশিত : ২০ মে ২০১৭, ১৬:১৪

দলের ভেতর বিশৃঙ্খলার জন্য সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরুত্বকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলার নেতারা। বিশৃঙ্খলা নিরসনে দলীয় সভাপতির হস্তক্ষেপও কামনা করছে দলটির নেতারা।

শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এ দাবি উঠে আসে দলটির তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্যে। সেখানে সংসদ সদস্যদের সাথে নেতা-কর্মীদের দুরুত্বের বিষয়টিও তুলে ধরেন। এ ছাড়াও নেতারা দলের ভেতরে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন।

তৃণমূলের আট নেতার বক্তব্য শেষ হলে সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে নিজ জেলার নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।’

এর আগে এ বর্ধিত সভার উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এসময় তিনি সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেন।

এরপর সারাদেশ থেকে আসা আট বিভাগের আট জন নেতা বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনা মঞ্চে বসে থেকে সবার বক্তব্য শোনেন। পরে সবার অভিযোগ, অনুযোগ ও পরামর্শের জবাব দেন তিনি। রুদ্ধদ্বার এই সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সরকারের টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে যে উন্নয়ন হয়েছে সে হিসাবে আমরা জাগরণ সৃষ্টি করতে পারিনি। সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সৃষ্ট দূরত্ব তৈরি হয়েছে।’ এই দূরত্ব কাটিয়ে তুলতে শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরুদ্দিন কামরান বলেন, ‘আমাদের সিলেট বিভাগে মোট ১৯টি আসন। সেখানে যারা প্রার্থীদের বিজয়ী করতে তৃণমূলের প্রত্যেক নেতাকর্মীর ঘাম ঝরেছে। কিন্তু বিজয়ী হয়ে সেসব সংসদ সদস্যদের মধ্যে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের ফারাক তৈরি হয়েছে। ফলে আগামীতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মনোনয়ন দেবেন।’

সভায় রংপুর বিভাগের পক্ষে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, ‘এমপিরা নির্বাচিত হয়ে বলয়ের বাইরে যেতে পারেন না। আর বলয়ের কারণে অমুককে তমুককে দিয়ে কমিটি দেওয়া হয। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হয়। তারা কাদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগে ঢুকছে সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে। এগুলো শক্ত হাতে দমন না করলে আমার মত আওয়ামী লীগের নিবেদিত নেতারা টিকে থাকতে পারবে না।

রেজাউল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঝে মধ্যে এমন কথা বলেন তখন আমরা ভীত হয়ে পড়ি। দল বুঝি আর ক্ষমতায় আসবে না। তাছাড়া উনার বক্তব্যে দলীয় বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠে।’

ঢাকা বিভাগের পক্ষে টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুক বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা যাব না। এক ও অভিন্ন থেকে এগিয়ে যাই। কেউ ভিন্ন চিন্তায় ভিন্ন হব না।’

খুলনা জেলার সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ‘দলের মধ্যে শৃঙ্খলা এনে দিলে শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার এই শ্লোগানও দিতে হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দেখেছি আপনি (শেখ হাসিনা) মনোনয়ন দেন। কিন্তু নৌকার বিরুদ্ধে আরেক জন দাঁড়িয়ে যায়। তাই শৃঙ্খলা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। দলের বিরুদ্ধে যদি আমিও যাই আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’

রাজশাহী জেলার সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘দ্বন্দ্ব আছে, তবে দ্বন্দ্বের কথা নয় আমি বলব ঐক্যের কথা। দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে তবে নিরসনের উপায় বের করতে হবে। ’

বরিশাল বিভাগের পক্ষ থেকে বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বরিশাল বিভাগে ঐক্যবদ্ধ। তবে কোথাও কোন বিভেদ থাকলে, ভুল বোঝাবেঝি থাকলে মীমাংসা হবে না কেন?’।

ময়মনসিংহ বিভাগের পক্ষে ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি জহিরুল হক খোকা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জাতীয়ভাবে কাজকর্মই শুধু জনগণ বিবেচনা করবে না, বিবেচনা করবে স্থানীয়ভাবে এমপিরা কী করছেন, সেই প্রশ্ন আসবে? সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ’

খোকা বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে দেখেছি অশুভ প্রতিযোগিতা। আমরা একদল আপনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি, আরেক দল আপনাকে পিছনের দিকে টানছে।’ খোকা বলেন, ‘আমাদের ভেতরে বেশিরভাগ বিরোধ আদর্শের নয়, ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বের। এসব বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে হবে।’

ঢাকাটাইমস/২০মে/টিএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :