টাঙ্গাইলে গৃহবধূর ‘আত্মহত্যা’ নিয়ে রহস্য বাড়ছে
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে গত বৃহস্পতিবার সকালে নুপুর (২২) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে দেলদুয়ার থানা পুলিশ। গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি উপজেলার পাথরাইলে হলেও মরদেহ পাওয়া যায় বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নলশোঁধা নামক গ্রামের পরিত্যক্ত একটি স্থানে। কাপড় শোকানো বাঁশের একটি আড়ার সাথে নিজের ওড়না পেঁচানো অবস্থায় পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহত নুপুরের স্বজনসহ স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে, নুপুরের মৃত্যু কি আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিতভাবে নুপুরকে হত্যা করে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছিল।
সেদিন ছিল ১৭ মে বুধবার। একই বিছানায় শিশুসন্তানসহ পুত্রবধূ নুপুর শুয়েছিলেন শাশুড়ি শিরিন বেগমের সাথে। একই ঘরে পাশের খাটে শিরিন বেগমের ভাগিনা টাঙ্গাইল সদরের কাতুলী গ্রামের মিথুন ও ভাতিজা রাব্বি নুপুরের শ্বশুর আশোক আলীর সাথে শুয়েছিল। রাত পৌনে দুইটার দিকে নুপুরের শ্বশুর বাড়ি থেকে শাশুড়ি শিরিন বেগম উপজেলার টুকচানপুরে নপুরের বাড়িতে ফোন করে জানান, নুপুরকে পাওয়া যাচ্ছে না। ১৮ মে বৃহস্পতিবার সকাল বেলায় নুপুরের ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায় পাশের গ্রামে। পা মাটিতে লাগানো। হালকা একটি বাশের আড়ায় ঝুঁলানো তার দেহটি।জিহ্বা বের হয়নি। জুতো জোড়া পায়ের সামনে সাজানো। গলায় ফাঁসের চিহ্নমাত্র নেই। নাক, মুখ, গলা কোথাও বিন্দুমাত্র রক্ত বের হয়নি।
তবে পুলিশ নমুনার চেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনকে। থানা একটি অপমৃত্যু মামলা নিয়ে অপেক্ষা করছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য। ১৭ মে দুজন যুবক ওই বাড়ি এসে ওই ঘরে রাতে থাকলো। বাড়ির বৌকে পাওয়া যাচ্ছে না জেনেও রাতে ঘরে থাকা যুবক দুজন সকালেই উধাও। এখন পর্যন্ত পুলিশও তাদের জিঙ্গাসাবাদ করছে না। নুপুরের শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ নুপুরের সাথে কারো পরকীয়া ছিল। সাধারণ মানুষ ধারণা করছেন, পরকীয়া থাকলে রাতে দেখা করার জন্য তার নিজের মোবাইল ফোনটি যোগাযোগের জন্য সাথে নিয়ে বের হতো। অথচ নুপুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পুলিশ উদ্ধার করেছে নুপুরের ঘর থেকে।
ওই রাতে ওই বাড়িতে থাকা রাকিব পরকীয়া প্রমাণের জন্য নিহত নুপুরের ভাই আল আমিনের কাছে নুপুরের মোবাইল থেকে চ্যাট করা স্কিনসর্ট পাঠিয়েছে। ওইদিন রাত সাড়ে সাতটা থেকে রাত পৌনে দশটা পর্যন্ত দেলদুয়ার উপজেলায় প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি ও ধমকা হাওয়া ছিল। নিহতের পরিবারের দাবি, আবহাওয়ার এই অবস্থায় পরিবারের সবাই ঘরে থাকার কথা। যেহেতু ঘর একটি সবার সামনে চ্যাট করতে পারে না। চ্যাটের ওই আইডি ফ্যাক বলে তারা অভিযোগ করেন।
তারা আরও বলেন, নুপুর পরকীয়ায় আসক্ত প্রমাণের জন্য কেউ তার মোবাইল থেকে কোনো একটি আইডির সাথে চ্যাট করেছে। যার ভাষাগত কোনো মিল নেই।
নিহতের মা হেনা বেগম জানান, গত তিন বছর আগে দেলদুয়ার সদর উপজেলার টুকচানপুর গ্রামের চান মিয়া ও হেনা বেগমের মেয়ে নুপুরের সাথে পাথরাইলের আশোক আলীর ছেলে শিমুলের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে একটি সন্তানও আসে। নুপুরের স্বামী শিমুল দুবাই থাকেন। কয়েকদিন আগে ছুটি কাটিয়ে আবার দুবাই চলে গেছেন। তবে বাড়ির অন্তর্কোলহে নুপুরকে নিয়ে স্বামী শিমুল ছুটির বেশিরভাগ সময়টা ঢাকায় কাটিয়েছেন। গত বুধবার রাত পৌনে দুইটার দিকে নুপুরের শাশুড়ির ফোন পেয়ে জানতে পারেন নুপুরকে পাওয়া যাচ্ছে না। সকালে জানতে পারেন নুপুর ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন।
নিহত নুপুরের পরিবারের দাবি, তাকে মেরে পাশের গ্রামে রাতের কোনো এক সময় বাঁশের আড়ার সাথে তাকে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে একই ঘরে ১৮/১৯ বছরের দুজন যুবক আত্মীয় রাতে থাকার পর সকাল থেকে তাদের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ায় নুপুরের পরিবারে সন্দেহের তীর অনেকটাই তাদের দিকে। বাড়ির পাশে এতো জায়গা থাকতে এক কিলোমিটার দূরে গাছের পরিবর্তে দুর্বল একটি বাঁশের আড়ায় ফাঁস নেয়াকে নুপুরের পরিবার থেকে আত্মহত্যার পরিবর্তে হত্যার অভিযোগ এনেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ নুপুরের ঝুলন্ত মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নুপুরের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সেদিনই টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। তবে বিষয়টি রহস্যময় ও সন্দেহজনক। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।’
(ঢাকাটাইমস/২২মে/প্রতিনিধি/জেবি)
মন্তব্য করুন