বেড়ায় উন্মুক্ত স্থানে কয়লার ব্যবসা, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

খাইরুল ইসলাম বাসিদ, পাবনা থেকে
| আপডেট : ২৩ মে ২০১৭, ১১:০১ | প্রকাশিত : ২৩ মে ২০১৭, ১০:৫০

পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাট ও রঘুনাথপুরে প্রায় নয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে তুলেছে কয়লার আড়ৎ। প্রতিদিন জাহাজে করে এসব আড়তে কয়লা আসে। এসব কয়লা শ্রমিকদের সহায়তায় আশেপাশের প্রায় দুইশ বছরের আবাসিক পল্লীতে স্তুপ করে রাখা হয়। সড়কের পাশে খোলা জায়গায় এসব কয়লা স্তুপাকারে রেখে দেয়ায় কয়লার গুঁড়া বাতাসের সাথে মিশে আশেপাশের পরিবেশ দূষিত করছে। সেইসাথে এর সাথে জড়িত শ্রমিক ও পার্শ্ববর্তী বসবাসরত মানুষ ও ফসলি ক্ষেত বিনষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যমুনার নির্মল পরিবেশ যেখানে মানুষের মনে প্রশান্তি বয়ে আনার কথা তার বদলে এখন শুধুই কয়লার স্তুপ। আর বাতাসের সাথে মিশে আছে পিট কয়লার গন্ধ। আশেপাশের রাস্তাসহ মাটিতে শুধুই কালো রং। গাছপালা ঢেকে আছে কয়লার আস্তরণে। অধিকাংশ শ্রমিক কোনো মাস্ক ব্যবহার না করায় ফুসফুসের মারাত্মক রোগসহ অ্যাজমা এমনকি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

কয়লা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যশোরের নওয়াপাড়া গ্রুপ ইন্দোনেশিয়া থেকে চট্রগামে কয়লা আমদানি করে সেখান থেকে কার্গো জাহাজের মাধ্যমে নগড়বাড়ী বন্দরে নিয়ে আসে। এখানে সোহেল ট্রেডার্স, আমান ট্রেডার্স, ভুইয়া ব্রাদার্স, জয়েন ট্রেডিং নওয়াপাড়া ট্রের্ডাসসহ সাতজন কয়লা ব্যবসায়ী এখানে কয়লার ব্যবসার করে। তারা উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ইট ভাটাতে প্রতি টন গড়ে ছয় হাজার টাকা দরে এ কয়লা বিক্রি করছে। কয়লা ব্যবহারকারীদের আগে যেখানে সিলেট থেকে কয়লা কিনতে হতো এখন তারা হাতের কাছে কয়লা পাওয়ায় এখানেই ভিড় করছেন।

কয়লার চাহিদা বাড়ায় একদিকে আমদানি বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে কয়লার স্তুপ। আশেপাশের ফসলি জমিতে স্তুপ হচ্ছে কয়লা। চাষিরা কৃষি জমি তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন কাঁচা টাকার লোভে। এতে কৃষিজমি কমার পাশাপাশি ঊর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে।

রঘুনাথ পুর গ্রামের বাসিন্দা শাজাহান শেখ বলেন, আমার বাচ্চার পড়ে হরিণাথপুর মডেল হাইস্কুলে। কিন্তু তারা এ পথ দিয়ে চলতে পারছে না।

নগড়বাড়ী নৌবন্দরের কয়লা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সোহেল ট্রেডার্স স্বত্বাধিকারী সোহেল শেখকে তাদের ব্যবসায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো সনদ আছে কি না জিজ্ঞ্যেস করলে জানান সনদপত্র আছে। কিন্তু তিনি দেখাতে পারেননি।

কয়লা শ্রমিক নাজিমুদ্দিন জানান, জাহাজ থেকে প্রতিটন কয়লা খালাস করার জন্য চুক্তি হয়। প্রতিদিন দুই তিন টন কয়লা খালাস করা হয়। এতে গড়ে প্রতি নারী পুরুষ শ্রমিক ৮০-৮৫ টাকা হাজিরা পান।

শ্রমিক আল আমীন ও হাজেরা খাতুন বলেন, কয়লা খালাস করায় যে ক্যানসার বা যক্ষ্মারোগ হতে পারে তা জানা ছিল না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাবনার উপ পরিচালক বিভুতি ভূষণ সরকার ঢাকাটাইমসকে বলেন, জমিতে কয়লার স্তর জমলে অবশ্যই ফলন কম হবে। কারণ মাটি এতে ঠিকমত প্রাকৃতিক খাদ্য ও বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করতে পারবে না। ফলে গাছ বিবর্ণ হতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী আবাসিক এলাকা বাদ দিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় এ ব্যবসা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :