সেই শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

প্রকাশ | ২৪ মে ২০১৭, ১৩:৩৩ | আপডেট: ২৪ মে ২০১৭, ২২:৩১

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে কান ধরিয়ে উঠবস করাতে বাধ্য করা নারায়ণগঞ্জের বন্দর পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে একটি আদালত। এমপিওভুক্ত করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে এক শিক্ষিকার কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে এই পরোয়ানা জারি হয়।

ওই শিক্ষিকার করা মামলায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বুধবার নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত এই পরোয়ানা জারি করেন। শ্যামল কান্তি তার বিরুদ্ধে মামলার পেছনে প্রভাবশালীদের ইন্ধন আছে বলে অভিযোগ করেছেন। তার আইনজীবী জানিয়েছেন, শ্যামলকান্তিকে আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিনের আবেদন করবেন তারা।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেয়ার জন্য তার কছে থেকে প্রথমে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন শ্যামল কান্তি ভক্ত। পরে ওই শিক্ষিকার কাছ থেকে আরও  এক লাখ টাকা নিলেও মোর্শেদা বেগমকে এমপিওভুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেননি শ্যামল। এই ঘটনায় গত বছরের ২৭ জুলাই মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। পরে আদালত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বন্দর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

গত ১৭ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের অভিযোগ তুলে শ্যামলকান্তিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ২০১৬ সালের ১৩ মে কান ধরিয়ে ওঠবস করান। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনার পর বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ শ্যামলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।

পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। আর তিনি চাকরি ফিরে চান। বিচারিত তদন্তে দেখা যায়, তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

কান ধরে উঠ-বসের ঘটনার দুই মাসের মাথায় ১৪ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থীকে মারধর ও শিক্ষক মোর্শেদাকে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তিনটি মামলার আবেদন হয় নারায়ণগঞ্জের আদালতে।

আদালত ওই দিন বিকেলে শুনানি শেষে প্রথম দুটি মামলা খারিজ করে দেয়। আর ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমকে প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারক।

শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষিকার করা মামলাটিতে পুলিশের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ।’

আসামি শ্যামল কান্তির আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, ‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে একটি প্রভাবশালী মহল কাজ করছে। তার লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ওই প্রভাবশালী মহল জড়িত। ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিএমএম আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তাই তাকে হেয় প্রতিপন্ন এবং হয়রানি করার জন্যই এই মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে তাকে আত্মসমর্পণ করিয়ে ন্যায়বিচারের জন্য আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’

এ ব্যাপারে শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্ত বলেন, একটি প্রভাবশালী কর্তক আমি লাঞ্ছিত হওয়ার পর ওই প্রভাবশালী মহলটি আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এই শিক্ষাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে।

এই শিক্ষক বলেন, ‘যে সময় ঘুষ নেয়ার কথা মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে সে সময় স্কুল শীতকালীন ছুটি ছিল। ছুটির দিনে আমি কেন স্কুলে যাব এবং তিনি কীভাবে স্কুলে এসে আমাকে ঘুষ দিলেন?’। তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী মহলকে খুশি করতেই পুলিশ আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েয়েছেন। এই আদালতেও আমি ন্যায় বিচার পেলাম না ওই প্রভাবশালীদের কারণেই।’

শ্যামল কান্তিকে কান ধরিয়ে ওঠবস করার এই ঘটনায় হাইকোটের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি সাংসদ সেলিম ওসমান ও অপু প্রধানকে দায়ী করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। পরে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জামিন নেন।

ঢাকাটাইমস/২৪মে/প্রতিনিধিডব্লিউবি