সংঘর্ষ-হামলায় রামগতির তিন ইউপি নির্বাচন সমাপ্ত, আহত শতাধিক

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৭, ২২:১২

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের হামলা-সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার উপজেলার চরআলগী, বড়খেরী ও চরআব্দুল্লাহ ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। হামলা ও সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ ও প্রার্থীসহ আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কয়েকশো রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ অন্তত আটজনকে আটক করেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১১টার দিকে বড়খেরী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থী মোশারেফ হোসেনের (প্রতীক-মোরগ) সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে। এ সময় প্রতিপক্ষ প্রার্থী মো. মিজানের (প্রতীখ-টিউবওয়েল) সমর্থকরা বাধা দিলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে প্রার্থী মিজান, তার সমর্থক জাহাঙ্গীর, মমিন, হান্নান, দিদার ও পুলিশ সদস্য সোহাগ রানাসহ অন্তত ১৩ জন আহত হন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ প্রায় ২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

একই সময় ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে সদস্য প্রার্থী বেলাল হোসেনের সমর্থকরা। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জমির আলী ও মাসুমের সমর্থকরা বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধলে বেলালের লোকজন জমির আলী ও তার ভাই জহিরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। এ সময় পুলিশ ও সদস্য প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইমাম হোসেন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার রিয়াজ উদ্দিন ও মো. জহির গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ২১ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

এসময় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আহমেদ মিজানুর রহমান ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দুই ঘণ্টা পর পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে চরআলগী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মধ্য চরআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে অন্তত ৮ জন আহত হন।

এদিকে, দুপুর ১টার দিকে চরআলগী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মদিনাতুল উলুম কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেন লিটন চৌধুরীর এজেন্টরা ভোটারের হাত থেকে চেয়ারম্যান প্রতীকের ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারছেন। এ সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে তারা সটকে পড়েন।

একই সময় ওই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব চরআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।

একই সময় ২ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর পূর্ব চরসেকান্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থী মো. নিজাম উদ্দিনের (প্রতীক-ফুটবল) লোকজন ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লাঠি-সোটা নিয়ে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে। এ সময় অপর সদস্য প্রার্থী হেলাল উদ্দিনের (প্রতীক-মোরগ) সমর্থকরা বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এর আগে ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সদস্য প্রার্থী নিজাম উদ্দিনকে আটক করেন।

এছাড়া বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গেলে সদস্য ও নারী সদস্য প্রার্থীর এজেন্টরা জাল ভোট প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

তবে, রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জাকির মাহমুদ দাবি করেন, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। যে সব কেন্দ্র থেকে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করে বলে তিনি জানান।
      
(ঢাকাটাইমস/২৩মে/প্রতিনিধি/ইএস)