পুঁজির অভাবে দুর্দিন যাচ্ছে চিরিরবন্দরের মৃৎশিল্পীদের

মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২৩ মে ২০১৭, ০৯:২৫

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার মৃৎশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় পুঁজি অভাবের পাশাপাশি বাজার দর, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা আর কাঁচামালের অভাবে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। এর ফলে দুর্দিন কাটছে না এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের। ফলে বাধ্য হয়ে বাপ দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে নতুন পেশা বেছে নিতে হচ্ছে তাদের।

জানা গেছে, এক সময় চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের রানীরবন্দরহাট সংলগ্ন নশরতপুর পাল পাড়ার প্রায় ৯০টি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। বর্তমানে প্রায় ১৭ থেকে ১৮টি পরিবার কোনোরকমে এই পেশাটি আঁকড়ে ধরে আছে। বর্তমানে অ্যালুমেনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এবং কাঁচামাল, বাজার দর ও প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে মাটির তৈরি তৈজসপত্র টিকতে পারছে না।

চিরিরবন্দরের নশরতপুর পাল সম্প্রদায়ের বিরাট একটি অংশ মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা এলাকায় কুমার বা পাল নামে পরিচিত। অভাব অনটনের মধ্যে ও হাতে গোনা কয়েকজন বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছে। তাদের অবস্থা অনেকেরই শোচনীয়। এসব কুমারের মধ্যে অনেকেই ভূমিহীন।

অনেক মৃৎশিল্পী অভিযোগ করেন, কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয় না। কেউ জানতে চায় না, তাদের সুখ-দু:খের কথা।

ওই গ্রামের শেফালী রাণী পাল, সুবল চন্দ্র পাল, ওমল চন্দ্র পাল,ওতুল চন্দ্র পাল, বিমল চন্দ্র পাল, ছবি রাণী পাল জানান, হাড়ি-পাতিল ও অন্য সব জিনিসপত্র তৈরি করতে কাঁচামাল হিসেবে এঁটেল মাটি লাগে। গ্রামের পার্শ্ব দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদী থেকে এই মাটি সংগ্রহ করা যেত। বর্তমানে নদী ভরাট ও ভূমিদস্যুদের কারণে ইছামতি নদী থেকে আর মাটি তোলা হয় না। তাই পাশ্ববর্তী ১০ কিলোমিটার দুর থেকে মাটি কিনে আনতে হয়। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাটির সামগ্রী তৈরি করে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে ব্যবহার যোগ্য করে সেগুলো চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে বিক্রি করা হয়।

তারা আরও জানান, জ্বালানি খড়ির দাম বেশি হওয়ায় ভাটা পুড়ে মাল বিক্রি করে নামমাত্র লাভ হয়। এ লাভ দিয়ে সংসার চলে না। বাপ-দাদার পুরোনো পেশার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশা ধরে আছি।

কথা হয় অনিল পাল, সুদেব পাল, মহাদেব পালসহ অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, কাঁচামাল, পুঁজির অভাব ও প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় বর্তমানে আমাদের দুর্দিন চলছে। কুমারদের দাবি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে মৃৎশিল্পকে পুনজ্জীবিত করা সম্ভব। তাহলেই পাল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই পেশা রক্ষা হবে।

ঢাকাটাইমস/২৩মে/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :