এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণে বেড়েছে দুর্ভোগ ও ঘুষের হার

মো. দ্বীন ইসলাম হাওলাদার
 | প্রকাশিত : ২১ মে ২০১৭, ২০:৫০

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে এমপিওভুক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এমপিও ছাড়া বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরির কোনো মূল্য নাই। যে কারণে আইসিটি (কম্পিউটার) সহ অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা ও ননএমপিও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা বহু বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন এবং অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। পূর্বে একজন শিক্ষক-কর্মচারীকে তার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশিতে) জমা দিতে হতো । সেখানেও মোটা অংকের টাকা দিতে হতো যা কারোই অজানা নয়। মাউশিতে ৩/৪ বছর চাকরি করলে রাজধানী শহর ঢাকায় বাড়ি-গাড়ির মালিক হতে বেগ পেতে হয় না। সে নৈশপ্রহরী হোক আর পদস্থ কর্মকর্তাই হোক। অনেকে মাউশিকে দুনীতির আখড়া বলে থাকেন। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে মাউশি কর্মকর্তারা অনেক অবৈধ ত্রমপিও দিয়েছেন। এর দায়ভার কার?

মাউশির বর্তমান মহাপরিচালক ড. এস এম. ওয়াহিজুজ্জামান দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি মাউশি শুদ্ধিকরণ অভিযান শুরু করেন। তাতে দুইবারে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষক কর্মচারীর এমপিও বন্ধ হয়। যারা বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু যারা লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে এমপিও দিয়েছেন তাদের কী হয়েছে? তারা অনেকেই এখনো বহাল তববিয়তে। দুই/এক জনকে বদলি করা হয়েছে। তাতেই তাদের শাস্তি হয়ে গেল! তাদের ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে অনেক তথ্য প্রকাশ হয়েছে। শিক্ষকর/কর্মচারীরা অবৈধ এমপিও নিয়ে তারা কাজ করছেন। আর যারা ঘুষ নিল তারা কী করছে?

সে যাই হোক, দুর্নীতি কমাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণ করেছে। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে, সেখান থেকে অনলাইনে জেলা শিক্ষা অফিস-সেখান থেকে বিভাগীয় শিক্ষা অফিস-সেখান থেকে মাউশিতে ‘যত হাত, তত বরকত; অন্যদিকে যত টেবিল, তত ঘুষ।’

প্রথমেই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস-অনেক মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সহকারী বলেন, ‘বাহির থেকে কাগজ পাঠালেও টাকা খরচ হবে, সেই টাকা আমাদেরকে দিলে আমরাই পাঠিয়ে দেব। আর আমাদেরকে এমনিওতো কিছু দেবেন। একটু বাড়িয়ে দেন কাজটা আমরাই করি।’ কোনো কোনো মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, ‘আমি কাগজ না পাঠালে কাগজ কোথাও যাবে না। আমাকে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা না দিলে কাগজ পাঠাবো না।’ ক্ষেত্র বিশেষ বেড়েও যায়। [অবশ্য অনেক উপজেলায় বাহির থেকে কাগজ পাঠালেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস গ্রহণ করে। জানা গেল বাকেরগঞ্জ উপজেলায় বাহির থেকে কাগজ পাঠানো হয়] সাথে অফিস সহকারীর ৪/৫ হাজার টাকাতো আছেই। অনেক ধর্ণাধরে বলে কয়ে কিছু কমলে-কমলো নয়তো দাবি পূরণ করে ফাইল জেলা শিক্ষা অফিসে। অফিস সহকারী স্যার কমপক্ষে ২০ হাজার ছাড়া ফাইলই ধরেন না। সাথে অফিস সহকারীর পাঁচ হাজার তো থাকতেই হবে।

এরপর ফাইল বিভাগীয় অফিসে, সেখানেও নির্ধারিত ফি দিতেই হবে। নূন্যতম ১০ হাজার সাথে অফিস সহকারীর ফি। আবার প্রতি অফিসের পিয়নদের চায়ের ৫০০/১০০০ তো থাকতেই হবে। এরসাথে লোকাল কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে খুশি করার বিষয়তো রয়েই গেছে।

টাইম স্কেল ও উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তিতে একই অবস্থা। এরপর অনলাইন বিড়ম্বনা। আবার ফাইল গিয়ে বিভাগীয় অফিসে পৌঁছল। সামান্যতম সমস্যার কারণে (যা একটানে কেটে লিখে দিলে হতো) বিভাগীয় অফিস থেকে ফাইল রিজেক্ট হলে উপজেলা থেকে নতুন করে কাগজ পাঠাতে হয়। এভাবে এমপিও পেতে পেতে বড় অংকের টাকা খরচ হয়ে যায়। অন্যদিকে থাকতে হয় বিনা বেতনে। আর কোনোভাবে নির্ধারিত সময়ে কাগজ পাঠাতে ব্যর্থ হলে কমপক্ষে দুই মাস এমপিও পিছিয়ে যায়। তাই সবাই চেষ্টা করে অফিসকে খুশি করে কাগজ পাঠাতে।

এ ব্যাপারে বহু রিপোর্ট দৈনিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে। প্রকাশ করেছে বহু শিক্ষা অফিসারের ঘুষ গ্রহণের প্রতিবেদন।

পরিশেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, বেসরকারি নিয়োগ যখন এনটিআরসি এর হাতে, এমপিওভুক্তির বর্তমান প্রথা বাদ দিয়ে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো শিক্ষক/কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। যাতে নিয়োগ প্রাপ্তির পর এমপিও ভুক্তিতে এরকম বিরম্বনা পোহাতে ও ঘাটে ঘাটে মোটা অংকের ঘুষ দিতে না হয়।

লেখক: প্রভাষক, দুমকি ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা, দুমকি, পটুয়াখালী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :