সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রায়াল

তায়েব মিল্লাত হোসেন
 | প্রকাশিত : ২৪ মে ২০১৭, ১৮:১৫

তাঁবুর খুঁটি বা স্তম্ভ পাঁচখানি। এর একটি যদি ভেঙে পড়ে তবে তাঁবু আর তাঁবু থাকে না। কাবু হয়ে যায়। হালে তাঁবুর মতো করেই পাঁচের খাতায় নাম লিখিয়েছে দুনিয়ার রাষ্ট্ররাজিও। একটি দেশে তিনটি স্তম্ভ থাকতেই হয়। সংসদে, আদালতে, সরকারে সেই শর্ত পূরণ হয়। সভ্যতার উৎকর্ষ চরম রূপ নিয়ে চতুর্থ খুঁটি হয়ে হাজির আছে গণমাধ্যমও। আজকাল আবার পঞ্চম একটি স্তম্ভের আলামত স্পষ্ট।

তথ্যপ্রযুক্তির পাটাতনে দাঁড়ানো এই কলামের নাম সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মাধ্যমে পৃথিবীজোড়া জনতার সংযোগে বৈপ্লবিক বদল এসেছে। মুঠোর মাঝে থাকা ফোন যেই অমল আঙুলের পরশ পেল, অমনি করেই জগৎজোড়া যেন এক জাতি হয়ে পড়ছে মানুষ। একটি বিশ্বগ্রামেই যেন আমাদের ঘরবসতি। হাতের ফোনে, হাঁটুর ল্যাপটপে, টেবিলের কম্পিউটারে যোগাযোগের পসরা সাজিয়ে আছে অজস্র সামাজিকমাধ্যম। এর জন্য অবশ্যই আন্তর্জালিক ব্যবস্থা থাকতে হয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যদি না থাকত, তবে আর নেট ঘাঁটার কার এত নজর থাকত। ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।

সেই যাই হোক বঙ্গমুলুকে কিন্তু মার্ক জাকারবার্গ সাহেবের প্রতিপত্তি বেশি। কারণ তিনিই যে ফেসবুকের জনক। দুনিয়ার আরো অনেক দেশকেন্দ্রের মতো ঢাকায়ও আলোচিত অনেক বিষয়ের জনপ্রিয়তার পেছনে এই সামাজিক মাধ্যমটি হাত রাখছে। এতে করে একটি লেখা, একটি ছবি, একটু ইয়ার্কি, একটু বিষাদ জনে জনে পৌঁছে যাচ্ছে। লাইকে, কমেন্টে ভেসে যাচ্ছে, হেসে যাচ্ছে ফেসবুক। এই হাসাহাসি, ভাসাভাসির পর ফেঁসে যাওয়ার বিষয়ও কিন্তু চলে আসছে। কারণ ফেসবুকে দেশ-দুনিয়া, রাজনীতি-অর্থনীতি, অপরাধ-দুর্নীতির অনেক বিষয় নিয়েও নাড়াচাড়া হয়। মজা হয়।

হল্লা হয়। রঙ্গব্যঙ্গ হয়। সঙ্গতি-অসঙ্গতিতে, তর্কে-বিতর্কে ঝড় আসে, বৃষ্টি আসে, বান আসে। মিম হয়। ভাইরাল হয়। এভাবে এভাবে এক কান, দুই কান করে শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে আড়ালের অনেক বিষয়। অনেক খবর। সেই খবর হয়তো গণমাধ্যম আড়ালে রাখতে চায়। কখনো দায়িত্বশীলতার কথা বলে। কখনো আবার জড়িয়ে থাকে ছাপোষা আপোসের ব্যাপার-স্যাপার। এই দায় নেই সামাজিক মাধ্যমের। ছাপাছাপির বেলায়ও নেই তেমন বিধি-নিষেধ। তাই জনৈক আলম হিরো আলম হয়ে উঠতে পারেন। যারা কোনো দিন সমুদ্রে যায়নি, তারাও চিনেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকতের ‘মধু হই হই’ জাহিদকে।

এই সব কারণে ফেসবুককে, ইউটিউবকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপসংহারে, অনুসিন্ধান্তে যেতে পারতাম আমরা। কিন্তু সমাপ্তিরেখা টানা যাচ্ছে না। প্রাথমিকের, মাধ্যমিকের সব রচনায়ই তো উপকারিতার পরে অপকারিতা টানতে হয়। আজকাল যে পড়া রেখে, কাজ ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অদরকারে ফেসবুকিং। ইউটিউবে দিনাতিপাত। এর দায় কে বা কারা নেবে? এই পর্যন্ত থামতে পারলেও ভালোই হতো। কিন্তু

মাজিকমাধ্যমকে যারা অসামাজিক কাজে, অপরাধকর্মের সিঁড়ি করতে চাইছে, তাদের জন্য কী লিখব, কী আর বলব? উন্মুক্ত এই মাধ্যমের বরাতে আবার অসম্পাদিত, অশীল, রাষ্ট্রাচারবিরোধী অনেক রচনা, স্থিরচিত্র আর ভিডিওর মেলা খেলা চলছে। এই বেলায় আমরা সম্পাদক পাব কই? কে হবেন সহ-সম্পাদক? সামাজিক মাধ্যমের আমজনতাকে আদৌ দায়িত্বশীল সাংবাদিক কাতারে নিয়ে আসা সম্ভব? নিয়ে আসা উচিত? এর সুরাহা কোথায়Ñ এ নিয়ে মেধাজীবীদের চুল পর্যন্ত নাকি অধুনা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে!

এই যখন অবস্থা, তখন মূলধারার গণমাধ্যমও বসে নেই। সামাজিক মাধ্যমকে তারাও পাত্তা দিতে শিখছে। ফেসবুকে সম্প্রচারিত তৃণমূলের কোনো একটি ঘটনা জাতীয় ইস্যুতে রূপ নিতে সময় নিচ্ছে না। কারণ তার লাইক-শেয়ারের জোয়ার বুঝে উচ্চ ও মাধ্যমিক গণমাধ্যমও রাতারাতি প্রচারে নামছে মানে প্রতিবেদন করছে। মতামত ছাপছে। সম্পাদকীয় করছে। আর যায় কোথায়! এবার বেসরকারি দূরদর্শন ঘাটগুলোর পালা। ক্যামেরা, বুমÑ আলোর ঝলকানি। প্যাকেজ, ওভ, টক শো। যাকে বলে এক্কেবারে ইঁদুর দৌড়। লোকরঞ্জনবাদে ধন্য হয় ঘটনা। রাষ্ট্রের আর সুযোগ কোথায় তা এড়াবার। বিষয়টা অপকর্মের হলে শত প্রভাবেও পার পাওয়ার আর সুযোগ থাকে না অপরাধীর। এটা ভেবে দেখলে সোশ্যাল মিডিয়ার পালে আপাতত হাওয়া দেয়াই যায়। রাজধানী ঢাকার বনানীর রেস্তোরাঁর ধর্ষকদের বিচার প্রক্রিয়াও তা সমর্থন করছে।

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :