‘মিডিয়ায় নতুনদের কেউ সুযোগ দিতে চান না’

প্রকাশ | ৩০ মে ২০১৭, ১৮:০৯ | আপডেট: ৩১ মে ২০১৭, ১৩:০৮

মাহমুদ উল্লাহ, ঢাকাটাইমস

জিয়াউদ্দিন আলম। ফটোগ্রাফার থেকে আজ একজন প্রতিষ্ঠিত গীতিকার, সুরকার এবং টিভি নাটক নির্মাতা। করছেন চলচ্চিত্র পরিচালনাও। এক যুগের ওপরে মিডিয়ায় কাজ করে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন নোয়াখালীর এই শিল্পী। অনেক মেধা দিয়ে নিজে তৈরি করেছেন গান নিয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জিসান মাল্টিমিডিয়া। ধিরে ধিরে পরিচিতি পাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান। এতকিছুর মাঝেও ভবিষ্যতে শুধু গান নিয়েই থাকতে চান। সুযোগ দিতে চান নবীন মেধাবীদের। কথা হয় এই গুণি মানুষটির সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে তার জীবনের পথচলার নানা দিক বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদ উল্লাহ।

এখন কি কাজ নিয়ে ব্যস্ত?

ঈদে বিউটি’র সলো অ্যালবামের গান তৈরি করছি। গান গুলো তৈরি হয়েছে জিসান মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে। বিউটির সলো অ্যালবাম ‘পাষান বন্ধু’র  সব কয়টি গানের কথা ও সুর করেছি আমি , সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন মুশফিক লিটু ও সজিব দাশ। অ্যালবামটি ডিজিটালি জিপি মিউজিকে প্রকাশ হবে। এছাড়াও আগামী ঈদে জিসান মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে সালমার সলো একটি গান প্রকাশ হবে গানের শিরোনাম ‘কে যে কখন’। এটি লিখেছেন মাহমুদ মান্জুর ও সুর করেছেন নাজির মাহমুদ, সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন মুশফিক লিটু। এছাড়া প্রত্যয় খানের তিনটি গান নিয়ে অ্যালবাম বের হবে আগামী ঈদে। অ্যালবামটির সব গুলো গান আমার লেখা। অ্যালবামে তিনটি গান থাকবে। একটি গানে প্রত্যায়ের সাথে ডুয়েট গেয়েছেন নদী। জিপি ও বাংলালিংকের অনলাইন মিউজিক স্টেশনে গান গুলো এই ঈদে প্রকাশ হবে। অ্যালবামটির নাম রাখা হয়েছে ‘গল্প’।

আপনি তো মিডিয়ায় অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন? শুরুটা কিভাবে হয়েছিল?

আমি এখন ইত্তেফাক এর বিনোদন ম্যাগাজিনে স্টাফ ফটোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত রয়েছি। এখানে আমি ৮ বছর ধরে কাজ করছি। এর আগে বিনোদন বিচিত্রা ও দৈনিক একুশে সংবাদে ছিলাম। ২০০৪ সালে আমি ঢাকায় দৈনিক একুশে সংবাদে যোগদানের মাধ্যমে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু করি।

আচ্ছা, ফটোগ্রাফার হলেন কিভাবে?

ছোটবেলা থেকেই বিনোদনের মানুষ ছিলাম। প্রচুর গান শুনতাম। গানের প্রতি একটা আলাদা ভাল লাগা কাজ করতো। নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জ আমার বাড়ি। সেখান থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে এক বড় ভাইয়ের স্টুডিওতে কাজ নেই। সেখানেই প্রথম ফটোগ্রাফী শিখি। এরপর সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই আমি দৈনিক একুশে সংবাদে ফটো্রগ্রাফীতে যোগ দেই। পরে বিনোদন বিচিত্রায় আসি।

আচ্ছা, ফটোগ্রাফী নিয়ে প্রাপ্তি?

গান পাগল মানুষ ছিলাম। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সবার ছবি তুলতাম বেশি বেশি। এখনও অনেক সিনিয়র তারকা আমার তোলা পুরনো ছবিই সব জায়গায় ব্যবহার করেন। যখন পত্রিকায় দেখি আমার তোলা সেই পুরনো ছবি। তখন অনেক ভাল লাগে।

গানই তো আপনার ভাল লাগার মূল জায়গা। তো গানে যাত্রা শুরু হলো কিভাবে?

২০১৪ সালে শাহরিয়ার বাঁধন এর একটি সলো অ্যালবাম এর কাজ করেছিলাম। ও সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। বড় ভাইয়ের ছেলে। ওর গানের জন্য বিভিন্ন গীতিকারের কাছে যেতে হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে লেখা বিভিন্ন গান যোগাড় করি। গীতিকাররা এক একটি গান লিখে দেয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে বাজেট বেশি নিয়েছিলো। তখন সংগীত পরিচালক রেজোয়ান শেখ ও বাঁধন আমাকে বলে, ‘আপনি তো লেখালেখি করেন আর মিউজিক নিয়েও অনেকদিন ধরে কাজ করছেন পত্রিকায়। তাহলে একটি গান লিখে দেন।’ তাদের অনুরোধে আমি একটি গান লিখতেই সেটিতে তারা সুরও করে ফেলে। গানের প্রতি আমার একটি আগ্রহ তৈরি হল। এরপর থেকেই আমি গান লিখি ও সুর দেই। এতে অনেকেই সমালোচনা করে। প্রশংসাও করে। বলে গানের মধ্যে গল্প আনতে। আমিও সেরকমভাবেই চেষ্টা করতে থাকি। এভাবেই গানের প্রতি আমার যাত্রা।

এ পর্যন্ত আপনি কতগুলো গান লিখেছেন?

আমার অনেক গান চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০/৭০টি গান লিখেছি আমি। দেশের গান লিখেছি। ক্রিকেট নিয়ে আমার একটি গানে ৭ জন সিঙ্গার কণ্ঠ দিয়েছেন। এছাড়াও ক্রিকেট নিয়ে আরেকটি গানে ৯জন কণ্ঠশিল্পী কণ্ঠ দেন। সেই গানের ভিডিওতে ২৬ জন চলচ্চিত্র তারকা স্ক্রীন শেয়ার করেছেন। পৃথিবীর কোন দেশের গানে এত শিল্পী একসঙ্গে কণ্ঠ দেননি বা অভিনয় করেননি। আমার এটাতেই প্রথম। এগুলো আমার অনেক বড় প্রাপ্তী।

আচ্ছা, আপনি তো নাটকও পরিচালনা করেন। এ পর্যন্ত কতগুলো নাটক পরিচালনা করেছেন?

এ পর্যন্ত আমি ১৬টি নাটক পরিচালনা করেছি। সামনেই আমি দুটি সিনেমার কাজে হাত দিবো। এখন প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে। একটির নাম ফটোগ্রাফার ও অন্যটির নাম পরে প্রকাশ করবো। সিনেমাটিতে দুই বাংলার শিল্পীরা হাজির থাকবে। এছাড়াও কোরবানীর ঈদের জন্য দুটি নাটকের কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই ঈদের পরপরই সেগুলেঅর কাজে হাত দিব।

এতদিকে কাজ করছেন, কোন পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করাতে পছন্দ করেন?

প্রত্যেকটিই আলাদা আলাদা মাধ্যম। একটির সঙ্গে একটি জড়িত নয়। শহীদ শুভমিতার একটি জনপ্রিয় মিউজিক ভিডিও আমি বানিয়েছিলাম। সালমার পরানের বন্ধু মিউজিক ভিডিওটিও আমি নির্মাণ করেছ। কিন্তু এখন যে সিনেমা দুটি নিয়ে কাজ করছি এরপর হয়তো আর সিনেমা বানাবো না। আমার যে প্রতিষ্ঠান আছে জিসান মাল্টিমিডিয়া সেটা নিয়েই ভাবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছা আছে।

বাহ! জিসান মাল্টিমিডিয়া আপনার জানতাম না, সেটার খবর বলুন?

এখন সবাই জিসান মাল্টিমিডিয়ার নাম জানেন। জিসান মাল্টিমিডিয়াকে একটি প্রতিষ্ঠিত গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করতে চাই। নতুন যারা ভাল গান গাইবে, সুর করবে তাদেরকে আমার প্রতিষ্ঠানে সুযোগ দিবো। শুধুমাত্র স্টারদের নিয়ে। কাজ করতে হবে আমি এমন ভাবি না।

ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা কি?

ভবিষ্যতে মিডিয়াতেই নিয়মিত কাজ করে যেতে চাই।

১২/১৩ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে নুতনদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

মিডিয়াতে কেউ কোন জায়গা দিতে চায়না নতুনদেরকে। একজন শিল্পীর কোয়ালিটিই তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। সে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। তবে এরজন্য সবার আগে প্রয়োজন বিনয়। আগে শুধুই সাংবাদিকতা নিয়ে থাকতাম। সাংবাদিকতাও কঠিন জায়গা। বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়। ভাল কাজ করলে নেটে বুস্ট করতে হবে না। নিজগুণেই সে নিজের জায়গা তৈরি করে নেবে। একদিনে কিছু হয়না। শ্রম দিলে আস্তে আস্তে সে উঠে আসবে। আমি আজকে এখানে এসেছি সবার সহযোগীতা ও ভালবাসার কারণে। আমাকে সবাই ভালবেসেছে। নুতনদের এসব বিষয় নিয়েই ভাবা উচিৎ।

ঢাকাটাইমস/৩০মে/এমইউ