পদ্মার ভাঙনে হুমকিতে দৌলতদিয়ার সব ফেরিঘাট
পানি বাড়ার সঙ্গে পদ্মা নদীতে গত কয়েকদিন ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকায় আবারও হুমকির মুখে পড়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার সব কয়টি ফেরিঘাট। পদ্মায় অব্যাহত ভাঙন আর পানি বেড়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়ার তিন ও চার নম্বর ফেরিঘাট যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ঘাট ভাঙনের হুমকির মধ্যে থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে ওই ঘাটে ফেরিও ভিড়ছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। অথচ ঘাট রক্ষায় এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ঈদের আগে এই দুটি ফেরিঘাট ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
গত বছরও পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় এই ঘাট দুটি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। সে সময় তড়িঘড়ি করে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কয়েক কোটি টাকা খরচ করলেও খুব একটা কাজে আসেনি। এবারও তাদের দিকে তাকিয়ে বিআইডব্লিউটিএ।
দৌলতদিয়া চার নম্বর ফেরিঘাট সংলগ্ন বাহেরচর গ্রামের আব্দুল কুব্বাদ মন্ডল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঘাটের দায়িত্বে থাকা মানুষগুলো যদি ঠিকমতো কাজ করতো তাহলে এ সমস্যায় পড়তে হতো না। এখনো ঘাট রক্ষায় তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। নদী ভাঙনে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ঘাট এলাকায় বসবাসকারী মানুষেরাও।’
নদী ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন একই গ্রামের জালাল গাজী (৫৫)। তিনি বলেন, ‘আমরা তো নদীর পেটে চলে যাচ্ছি। বাড়িঘড় সব নদীতে তলিয়ে গেছে। বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।’
ঘাট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. সোহেল মোল্লা ঢাকাটাইমসকে জানান, চার নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় বসবাসকারী মানুষ ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙনের ভয়াবহতা বেশি। যখন ভাঙন শুরু হয় তখন বস্তা ফেলা হয়। ভাঙনের সময়ে বস্তা ফেলে কোনো লাভ হয় না। এখানে ঈদের সময়ে কয়েক লাখ গাড়ি ঘাট পারাপার হয়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের ঈদে ঘাট পারাপারে সমস্যায় পড়বেন যাত্রীরা।
দৌলতদিয়া ঘাট পার হতে আসা ট্রাকচালক আব্দুল লতিফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর ঘাট যেভাবে ভেঙেছে তাতে ফেরিতে ওঠানামা করতে চালকদের কষ্ট হয়েছে। ট্রাক নিয়ে দিনের পর দিন ঘাটে বসে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ বছরও যদি ঘাট ভেঙে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তো কষ্টের শেষ নাই।’
ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসচালক কানই বিশ্বাস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ দৌলতদিয়া ঘাটে পারাপার হয়। ঈদের সময়ে এই চাপ বেড়ে কয়েক গুণ হয়। লাখ লাখ মানুষ ঈদের আগে ও পরে ঘাট পারাপার হয়ে থাকে। গত বছর ঈদের সময়ে তিনটি ঘাট বন্ধ ছিল। এবারও ঘাট বন্ধ হলে মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে।’
বিআইডব্লিউটিএর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। কাজ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পরবর্তী মিটিংয়ে জানতে পারবো।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বছরে বর্ষার সময়ে দৌলতদিয়ায় চারটি ফেরিঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়। বিআইডব্লিউটিএ দিনরাত পরিশ্রম করে ঘাটগুলো চালু করে। বর্তমানেও ঘাটগুলোর সংস্কার চলছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এক নম্বর ফেরিঘাট ও লঞ্চ ঘাটের মাঝখানে দুটি নতুন ফেরিঘাট তৈরি হবে। নতুন ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক দুটি নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।’
শাহ আলম বলেন, ‘বর্তমানে দুই নম্বর ফেরিঘাট থেকে এক নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত বল্লি পাইলিং ও জিও ব্যাগ ফেলে ফেরিঘাটের তীর রক্ষার কাজ চলছে। চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করছে। দুই নম্বর ফেরিঘাট থেকে চার নম্বর ফেরি ঘাট পর্যন্ত গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড তীর রক্ষার কাজ করেছিল। বর্তমানে তিন নম্বর ও চার নম্বর ফেরিঘাটের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।’
বিআইডাব্লিউটিসির (আরিচা সেক্টর) এজিএম মো. জিল্লুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, এই মুহূর্তে নতুন দুটি ঘাট করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে ফেরি চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটবে।
(ঢাকাটাইমস/২৭মে/প্রতিনিধি/জেবি)
মন্তব্য করুন