আত্মসমর্পণের পর কারাগারে শিক্ষক শ্যামল কান্তি

প্রকাশ | ২৪ মে ২০১৭, ১৭:১৩ | আপডেট: ২৪ মে ২০১৭, ১৮:২৬

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে কান ধরিয়ে উঠবস করতে বাধ্য করা নারায়ণগঞ্জের বন্দর পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম অশোক কুমার দত্ত এই আদেশ দেন। সকালে একই আদালতে শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। বিকাল চারটার দিকে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে করা মামলার বাদীপক্ষ তার বিরোধিতা করে। দুই পক্ষের শুনানি শেষে এই শিক্ষককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

আদালতের এই আদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্যামলকান্তির ভক্তের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, ‘আজকে যে ঘটনাটি ঘটল, এটি নারায়ণগঞ্জ আদালতের ইতিহাসের পাতায় কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই ঘটনায় আমরা আইনজীবী সমাজ ব্যাথিত। শিক্ষক সমাজ লজ্জিত। একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বা জনপ্রতিনিধি চাইলে একজন নিরীহ মানুষকে কীভাবে হয়রানি করতে পারি, নিগৃহীত করতে পারে, তা আবারও প্রমাণিত হল।’

ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের অভিযোগ তুলে শ্যামলকান্তিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ২০১৬ সালের ১৩ মে কান ধরিয়ে ওঠবস করান। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনার পর বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ শ্যামলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।

পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। আর তিনি চাকরি ফিরে চান। বিচারিত তদন্তে দেখা যায়, তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

কান ধরে উঠ-বসের ঘটনার দুই মাসের মাথায় ১৪ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থীকে মারধর ও শিক্ষক মোর্শেদাকে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তিনটি মামলার আবেদন হয় নারায়ণগঞ্জের আদালতে।

আদালত ওই দিন বিকেলে শুনানি শেষে প্রথম দুটি মামলা খারিজ করে দেয়। আর ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমকে প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারক।

এই মামলাতে বুধবার সকালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর শ্যামলকান্তি তার বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একটি প্রভাবশালী কর্তক আমি লাঞ্ছিত হওয়ার পর ওই প্রভাবশালী মহলটি আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এই শিক্ষাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে।

এই শিক্ষক বলেন, ‘যে সময় ঘুষ নেয়ার কথা মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে সে সময় স্কুল শীতকালীন ছুটি ছিল। ছুটির দিনে আমি কেন স্কুলে যাব এবং তিনি কীভাবে স্কুলে এসে আমাকে ঘুষ দিলেন?’। তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী মহলকে খুশি করতেই পুলিশ আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েয়েছেন। এই আদালতেও আমি ন্যায় বিচার পেলাম না ওই প্রভাবশালীদের কারণেই।

ঢাকাটাইমস/২৪মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি