সুপ্রিম কোর্টে আদালত-অ্যাটর্নি জেনারেলের কথার লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ মে ২০১৭, ২২:১৬ | প্রকাশিত : ২৪ মে ২০১৭, ২২:০৫

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি চলছে। এতে রাষ্ট্রের প্রধান কৌঁসুলির সঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের কথার লড়াই জমে উঠেছে। এর মাঝে যুক্তি তুলে ধরছেন রিটকারী আইনজীবীও।

বুধবার কথার লড়াই শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে এ শুনানি চলছে।

বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

গত ৮ মে পেপার বুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। আজ ষষ্ঠ দিনের মতো শুনানি হলো। শুনানির পুরো কথার লড়াই নিচে তুলে ধরা হলো।

ষষ্ঠ দিনের শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমরা আপনাকে বেশি প্রশ্ন করব না। কারণ যা-ই বলি তা মিডিয়াতে চলে যায়।’ বিচারক অপসারণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে গিয়ে যদি ব্যাখ্যা করেন, সেটা হবে কষ্টদায়ক। আজ ইংল্যান্ডের কী অবস্থা! আপনি লিখিত যুক্তিতর্কে অনেক কিছুই না জেনে লিখেছেন। যে আপনাকে অ্যাডভাইস করেছে সে জানে না।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমাকে কে অ্যাডভাইস করবে?

আপিল বিভাগ, এখানে আপনার টিম আছে। আমি আপনাকে অবমূল্যায়ন করছি না। আপনার ১৫৫ জন ল অফিসার রয়েছে। তাদের অনেকেই বিদেশে লেখাপড়া করেছেন। এই কারণে অ্যাডভাইসের কথা বলছি।

অ্যাটর্নি জেনারেল, বোঝার চেষ্টা করেন। আমরা ঘরে (বাহাত্তরের সংবিধান) ফিরতে চাই।

এরপর প্রধান বিচারপতির দেওয়া ইংল্যান্ডের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে লেখা একটি বই দেন। সে বই থেকে কিছু অংশ পড়ে শোনানোর একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি সাবমিশনে ইংল্যান্ডের...অনেক সাবমিশন দিয়েছেন। তা কি না জেনেই দিয়েছেন? পৃথিবীর একমাত্র সভ্য দেশ ইংল্যান্ড। যে দেশে অলিখিত সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন, ক্ষমতা হস্তান্তর হয়ে থাকে। চুল পরিমাণ এদিক-সেদিক হয় না। ব্রেক্সিটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কী চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা!

অ্যাটর্নি জেনারেল- ‘আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। ইংল্যান্ডকে সভ্য দেশ বলতে পারেন না। কারণ তাদের ইতিহাসই তো লুণ্ঠনের। ইংল্যান্ড বিদেশিদের লুণ্ঠন করেছে।

আপিল বিভাগ- ইংল্যান্ড লুণ্ঠন করেছে, আমেরিকা করে যাচ্ছে। আমি সভ্য দেশ বলতে বুঝিয়েছি গণতন্ত্র, আইনের শাসন, নাগরিকের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে।

অ্যাটর্নি জেনারেল- ইংল্যান্ডে ‘রুল অব ল’ বিকাশ ঘটেছে সেটা বলতে পারেন। কিন্তু সভ্য দেশ বলতে পারেন না।

আপিল বিভাগ- ওরা নাগরিকদের নিরাপত্তা দিয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল- অন্যদের লুণ্ঠন করে নাগরিকদের সুরক্ষা দিয়েছে।

আপিল বিভাগ- আদি সংবিধানে ফিরে যাবেন? আমেরিকার সংবিধানে তো আছে ‘উই দ্য পিপল’। সেখানে আগে দাসপ্রথা ব্যবস্থা চালু ছিল। এটা মাথায় রেখেই পরবর্তীতে পনের শতকের দিকে পরিবর্তন হয়েছে। এখন ইথিওপিয়া, মরক্কোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোক আমেরিকায় ভর করছে। এখন কি তারা আদি সংবিধানে ফিরে যাবে? আপনাকে সূক্ষ্মœভাবে প্রশ্ন করছি, এর উত্তর দেবেন।

আপিল বিভাগ- সমস্ত পাণ্ডিত্ব আমাদের, আপনাদের সবার। তবে বাহাত্তরের সংবিধানে হাত দেবেন না।

অ্যাটর্নি জেনারেল- এখানে তো অদক্ষ ও কতিপয় বিচারকের অসততার বিষয়টিও দেখতে হবে।

বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন- তাহলে কি বিচার বিভাগের বিকাশ ঘটবে না? জুডিশিয়াল রিভিউ থাকবে না? তাহলে জুডিশিয়াল রিভিউ উঠিয়ে দেন।

আপিল বিভাগ- সংবিধানের এ টু জেড আমরা ব্যাখ্যা করব। জনগণের অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা- আসলে আমরা সারা সংবিধান ব্যাখ্যা করব। জনগণের মৌলিক অধিকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর প্রশ্ন যখন আসবে, তখন আমরা সংবিধানের এ টু জেড দেখব।

অ্যাটর্নি জেনারেল- এটা ঠিক না। আপনারা যোগ করতে পারেন কেবল।

আপিল বিভাগ- আইনমন্ত্রী বলেছেন, আমি এত কথা বলি কেন?

অ্যাটর্নি জেনারেল- আইনমন্ত্রী কি বলেছেন সে বিষয়ে আমি জানি না।

আপিল বিভাগ- কথা বললে তো কথার পিঠে কথা আসবেই।

সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন, আপনি যেভাবে বলছেন যে, সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড পাওয়া গেছে। রায়ে তো সেভাবে নাই।

অ্যাটর্নি জেনারেল- কালকে একটি শব্দের ব্যবহারের কারণে গণমাধ্যম আমাকে খলনায়কে পরিণত করেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল- আপনার নিজেরই একটি রায় আছে।

আপিল বিভাগ- আমাদের রায়ের ফাইন্ডিংস কী আছে তা দেখতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে যাতে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি না হয় সেটার কারণেই বলা আছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল- সুপ্রিম জুডশিয়াল কাউন্সিল অবৈধ। যদি সেটা বাতিল করা হতো তবে ওই সময়ের বিচারও বাতিল হতো। ফলে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হতো।

অ্যাটর্নি জেনারেল- তৎকালীন টেকনোক্র্যাট আইনমন্ত্রী যিনি এই আদালতেরই একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের এক ধরনের সুবিধা দিতেই জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বাদ দিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছেন।

সাবেক আইনমন্ত্রী সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যে আপত্তি তুলে আপিল বিভাগ বলেন, তিনি টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ছিলেন। বারের নির্বাচিত দুবারের সভাপতি। তিনি অত্যন্ত সজ্জন ও ভদ্রলোক। তার মন্ত্রিত্বকালে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল।

আপিল বিভাগ আরও বলেন- সুপ্রিম কোর্টকে আন্ডারমাইন করবেন না। টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের নিয়ে এত কথা বলছেন, তাহলে কেন এ প্রথা রেখেছেন, কেন বাতিল করেননি? একটি শব্দ ব্যবহারের পূর্বে বুঝেশুনে করবেন। ইট মারলে পাটকেল পড়বে, এটা মনে রাখবেন।

যার কথা বলেছেন, তার যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনে অবদান রয়েছে। তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

অ্যাটর্নি জেনারেল- যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি রাজনৈতিক মেনিফেস্টোতে ছিল। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি না থাকলে এটা হতো না।

আপিল বিভাগ- এখানে আবার প্রধানমন্ত্রীকে টানছেন কেন? আপনি যদি গণতন্ত্র, আইনের শাসনের কথা বলেন, তাহলে ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের সভ্য দেশগুলোর দিকে তাকান। ভারতের বিচারক নিয়োগের কলেজিয়াম প্রথা বাতিল করে সরকার নতুন আইন করেছিল। সে আইন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে সংসদ কোনো টু শব্দ করেনি। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। সে দেশের সংসদ ও রাজনীতিবিদরা মাথা নিচু করে তা মেনে নিয়েছে। যে পাকিস্তানে সুবিধাভোগী সরকার থেকেছে বেশির ভাগ সেময়, সেই দেশেই সুপ্রিম কোর্টের কী রকম ভূমিকা তা দেখুন। কিন্তু আমাদের দেশে কী হয় তা দেখুন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন- আপনার এ আদালতে কী হচ্ছে? একটা গণশুনানি দরকার।

আপিল বিভাগ- কাদের নিয়ে?

অ্যাটর্নি জেনারেল- কেন, বিচারপ্রার্থীদের নিয়ে। তাদের জিজ্ঞাস করুন এখানে কী হচ্ছে।

আপিল বিভাগ- আগে কী ছিল জানি না। কিন্তু আমি বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের যে আস্থা সেটা ৯০ ভাগের উপরে। আমি কয়েক দিন আগে বাঁশখালী চৌকি আদালতে গিয়েছিলাম। সেখানে যে সংখ্যক বিচারপ্রার্থী ভিড় করেছে তা অবাক করার মতো। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিচার বিভাগ শতগুণ ভালো।

অ্যাটর্নি জেনারেল- আমি আপনার সব কথার সাথে একমত পোষণ করতে পারছি না।

আপিল বিভাগ- সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে প্রধান বিচারপতির কাছে দিতে পারতেন। এখন পর্যন্ত কি কোনো অভিযোগ দিয়েছেন?

আপিল বিভাগ- আপনি একমত পোষণ করতে পারবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এ আদালতে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো দরকার।

অ্যাটর্নি জেনারেল- আপনার সঙ্গে একমত।

আপিল বিভাগ- আমি দক্ষ, যোগ্য বিচারককে এখানে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলাম। যে কারণে গত দেড় বছরে কোনো বিচারক নিয়োগ হয়নি। আপনারা যা চাচ্ছেন সেটি হলে তো এ রকম হবেই।

অ্যাটর্নি জেনারেল- আমরা মূল সংবিধানে ফিরে যেতে চাই। এটি (সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান) সাংবিধানিক ইতিহাসে লজ্জা। আমেরিকা-ভারতে মার্শাল ল হয়নি। আমাদের এখানে হয়েছে। মার্শাল ল-র মাধ্যমে যতখানি হয়েছে ততখানি বাদ দিতে চাই। বিগত সময়ে পারিনি। ধর্মীয় বিষয় কিছু ছিল। রাস্তাঘাটে মারপিট লেগে যাবে। আপানারা তো অংশীজন। আপনাদের মতামত রাখার সুযোগ আছে।

আপিল বিভাগ- একটিতে আপোষ করতে পারলে অন্যটিতে নয় কেন?

অ্যাটর্নি জেনারেল- এখনো আইন হয়নি। আইনে সব বিস্তারিত আলোচনা হবে।

আপিল বিভাগ- স্টেকহোল্ডারদের মতামত না নিয়েই তো আপনারা আইন করে ফেলেছেন। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল- এখনো আইন পাস হয়নি। আপনারা আইন করার কথা বলতে পারেন।

এরপর রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানি করেন। তিনি বলেন, আমি হাইকোর্টে শুনানিতে সবকিছু বলেছিলাম। কিন্তু আপিলকারী এখানে এসে বলেছে, হাইকোর্টে রায়ে বিচারপতিরা নিজেরাই সব বলে দিয়েছে। আপিলকারীর এ বক্তব্য ঠিক না। এ কারণে এর জবাব না দিলে একই ঘটনা ঘটতে পারে। রায়ের পর অ্যাটর্নি বলবেন বিচারকরাই এ কথা বলে দিয়েছে।’

মনজিল মোরসেদ বলেন, ৭২-এর সংবিধানের ব্যাপারে যে সাবমিশন রাখা হয়েছে সেটা ভুল ব্যাখ্যা। একটি সদ্য স্বাধীন দেশে যে সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল, সেসময় কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না বলে এ বারের দুজন (ওই সময়ের মন্ত্রিসভার দুজন সদস্য) সদস্য বলেছেন। তখন করা সংবিধানে বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি সংসদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। এরপর অভিজ্ঞতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নিজেই অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে ফিরিয়ে নেন।

আপিল বিভাগ- আপনি কি ১১৬ এর কথা বলছেন?

মনজিল মোরসেদ- না, আমি ৯৬ অনুচ্ছেদের কথা বলছি। আমরা যে সংবিধানের কথা বলি, ১৯৭২ সালের সংবিধান- এটা বঙ্গবন্ধুর সংবিধান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে করা সংবিধান তিনি নিজেই চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তন করেছেন। বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা উচিত নয় সেটা বঙ্গবন্ধুরই সিদ্ধান্ত। যার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেই জাতির পিতাই অভিজ্ঞতার আলোকে সংবিধান সংশোধন করেছেন। এরপর বিচারপতি অপসারণ পদ্ধতিটাই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে।

