ঘূর্ণিঝড় মোরা: চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরানো হল ১০ জাহাজ

প্রকাশ | ২৯ মে ২০১৭, ১৬:১৯ | আপডেট: ২৯ মে ২০১৭, ১৭:৫৩

ব্যুরো প্রধান, চট্টগ্রাম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম বন্দও থেকে ১০টি বড় জাহাজ সরিয়ে গভীর সমুদ্রে পাঠানো হয়েছে। বন্দরে রেড অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বন্দরসহ চট্টগ্রামের জেলা ও উপজেলার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নার্সদেও ছুটি।  

মোরার প্রভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরের জন্য সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী এবং চাঁদপুর অঞ্চলের দ্বীপ এবং চর সমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৬২ কিলোমিটার। দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে এটি ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছে।

আজ সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া-বিদ শাহীনুর ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘুর্ণিঝড়টি এখনো অতি তীব্র নয়। এটি এখনো মাঝারি ধরনের ঘূর্ণিঝড়। যেহেতু এটি সমুদ্রে অবস্থান করছে, সেজন্য সন্ধ্যা নাগাদ এর শক্তি বেড়ে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে জাহাজ

বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বাঁচতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙ্গরসহ সব ধরনের পণ্য খালাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের নোটিশে বলা হয়েছে, বহিঃনোঙ্গরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য খালাস এবং জেটিতে অবস্থানরত জাহাজে কন্টেইনার ও কার্গো জাহাজের লোড-আনলোডসহ সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৭ নম্বর সংকেত ঘোষণার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। আজ সোমবার বেলা ১২টার দিকে ঘূর্ণিঝড় পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণে অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়েছে।

সচিব জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহিঃনোঙ্গর মিলে ১২৭টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে সকালে বন্দর জেটিতে ছোট বড় পণ্যবাহী ১৬টি জাহাজ ছিল। জেটি থেকে সব জাহাজকে ক্রমান্বয়ে বহিঃনোঙ্গরে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া রিভার মুরিং জেটিতে থাকা ১০টি জাহাজকেও গভীর সমুদ্রে পাঠানো হচ্ছে।

ওমর ফারুক জানান, বহিঃনোঙ্গর ও জেটির জাহাজে লোড-আনলোড বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেটিতে নতুন করে কোনো জাহাজ ভেড়ানো হচ্ছে না। বন্দরের ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত না দেখানো পর্যন্ত কোনো কাজ বন্ধ রাখা হয় না, এখন ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। তাই বন্দর ও বিদেশ থেকে পণ্যবাহী জাহাজের নিরাপত্তার স্বার্থে পণ্য খালাস বন্ধ রেখে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল

ঘূর্ণিঝড় মোরা মোকাবেলায় চট্টগ্রাম বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, নগরীসহ জেলার সকল চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন্দর কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর সচিব ওমর ফারুক।

এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের জরুরি প্রস্তুতি সভায় সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী জানান, মোরা মোকাবেলায় নগরী এবং জেলার সকল চিকিৎসক এবং নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের পাঠানো ছুটি বাতিল সংক্রান্ত পত্রটি সকল উপজেলায় এবং সকল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার ১৬ থেকে ২৫টি টিম গঠন করা হয়েছে। সকল চিকিৎসক ও নার্সকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২৯মে/আইকে/ডব্লিউবি