সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে সাত সুপারিশ
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে দিকনির্দেশনা চেয়ে করা রিটের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করা হয়। ৪৬ পৃষ্ঠার এ রায়ে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাতটি সুপারিশ করা হয়েছে।
এক. রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি, যেমন- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। ওই মূলনীতি ও চেতনায় বিশ্বাসী ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে বিচারক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা যাবে না।
দুই. মেধাবী, প্রাতিষ্ঠানিক ও উচ্চতর পেশাগত যোগ্যতা সম্পন্ন, সৎ এবং আইনি জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।
তিন. বিচারক হতে আগ্রহী প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দিতে হবে। যাতে প্রধান বিচারপতি প্রার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারেন।
চার. পেশাগত জীবনে একজন ব্যক্তির অর্জিত দক্ষতা ও পারদর্শিতাকে প্রথমত বিবেচনায় নেয়া উচিত। ভারতের আইন কমিশনের ৮০ তম প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী একজন বিচারকের পরিপক্কতা পেশাগত অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে একটি বয়স সীমা ধরা হয়েছে। সেই হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক মনোনয়নের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৪৫ বছর হওয়া উচিত।
পাচ. প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের নিবন্ধিত আইনজীবীদের অগ্রাধিকার ও সুপারিশ ভিত্তিতে উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন। তবে উচ্চ আদালতের বৃহৎ পরিসরে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন নিবন্ধিত আইনজীবীর ক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে।
ছয়. জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তিন বছরের কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিচারককে উচ্চ আদালতের বিচারক হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা উচিত হবে না।
সাত. অধনস্তন আদালত থেকে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান যোগ্যতা হওয়া উচিত সততা। তবে মনে রাখা উচিত যে, একজন ব্যক্তি উচ্চ মেধা সম্পন্ন কিন্তু তিনি সৎ না। সেক্ষেত্রে তাকে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হলে তা হবে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। সুপারিশ করা ব্যক্তির মধ্যে দ্বিতীয়ত থাকতে হবে শিক্ষাগত যোগ্যতার সর্বোচ্চ প্রোফাইল, পেশাদারিত্ব, সততা এবং দক্ষতা।
গত ১৩ মে রিট আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিল বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রিট আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ২৮ আগস্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন আদালত।
রিটকারীর পক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন হাসান এম এস আজিম ও মির্জা আল মাহমুদ। এছাড়া আদালত অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সাত জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মতামত শোনে। এই সাত আইনজীবী হলেন- ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কিউসি, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও এ এফ হাসান আরিফ।
বিচারক নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী ২০১০ সালের ৩০ মে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৬ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল দেয়। রুলে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে বাছাই-প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা’ আনতে কেন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা তৈরি করা হবে না এবং নিয়োগের নির্দেশনা প্রণয়ন করে তা কেন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত বছরের ২৮ আগস্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখে।
(ঢাকাটাইমস/২২মে/এমএবি/জেডএ)