‘ওরা ১১ জন’ ছবির ১৪ জনকে সম্মাননা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ মে ২০১৭, ২০:৫৯ | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০১৭, ১৯:৩৮

মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে সদ্য যুদ্ধফেরত একঝাঁক মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম চলচিত্র ‘ওরা ১১ জন’ ছবিটি ১৯৭২ সালে নির্মাণ করা হয়। এই ছবিতে শিল্পী ও কুশলীদের মধ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন এবং পরিচালনা ও লেখনীর মাধ্যমে ছবিটিকে দর্শকপ্রিয় করেছেন এ রকম ১৪ জনকে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর এফডিসির জহির রায়হান ভিআইপি প্রজেকশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি। পূর্ণদৈর্ঘ ছবিটিতে অভিনয় করেন খসরু, এ টি এম শামসুজ্জামন, রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, হাসান ইমাম, সুমিতা দেবী, খলিল, মিরানা জামান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ছবির কলাকুশলীদের আমার হাতে সম্মাননা জানাতে পারায় আমি গর্বিত। এটা যে সময়ের ছবি, আমি সে সময়ের সাক্ষী। `ওরা ১১ জন’ ছবিটি ইতিহাসের সাক্ষী।’

তথ্যমন্ত্রী চলচ্চিত্র আর্কাইভ সমৃদ্ধ করার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘চমৎকার আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ‘মুখ ও মুখোশ’ থেকে শুরু করে ‘ওরা ১১ জন’-এর মতো সব পুরোনো ছবি এমনভাবে সংরক্ষণ করেছি যে আগামী ৫০০ বছরেও সেগুলোর কিছু হবে না।’

`ওরা ১১ জন’ বানানোর গল্প বলতে গিয়ে ছবিটির প্রযোজক সোহেল রানা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম ‘ওরা ১১ জন’ ছবির শুটিং শুরু হয় এবং মুক্তি পায়। আজকের মতো আধুনিক প্রযুক্তি না থাকাতে এ ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।’

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাই এই ছবির মূল ভূমিকাগুলোতে অভিনয় করেছেন জানিয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘আর যেসব অস্ত্র-গোলা-গ্রেনেড ব্যবহৃত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফেরার পর আমাদের কাছেই ছিল সেগুলো।’

চলচ্চিত্রটির পরিচালক মরহুম চাষী নজরুল ইসলামের পক্ষে তার স্ত্রী জোৎস্না কাজী সম্মাননা গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের পর হঠাৎ বন্ধুবান্ধবরা আমার বাসায় এসে ছবিটি বানানোর পরিকল্পনার কথা জানান। ছবিটিতে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তাদের সবাই মুক্তিযোদ্ধা এবং কলাকুশলীদের মধ্যেও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অস্ত্রগুলোও আসল ছিল বলে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের।’ সবার সহযোগিতা পেলে চাষী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চলচিত্র উন্নয়নে সহযোগিতার আস্বাসও দেন এই পরিচালক-পত্নী।

মৃত্যুর পর সম্মাননা দেয়ার চেয়ে শিল্পী ও কলাকুশলীদের তাদের জীবদ্দশায় সম্মাননা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন বীরাঙ্গনা চরিত্রে অভিনয় করা সাবেক চিত্রনায়িকা নূতন।

শিল্পী ও কলাকুশলীদের নির্বাচনে সদ্য সভাপতির পদ পাওয়া মিশা সওদাগর বলেন, ‘এখন যারা আমাদের উপরে পরিচালকরা আছেন বা যারা চলে গেছেন, তারা আমাদের পিতার মতোই। আমরা আপনাদের দেখানো পথেই চলতে চাই।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি করার কথা ছিল ২৬ মার্চে। কিন্তু নানা কারণে আমাদের দেরি হয়েছে। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা আমাদের চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সোনার মানুষদের সম্মানিত করতে চাই। নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দিতে চাই। তারা দেখুক একটা সময় আমরা কত শক্তিশালী আর মেধাবী মানুষদের চলচ্চিত্রাঙ্গনে কাজ করি।’

মুশফিকুর রহমান গুলজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ‘ওরা ১১ জন’ ছবির ১৪ শিল্পী ও কলাকুশলীকে সম্মাননা ক্রেস্ট আর উত্তরীয় দেওয়া হয়।

প্রযোজক সাবেক চিত্রনায়ক সোহেল রানা, পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), অভিনয়শিল্পী খসরু (মূল চরিত্র), সংলাপ লেখক ও অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান (রাজাকারের ভূমিকা), নায়করাজ রাজ্জাক, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চিত্রনাট্যকার কাজী আজিজ, সৈয়দ হাসান ইমাম (ডাক্তারের ভূমিকায়), মিরানা জামান, নূতন (বীরাঙ্গনা), কাজী ফিরোজ রশীদ, পরিবেশক ইফতেখারুল আলম, প্রধান সহকারী পরিচালক শামসুল আলমকে সম্মাননা দেওয়া হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে খসরু, এ টি এম শামসুজ্জামান, রাজ্জাক ও শাবানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।

(ঢাকাটাইমস/২৫মে/এএকে/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :