নির্বাচনী হাওয়া

ভূমিমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আ.লীগেরই চার নেতা

খাইরুল ইসলাম বাসিদ, পাবনা
| আপডেট : ২৫ মে ২০১৭, ১১:১৪ | প্রকাশিত : ২৪ মে ২০১৭, ১০:০৪

সন্ত্রাসের মামলায় পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রীর শামসুর রহমান খান শরীফের ছেলে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তোলপাড় এলাকায়। এই ঘটনাটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রীক আলোচনাকে আরও জোরাল করে তুলেছে।

ভোটের দেরি এখনও কমসে কম দেড় বছর। এরই মধ্যে ভোটকেন্দ্রীক হাওয়া বইতে শুরু করেছে এলাকায়। অনেকেই নিজেদের নামে পোস্টার ও বিলবোর্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ রাজনীতির মাঠে ময়দানে ঘুরে দলীয় নেতা কর্মীদের কাছে সমর্থন চাইছেন।

আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে আসনটিতে। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে তার জামাতার বিরোধে অনেকটাই বেকায়দায় আওয়ামী লীগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ভূমিমন্ত্রী ছাড়াও মেয়ে জামাই ও ঈশ্বরদী পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে আসা সাবেক সংসদ সদস্য পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবিউল আলম বুদুর নাম উঠে এসেছে।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল বলেন, ‘মনোনয়ন আওয়ামী লীগের যে কোন নেতাই চাইতেই পারে। তবে সৎ যোগ্য, ত্যাগী নেতা এবং এলাকায় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়নের জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে তালিকা পাঠানো হবে।’

পাবনা-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এখন পর্যন্ত ছয়বার নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। প্রবীণ এই নেতা ১৯৭৯ সাল থেকে এখন অবধি তিনি নির্বাচিত হয়েছেন চার বার।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। বাদ পরে যান তৎকালীন ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডিলু। অল্প ভোটে হেরে যান হাবিব। পরে ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে দল বদল করে হাবিব আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেন। আর কপাল খুলে যায় ডিলুর।

তবে হাবিব বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। ঈশ্বরদীর তৎকালীন সংসদ সদস্য সিরাজ সর্দারের সঙ্গে মনোনয়ন নিয়ে ঝামেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করেন তিনি। বিএনপির এই কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে সহজে জিতে যান ডিলু।

এরপর ২০০১ ও ২০০৮ ও সবশেষ ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে জিতেন ডিলু। তবে একাদশে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন তিনি। একদিকে বয়সের ভার অন্যদিকে পরিবাওে বিরোধ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের পাশাপাশি ও দলীয় কর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ কারণে দলের একটি অংশ প্রকাশ্যেই বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তার।

এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবিউল আলম বুদু ও পাঞ্জাব বিশ্বাস।

স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা লিটন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিমের খুবই ঘনিষ্ঠ। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা বাহাউদ্দিন নাছিম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি কাউসার মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথও লিটনের পক্ষে আছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে।

ঈশ্বরদী পৌর সভার মেয়র ও মন্ত্রী ডিলুর মেয়ের জামাই আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ভেতরে ভেতরে মনোনয়নের তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে একটি সূত্র জানায়।

ভূমিমন্ত্রীর গৃহবিবাদে সাধারণ মানুষও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ বিরোধ মূলত জামাই-শ্বশুরে। তাদেও প্রায় নিয়মিত বিবাদে ঈশ্বরদী আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে। ঘটছে হামলা-ভাঙচুর, চাঁদাবাজিসহ হত্যার মতো ঘটনা। জামাই না শ্বশুর কে বেশি ক্ষমতাধর এলাকায় এর প্রদর্শন চলছে। উভয় পক্ষই প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন, হামলা-ভাঙচুরসহ নানাভাবে পেশীশক্তির ব্যবহার করছে। আধিপত্য বিস্তারের কারণ হিসেবে আগামী সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে। ভূমিমন্ত্রীর গৃহবিবাদে সৃষ্ট নৈরাজ্যে ঈশ্বরদীতে দলীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অতিষ্ঠ হয়ে পড়ার বিষয়ে পাবনা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা রেজাউল রহিম লাল বলেন, ‘সন্ত্রাসী যেই হোক, যত ক্ষমতাশালিই হোক থাকেন তাকে আইনের আওতায় বিচার করা হবে।’

বিএনপিতে আলোচনা দুজনকে নিয়ে

বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসলেও গতবারের মত মাঠ ফাঁকা রাখছেন না নেতারা। দলের সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদার, আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যাওয়া হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থকরাও সক্রিয় আছেন এলাকায়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবু তালেব ম-লকে প্রস্তুত করছে দলটি। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় আলাদাভাবে নির্বাচন করতে না পারলেও জোটের শরিক হিসেবে দলটি ভোটে অংশ নিতে পারবে। তবে তারা তাদের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা পাবে না।

আগামী সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তোতা বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় হাবিবুর রহমান হাবিব ও সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম সরদার এই দুই জনের মধ্যে একজন মনোনয়ন পেতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হবে। তবে যাকেই দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাকেই জয়যুক্ত করতে কাজ করতে হবে।’

ঢাকাটাইমস/২৩মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :