গুলশান-নিকেতনে ‘ফিক্সড প্রাইসে’ রিকশায় চড়া
নগর পরিবহনে বড় বা ছোট কোনো বাহনে যেখানে শৃঙ্খলার বালাই নেই, সেখানে গুলশান ও নিকেতন এলাকার রিকশাগুলো ব্যতিক্রম। এখানে ভাড়া নিয়ে যাত্রী-চালকে কোনো বাদানুবাদ নেই এখানে। নির্ধারিত ভাড়ায় চলেও রিকশা চালকদের আয় কমার বদলে বেড়ে গেছে এখানে।
এই এলাকায় নিবন্ধিত রিকশাগুলোই কেবল চলতে পারে। চালকদের পরিচয়পত্রও রয়েছে। হলুদ হুডের বাহনগুলোর পিছনে রয়েছে ভাড়ার তালিকা। প্রতিটি রিকশায় পরিচয় স্বরূপ নম্বর দেয়া হয়েছে এবং যেকোনো অভিযোগের জন্য রিকশার পিছনে দেওয়া আছে মোবাইল নম্বর।
এলাকাবাসী জানায়, মাঝে মধ্যে রিকশা চালকরা নির্ধারিত ভাড়ার বেশি বকশিস হিসেবে দাবি করেন। তবে পেছনের ফোন নম্বরে অভিযোগ করার কথা বললেই নির্ধারিত ভাড়ায় যেতে রাজি হন তারা।
চালকেরা এখানে সেফটি ভেস্ট পরে রিকশা চালান। তারা শুধু গুলশান-নিকেতন ছাড়া বনানী পর্যন্ত চলাচল করেন। এদের যেমন বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি বাইরের রিকশারও এই এলাকায় চলার অনুমতি নেই।
ভাড়া নিয়ে দরদামের ঝামেলা থেকে মুক্তি মেলায় খুশি গুলশান ও নিকেতনবাসী। তবে রিকশার অপ্রতুলতা নিয়ে কিছুটা সমস্যার কথা বলেছেন তারা। কারণ অনেক সময় রাস্তায় রিকশা পাওয়া যায় না।
রিকশায় শৃঙ্খলা আনায় লাভ হয়েছে রিকশাচালকদেরও। নিকেতন এলাকার রিকশাচালক সাদিক জানান, বাইরে রিকশা চালালে প্রতিদিন রিকশার মালিককে ১০০ টাকা জমা দিতে হত। তখন দিনশেষে তার হাতে তিন থেকে চারশ টাকা থাকতো। কিন্তু গুলশান-নিকেতনে জমার পরিমাণ বেশি হলেও আয়ও বেশি। দিনশেষে হাতে পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা থাকে বলেও জানান সাদিক।
সাদিক জানান, তার রিকশার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।
নিকেতনের বাসিন্দা রাজন যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশার ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, ভাড়া নিয়ে এখন আর চিন্তা করতে হয় না বলে এক দিন থেকে নির্ভার তিনি। তবে বৃষ্টির সময় রিকশা চালকরা কিছুটা বেশি ভাড়া দাবি করেন। আর বৃষ্টিস্নাত দিন বা বেশি গরম পড়লে এমনিতেই কয়টা টাকা বেশি ধরিয়ে দিতে আপত্তি থাকে না তার।
চাকরির খাতিরে প্রায়ই নিকেতনে আসেন সবুজ আলী। তিনিও জানান, চালকরা কখনও কখনও তার কাছে বেশি ভাড়া চেয়েছেন। তবে সেটা এমন বেশি নয় বলে তিনি অভিযোগ করেননি।
নিকেতন এলাকায় এই উদ্যোগটা নিয়েছে নিকেতন সোসাইটি। সোসাইটির একজন সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই যুগে মানুষ মানুষকে টেনে নিয়ে যাওয়া অমানবিকতা হিসেবে ধরা হলেও স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রিকশা এক বাস্তবতা। আর ভাড়ার ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা না থাকায় এ নিয়ে অকারণে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে ঝামেলা হতো। এই দিক বিবেচনা করেই তারা ভাড়া নির্দিষ্ট করেছেন।
আর চালকরা যেন না ঠকেন, যাত্রীদের ওপরও যেন চাপ না হয়, সেই দিক বিবেচনা করেই বাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চালকদের স্বার্থ যে রক্ষা হয়েছে, তার প্রমাণ তাদের আয় বেড়ে গেছে।
ঢাকাটাইমস/২৫মে/মোসাহো/ডব্লিউবি