রমজানে টিসিবি পণ্য থেকে বঞ্চিত গাজীপুরবাসী

প্রকাশ | ২৮ মে ২০১৭, ১৯:৫৭

শাহান সাহাবুদ্দিন, গাজীপুর থেকে

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত ১৫ মে থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত ট্রাকে করে নিত্যপণ্য বিক্রি করার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে সরকারের এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গাজীপুরের ৪০ লক্ষাধিক বাসিন্দা। তাই মুসলমানদের পবিত্র এ সিয়াম সাধনার মাসে জেলার নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষদের বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে বাজার থেকে এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে। ফলে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব অন্যদিকে এসব পণ্য বিপণন কাজে জেলার বেকার যুবকরা হারাচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।

অথচ টিসিবির বিধান মতে তাদের অনুমোদিত ডিলাররা গোডাউন থেকে পণ্য উত্তোলনের পর স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আগমনি বার্তা দিয়ে দৃশ্যমান নির্দিষ্ট স্থানে লাল কাপড়ে টিসিবির বরাদ্দকৃত পণ্যের মূল্য তালিকার ব্যানার টানিয়ে পণ্য বিক্রি করার কথা। ডিলাররা টিসিবির নিয়ম মেনে পণ্য বিক্রি করছে কি না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ ডিলাররা তদারকি করবেন। এছাড়াও পণ্যের ওজন, গুণগত মান, দর ইত্যাদি বিষয়ে তদারকির জন্য জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়ার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে রমজানের আগে জেলা প্রশাসনকে কিছুই জানাতে পারেনি টিসিবি।

এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘টিসিবির পণ্য বিক্রয়ের বিষয়ে সম্প্রতি একটি সভায় আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে জেলায় টিসিবির অনুমোদিত ডিলাররা পণ্য বিক্রি করবে কি না এবং তা কোথায় বিক্রি করবে এ ব্যাপারে টিসিবির পক্ষ থেকে আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। তার পরও আমি নিজ উদ্যোগে গাজীপুরে টিসিবির ডিলারদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। ন্যায্য মূল্যতে পণ্য বিক্রয়ের সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে আমরা ডিলারদের টিসিবির পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ে বাধ্য করবো।’

এদিকে, টিসিবির ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে টিসিবির পণ্য বিক্রয়ের জন্য ২২ জন ডিলার রয়েছেন। তাদের মধ্যে গাজীপুর মহানগরে আটজন, গাজীপুর সদর উপজেলায় দুজন, কাপাসিয়া উপজেলায় পাঁচজন, শ্রীপুর উপজেলায় দুজন, কালিয়াকৈর উপজেলায় দুজন এবং কালীগঞ্জ উপজেলায় তিনজন ডিলার রয়েছেন। তবে জেলায় ২২ জন ডিলারের মধ্যে বর্তমানে মাত্র তিনজন ডিলার টিসিবির পণ্য বিক্রয় করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় টিসিবির ডিলার মেসার্স আল হাবিব ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক আল হাবিব ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রমজান মাস উপলক্ষে টিসিবির থেকে মাত্র ৫০০ কেজি চিনি, ৫০০ কেজি ছোলা, ২৫০ লিটার সয়াবিন তৈল ও ৩০০ কেজি মশুরের ডাল পেয়েছি। এই সামান্য মাল বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা জনগণের গণধোলাই খাওয়ার উপক্রম হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পণ্য ক্রয় করতে আসছে। অথচ একদিনেই টিসিবি থেকে ক্রয়কৃত সব পণ্য বিক্রি হয়ে গেছে। ক্রেতাদের ক্ষোভ থেকে বাঁচতে স্থানীয় উপজেলার নির্বাহী অফিসারের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ ভরসা’। এ মাসে টিসিবি থেকে আর পণ্য কিনতে পারবো বলে মনে হয় না। প্রতিদিন এমন চলতে থাকতে আমাকে পালাতে হবে।’

গাজীপুর শ্রীপুর উপজেলায় টিসিবির ডিলার মেসার্স ভাডো মাইক্রো বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাগাতার লোকসানের কারণে তারা গত চার বছর যাবত টিসিবির পণ্য বিক্রয় বন্ধ রেখেছেন।

গাজীপুর মহানগরীর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টিসিবির ডিলার মেসার্স আর.পি ট্রেডার্সের মালিক রতন মল্লিক ঢাকাটাইমসকে জানান, রমজান মাস উপলক্ষে তিনি টিসিবি থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারেননি। কারণ টিসিবি পণ্য দিতে পারছে না।

গাজীপুর কাপাসিয়া উপজেলায় টিসিবির ডিলার আমজাদ ট্রেডার্সের মালিক আমজাদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, তিনি টিসিবি থেকে পণ্য ক্রয় করতে চাইলেও টিসিবি দিতে পারছেন না।

একই উপজেলায় টিসিবির ডিলার মেসার্স জোনাকি মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইট লি. এর মালিক মেহেদী হাসান জানান, রমজান মাস উপলক্ষে টিসিবির পণ্য বিক্রি করবো এই প্রচার করে চরম বিপদে আছি। মান-ইজ্জত শেষ, শুধু গণধোলাই বাকি। দুইদিন টিসিবি থেকে পণ্য ক্রয়ের জন্য গিয়েছিলাম। মাত্র ১৫৫০ কেজি মাল দেয়। এই মাল তো আধা ঘণ্টাতেই শেষ হয়ে যাবে। পরে মানুষের গালি খেতে হয়। তাই টিসিবি থেকে পণ্য না কিনে পাইকারি দোকান থেকে পণ্য কিনে লোকসানে বিক্রি করছি। তবে গাজীপুরে টিসিবির অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকে জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে প্রতিজন ভোক্তা সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, তিন কেজি মসুর ডাল, পাঁচ লিটার সয়াবিন তৈল, পাঁচ কেজি ছোলা কিনতে পারবেন বলে তারা টিসিবির কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েই এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করেছিলেন। 

গাজীপুর জেলা বাজার কর্মকর্তা আবদুছ ছালাম ঢাকাটাইমসকে জানান, টিসিবির পণ্য কখন কে যে বিক্রি করে তা তারা কিছুই জানাচ্ছে না। অথচ আমি জেলা বাজার কর্মকর্তা। আমি ইতোমধ্যে টিসিবির ওয়েবসাইট থেকে গাজীপুরের ডিলারদের তালিকা সংগ্রহ করেছি। যোগাযোগও করছি।

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফ উদ্দীন ঢাকাটাইমসকে জানান, গাজীপুর সদর উপজেলায় টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না তা আমার জানা নাই। উপজেলায় টিসিবির কোনো ডিলার আছে কি না তাও জানা নাই। এ ব্যাপারে টিসিবির পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/প্রতিনিধি/জেবি)