প্রাথমিকের শিক্ষক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি: শিগগির তদন্ত
ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি নজরুল ইসলামের কর্মকাণ্ডে ফুঁসে উঠেছে ওই স্কুলের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকসহ এলাকার সচেতন মানুষ। উষ্মা প্রকাশ করে ফেসবুকে বক্তব্য দিচ্ছেন ওই স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
বিশেষ করে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাটাইমসে ওই বিদ্যালয়-সংক্রান্ত ‘প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত ১৮ মে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ওই স্কুলের সাবেক ছাত্র, কর্মরত শিক্ষক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ এলাকার বহু সচেতন মানুষ প্রতিবেদনটি তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন। অনেকে প্রতিবেদনটি ফটোকপি করে গাজীপুর সদর উপজেলাসহ জেলা শহরে বিলি করেন।
নজরুল ইসলাম গাজীপুর সদর উপজেলার সাত নম্বর পিরুজালী উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তিনি ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।
গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ইকবাল শিকদার ফেসবুকে স্কুলটি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘লজ্জাহীনদের দখলে প্রিয় বিদ্যালয়।’ গাজীপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান আল মাহমুদ লিখেছেন, ‘সময়ের সেরা নোংরামি। নষ্টদের দায় নিতে হচ্ছে প্রিয় বিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষকদের। জেলার মেধাবী শিক্ষকবৃন্দ এই বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন। অথচ একটা লোকের কারণে সবাই প্রশ্নবিদ্ধ। ফলাফল বিপর্যয়ে বিপন্ন প্রতিষ্ঠান, দিশেহারা প্রজন্ম।’ভাওয়ালগড় ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন লিখেছেন, ‘হঠাও দুর্নীতিবাজ বাঁচাও দেশ, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশ।’ ওই স্কুলের সাবেক ছাত্র কবি, লেখক ও সাংবাদিক শাহান সাহাবুুদ্দিন সম্প্রতি ওই স্কুলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে ‘ফুল বাগানে পাগলা হাতি’ শিরোনামের একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।
ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তদন্তে নামার কথা ভাবছে স্থানীয় শিক্ষা অফিস। গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘ঢাকাটাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমি পড়েছি। আমি ওই স্কুলের সভাপতি নজরুল ইসলামের ব্যাপারে সম্প্রতি মৌখিক অভিযোগ শুনেছি। কিন্তু কেউ আমাকে লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ করেনি। তাই ব্যবস্থাও নিতে পারিনি। তবে প্রকাশিত রিপোর্টটি আমলে নেয়া হচ্ছে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনমতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের অন্য কোনো বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ব্যাপারে (নজরুল ইসলাম) তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কিছু না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান গাজীপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম। চলতি বছর ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক অন্য কোনো বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে থাকতে পারেন কি না জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি আমি জানি। তবে হাইস্কুলের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো প্রজ্ঞাপন নেই।’ তবে কি প্রাইমারি স্কুলের জন্য এক সরকার আর হাইস্কুলের জন্য আরেক সরকার- এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি পাশ কাটিয়ে যান।
তবে সরকারি প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেন গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, ‘উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কি সরকারি প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি জানেন না! প্রাইমারি স্কুলে না পড়ে কি হাইস্কুলে ভর্তি হওয়া যায়!’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, গাজীপুর সদর উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে নজরুল ইসলামের। তাই নজরুল ইসলাম মিডিয়াকে থোড়াই কেয়ার করেন।
(ঢাকাটাইমস/২৩মে/মোআ)
মন্তব্য করুন