মনজিল মোরসেদ বলেন, পঞ্চম সংশোধনী রায়ের আলোকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন আদি (১৯৭২ সালের সংবিধান) সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে না, অ্যাটর্নি জেনারেলের এই বক্তব্য ঠিক না। বঙ্গবন্ধু নিজেই চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এটা করেছেন। তবে শুধুমাত্র মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন করা যাবে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিচারক অপসারণের বিষয়টি তাড়াহুড়া করার কারণেই বাদ পড়েছে বলেছেন, তার এই বক্তব্যও ঠিক না। পঞ্চদশ সংশোধনী করার আগে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়েছিল। ওই কমিটি দেড় বছর ধরে সবার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সংশোধন এনেছিল। ওই সংশোধনীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন। তখনো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিলের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

মনজিল মোরসেদ বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করা যাবে না। এই ছিল পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রেক্ষাপট। এ থেকে প্রমাণ হয়, তারা জেনেশুনে বুঝেশুনেই পঞ্চদশ সংশোধনীতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান যুক্ত করেনি।

পঞ্চম সংশোধনীর মামলার রায়ে আপিল বিভাগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থাকে বৈধতা দিয়েছে এবং পরবর্তীতে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) রায়ে তা বহাল রাখা হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্যে বলেছেন, তাড়াহুড়া করার কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা বাদ পড়েছে- কিন্তু ওই পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস হওয়ার আগে পাঁচজন সাবেক প্রধান বিচারপতি ছাড়াও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিভিন্ন অংশীজনদের (স্টেকহোল্ডার) মতামত নেওয়া হয়। ফলে তাড়াহুড়ার কথা যেটা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, সেটি সঠিক নয় এবং খুবই দুঃখজনক। অ্যাটর্নি জেনারেলের এমন বক্তব্যে জাতীয় সংসদকে খাটো করা হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এমন বক্তব্য দিতে পারেন না।

ষোড়শ সংশোধনীর প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর পরপরই দেশে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। আদালত আবমাননার আইন করা হলো। অনেক সচিবকে আদালতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে আদালত অবমাননার আইন সংশোধন করে বলা হলো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাকা যাবে না। এর অর্থ হলো, এর ফলে তাদের মধ্যে আদালতের রায় না মানার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এরপর আমরা আদালত অবমাননার আইনটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে আদালত ওই আইনটি বাতিল করে দেয়। এরপর দুদক আইন সংশোধন করা হয়। যেখানে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অনুমোদন ছাড়া অভিযোগ করা যাবে না। চ্যালেঞ্জ করা হলে আদালত এই ধারাটিও বাতিল করে দেয়। এরপর নারায়ণগঞ্জে মর্মান্তিক সাত খুনের ঘটনা ঘটে। হাইকোর্ট আদেশ দিল। এর পরপরই সংসদে আলোচনা ওঠে, বিচারপতিদের নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করা হলো। সংসদে কেউ কেউ বললেন, ‘আমরাই বিচারপতিদের নিয়োগ দিয়েছি। তাদের অপসারণের বিষয়টি আমরাই সংসদে নিয়ে আসব।’ সচিবদের ডাকা, সাংসদদের জামিন না দেওয়া -এসব ধারণা থেকেই বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে আনার হুমকি দিল। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে ষোড়শ সংশোধনী আনা হলো। বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেওয়া হলো।

এরপর অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, পাকিস্তান, বুলগেরিয়াসহ যেসব দেশে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রয়েছে সেসব দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সংসদ সদস্যদের ফ্লোর ক্রসিং সংক্রান্ত ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে মনজিল মোরসেদ বলেন, এই ৭০ অনুচ্ছেদ থাকার কারণে সংসদে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটছে না। ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। জাতীয় সংসদে এই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন এই সংসদ সদস্যরা। কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদ থাকার কারণে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন না। ভয় একটাই, দলের বিরুদ্ধে মত গেলে সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।

শুনানির শেষ পর্যায়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, স্বাধীন বিচার বিভাগ আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরই অংশ। এটাতে হাত দেওয়া যাবে না। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে এতে আঘাত করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো আইন করা হলে সেটা বাতিল করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।

(ঢাকাটাইমস/২৪মে/এমএবি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

ড. ইউনূসকে স্থায়ী জামিন দেননি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল

সদরঘাটে লঞ্চ দুর্ঘটনা: আসামিদের তিনদিনের রিমান্ড

অরিত্রীর আত্মহত্যা: চতুর্থ বারের মতো পেছাল রায় ঘোষণার দিন, কী কারণ?

অরিত্রীর আত্মহত্যা: ভিকারুননিসার ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ

বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিকে হলের সিট ফেরত দেওয়ার নির্দেশ

আত্মসমর্পণের পর ট্রান্সকমের ৩ কর্মকর্তার জামিন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :