ধেয়ে আসছে ‘মোরা’, আশ্রয়কেন্দ্রে লাখো মানুষ

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ মে ২০১৭, ০৮:৪৩ | প্রকাশিত : ২৯ মে ২০১৭, ২২:৪৮

উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। আগামীকাল সকাল ছয়টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ‘মোরা’র প্রভাবে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে। সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নিম্নাঞ্চলের ৫০টি গ্রাম স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ফলে আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। মেডিকেল টিম গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিকাল থেকে সারাদেশে সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে সকাল থেকেই। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে সবধরনের বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে। খুলে দেয়া হয়েছে উপকূলের সবকটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। উপকূলীয় এলাকা আনোয়ারা, বাঁশখালীর নিম্নাঞ্চল থেকে সব মানুষজনকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে কোস্টগার্ড।

কোস্টগার্ডের চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের কমান্ডার শহীদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যথাসম্ভব উপকূল থেকে সব মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কোস্টগার্ড ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোরা আরও সামান্য উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল।

এটি আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কি. মি. দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কি. মি. দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল।

এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ৩০ মে সকালের দিকে চট্রগ্রাম কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোরা এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’-এর প্রভাবে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সোমবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানোর পরপর লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে রেড ক্রিসেন্ট, ইউনিয়ন পরিষদের একটি টিমসহ স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করছে। এছাড়া দ্বীপে প্রবল বর্ষণ ও প্রচণ্ড বাতাস বইছে।

টেকনাফ সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে দ্বীপের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইফতারের পর থেকে হঠাৎ করে দ্বীপে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে বাতাসের গতি বাড়ছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের একটি টিম ও রেড ক্রিসেন্টের লোকজন কাজ করে যাচ্ছে। রাত ৮টা পর্যন্ত দ্বীপের পশ্চিম পাড়ার আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৩০০ লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পর্যাক্রমে সবাইকে আশ্রয় নিয়ে যাওয়া হবে।

দ্বীপের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে দ্বীপে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে এবং বাতাসও রয়েছে। দ্বীপের লোকজন আশ্রয় নেয়ার জন্য কেন্দ্রে দিকে ছুটছেন। প্রায় ৩০০ এর মতো মানুষ দ্বীপের পশ্চিম পাড়ার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইফতারের পর থেকে সেন্টমার্টিনের বসবাসকারীদের আশ্রয় নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া জন্য চলে গেছেন। রাতের ভেতরে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া দ্বীপের লোকজন যাতে আশ্রয় নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুল, আবহাওয়া অফিস ও ডাকঘর খোলা রাখতে বলা হয়েছে।

জেলায় জেলায় ‘মোরা’ মোকাবেলার প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ প্রবলভাবে আঘাত হানতে পারে এটা মাথায় রেখে উপকূলীয় জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বাগেরহাট, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালীর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এসব জেলায় খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। লোকজনকে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম। এসব জেলার দুর্যোগ সংক্রান্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবেলায় সব প্রস্তুতিই আছে। আতঙ্কিত না হতে উপকূলবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে দুর্যোগ কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তুত রয়েছে বলেও সরকারি তরফ থেকে বলা হয়েছে।

সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধ

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র সতর্কবার্তা থাকায় নদী পথে সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

সোমবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিআইডব্লিউটিএ -এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার জানান, আজ দুপুরে বিআইডব্লিউটিএ -এর পক্ষ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরগুলোতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

তিনি জানান, উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা থাকায় উপকূলীয় অঞ্চলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯মে/আইকে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :