ধর্মকর্ম আর পীর-মুর্শিদে ব্যস্ত কর্নেল অলি
বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম। বিএনপি সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা এই প্রভাবশালী রাজনীতিক এখন নিজের দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক তার দল। বর্তমানে জোটের কোনো কর্মসূচি না থাকায় রাজনীতিতে তেমন ব্যস্ততা নেই এই মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিকের।
তার বেশির ভাগ সময় কাটে ঢাকার ডিওএইচএসের বাসায়। মাঝে মাঝে নিজ শহর চট্টগ্রামে যান। এরই মাঝে পীর-মুর্শিদদের খানকা জিয়ারতসহ ধর্মকর্ম সারেন এই সেনা কর্মকর্তা।
এর বাইরে সেনাবাহিনীর অভ্যস্ত ছকেবাঁধা জীবন যাপন করছেন কর্নেল অলি। নিয়মিত গলফ খেলা, পরিবারকে সময় দেয়া, চলমান ঘটনাবলি নিয়ে বই লেখার প্রস্তুতি, গুরুত্বপূর্ণ খবরের পেপার কাটিং সংগ্রহ কিংবা দেখা করতে আসা নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবরে সময় কেটে যায় তার।
অলি আহমদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে চট্টগ্রামের ষোলশহরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ছিলেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে অবসর নেন। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কর্নেল অলি আহমদ বিএনপিতে যোগ দেন। ওই বছরের মার্চে চট্টগ্রাম-১৩ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জেনারেল জিয়ার মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। এরপরে একই আসন থেকে আরও চার দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অলি আহমদ।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠদের একজন কর্নেল অলি।
১৯৮৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে দলের সঙ্গে মতভেদ সৃষ্টি হলে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর অলি আহমদ বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে গঠন করেন বিকল্পধারা। পরে ওখান থেকে বেরিয়ে এলডিপি গঠন করেন তিনি। সেই থেকে নিজের প্রতিষ্ঠিত দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মাঝে ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নবম সংসদ নির্বাচনে এলডিপি থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন অলি আহমদ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। অলি আহমদকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি করা হলেও ২০১২ সালে সেখান থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এলডিপির সারা দেশে খুব বেশি জনসমর্থন না থাকলেও অলি আহমদের এলাকা চট্টগ্রাম বিভাগে দলের কিছুটা প্রভাব আছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই এলাকা থেকেই নিজেদের বেশির ভাগ প্রার্থী দাঁড় করানোর চিন্তা আছে বলে জানা গেছে।
তবে মাঝে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল অলি আহমদ বিএনপিতে ফিরে যাচ্ছেন। পরে সেই গুঞ্জন তিথিয়ে আসে। কর্নেল অলির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেন না। আপাতত তার বিএনপিতে ফেরার সম্ভাবনা কম বলে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এলডিপির শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিএনপিতে ফেরার বিষয়টি নিয়ে আগে কথাবার্তা থাকলেও তা আর বেশি দূর যায়নি। যতটুকু জানি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও খন্দকার মাহবুব হোসেন চেয়ারম্যানের বাসায় গিয়ে এ বিষয়ে কথাও বলেছিলেন। এরপরে আর কোনো অগ্রগতির খবর জানা নেই। ’
এলডিপির নেতা আরো বলেন, ‘গত নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে এলডিপির জন্য ভালো অফার ছিল, এমনকি সরকারি চাপও ছিল। কিন্তু জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন বর্জন করেছি। তাই সামনের নির্বাচনে জোটে দল মূল্যায়ন পাবে এই আশা করি। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি।’
নিজের সার্বিক ব্যস্ততা নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ।
বলেন, ‘নিয়মিত নামাজ পড়ি, কোরআন-সুন্নাহমতো জীবন যাপন করার চেষ্টা করি। সকালে নিয়মিত বাসার সামনে পার্কে হাঁটি। রাত ১২টা পর্যন্ত সারা দেশের যেকোনো জায়গা থেকে আসা নেতাকর্মীরা যেসব সমস্যা নিয়ে আসে তা সমাধান করার চেষ্টা করি। বিশেষ করে অনেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য, অনেকে আসেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ নিয়ে। সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। এ ছাড়া নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি।’
অবসরে মাঝে মাঝে কুর্মিটোলায় গলফ খেলতে যান অলি আহমদ। বলেন, ‘সন্ধ্যার পরে কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি বা নেতাকর্মী এলে তাদের সাক্ষাৎ দেই, বছরে দু-একবার ওমরা পালন করতে যাই, আজমির শরিফ যাওয়া হয়। এ ছাড়া বার্মায় আমার পীরের দরবার জিয়ারত করতেও যাওয়া হয়।’
দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকলেও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন কর্নেল অলি। ‘আমি অন্তত ১৫ দিনে একবার আমার ছেলে, মেয়ে, মেয়েজামাই, নাতি-নাতনিসহ সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি। এতে অনেক আনন্দ পাই।’ বলেন তিনি।
আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে দল প্রস্তুত বলে জানান এলডিপির চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এক-দেড় বছর আগে থেকেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা নিয়মিত কাজ। তাই এ জন্য বিষয়টি সামনে নিয়ে আসি না। মোটকথা আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে।’
(ঢাকাটাইমস/২৪মে/বিইউ/মোআ)
মন্তব্য করুন