শিহরণ আর অশ্রুর বান ডাকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

লেখা ও ছবি: শেখ সাইফ
 | প্রকাশিত : ৩১ মে ২০১৭, ০৮:৩০

‘আমাদের ছবিও আছে। এই যে রাস্তার উপর গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছিল পাক বাহিনীদের ঠেকানোর জন্য। এই যে মেয়েদের মিছিল। কিন্তু আমাদের কষ্টের সময়ের অনেক ছবিই নেই এখানে।’ দেয়ালের ছবিগুলো স্বামীকে দেখাচ্ছিলেন আর এসব কথা বলছিলেন শেখ ফাতেমা আলী। তিনি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে দেখতে এসেছেন নতুন ভবনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তিনি বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা। পাক বাহিনী তাকে ও তার খালাতো বোনসহ প্রায় ৬০ জন নারীকে ধরে যশোরের শার্শা মিলিটারি ক্যাম্পে ২১ দিন আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে। তার স্বামীও মুক্তিযোদ্ধা। দুজনই যুদ্ধ করেছেন ৮ নম্বর সেক্টরে।

নান্দনিক সৌন্দর্যম-িত আধুনিক জাদুঘরটি তরুণ প্রজম্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করা ও জানার লক্ষ্যে নির্মিত। ১৬ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রায় দুই দশক পর সেগুনবাগিচার ভাড়াবাড়ি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর চলে এল আগারগাঁওয়ের নিজস্ব ভবনে। যদিও নতুন ভবনটির সার্বিক নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। চলছে গ্যালারি সাজানোর কাজকর্ম। এটিই হচ্ছে দেশের প্রথম জনগণের অর্থায়নে নির্মিত জাদুঘর, যা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মহাব্যবস্থাপক অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. মোসলেহ উদ্দিন কাছ থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সরকারের দেওয়া প্রায় এক একর জমিতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থায়ী ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সম্পূর্ণ অনুদানে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতাল পার হলেই জাতীয় জাদুঘর। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর জাদুঘর ভবনটির ছাদের ওপর আর সামনের দেয়াল থেকে কামান-বন্দুকের নলের মতো নানা আকারের কংক্রিটের নল বেরিয়ে এসেছে। কাছে গেলে দেখা যায়, দেয়ালের উপর ক্ষতচিহ্ন। এমন ক্ষতচিহ্নগুলো দেখে স্বাধীনতাযুদ্ধের ক্ষতের একটি অনুভূতি দর্শনার্থীদের মনে জেগে উঠবে।

নিচে তিনটি বেজমেন্টসহ নয়তলা ভবন জাদুঘরে ঢুকতেই মিলবে উন্মুক্ত মঞ্চ, পাশে পানির ফোয়ারা।

জাদুঘরে ঢুকতে হলে প্রথমে ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে হবে। সিঁড়ি শেষ হতেই চোখে পড়বে বড়সড় একটি গোলাকার চৌবাচ্চা। তার মাঝখানে প্রজ্বলিত অনির্বাণ অগ্নিশিখা। আরো চোখে পড়বে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত ভারতীয় যুদ্ধবিমান, যা বিশেষ কায়দায় ঝুলানো আছে। এর পাশেই ব্রোঞ্জ ধাতবে নির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দুই পাশে জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতি। হাতের বাম দিকে একটি হেলিকপ্টার একইভাবে ঝুলানো। ভবনটির বারান্দাগুলো নামখচিত কাচে ঘেরা। এসব নাম তাদের যাদের অর্থায়নে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মিত।

প্রশস্ত মেঝের একদিকে টিকিট কাউন্টার। ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে আপনাকে যেতে হবে জাদুঘরের মূল অংশে। তবে ঢোকার আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে স্ক্যানিং প্রবেশদ্বারের মধ্য দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে যেতে হবে। ভবনের প্রত্যেক তলায় দুই ভাগে কক্ষ নিয়ে মূল জাদুঘর। যেতে যেতে আপনার চেতনার ক্যানভাসে রং ছড়াবে বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস। প্রথম কক্ষে পরিচয় হবে বাঙালির প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে। নির্দেশনা অনুসরণ করে কয়েক ধাপ এগিয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন ইংরেজ শাসনামলে। মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা আর ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগ আপনাকে জানাবে ইংরেজ শাসকদের নিপীড়নগাথা।

তারপর শুরু হবে পাকিস্তানি আমল। কিন্তু গণতন্ত্র ও অধিকারের দাবিতে বাঙালির সংগ্রাম চলতে থাকল। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চলে এল ১৯৭১। শোনা যাবে বঙ্গবন্ধুর বজ্র কণ্ঠ। আপনি তখন পৌঁছে গেছেন তৃতীয় কক্ষে। এখানে জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্ততিপর্ব, দায়িত্ব গ্রহণ, অস্থায়ী সরকার গঠন ইত্যাদি সম্পর্কে। সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় ওঠার সময় চোখে পড়বে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত পোস্টারগুলো। চতুর্থ কক্ষ ঘুরতে ঘুরতে আপনার হাত হয়তো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসবে নিজের অজান্তে। দেখা যাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মারক আর আরও অনেক কিছু। দোতলার চতুর্থ কক্ষ থেকে বের হয়ে পঞ্চম কক্ষে যাওয়ার সময় আছে মুক্তিযুদ্ধে ভারত, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশের ভূমিকার কথা।

বিমানবিধ্বংসী কামানসহ মুক্তিবাহিনীর দুই সদস্য। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদর্শিত একটি আলোকচিত্র। পঞ্চম কক্ষে তুলে ধরা হয়েছে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ, রণকৌশল, যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলা।

ষষ্ঠ কক্ষে ঢোকার মুখে জায়গা পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সুলতান সালাউদ্দিনের নিজের হাতে তৈরি করা সাইক্লোস্টাইল মেশিনটি। এটি দিয়ে ছাপা হতো মুক্তিযুদ্ধের প্রচারপত্র। দোতলার শেষ ঘরটায় গেলে পাকিস্তানি বাহিনীর নারী নির্যাতন ও গণহত্যার নির্মমতার চিত্র দেখে যে কেউ শিউরে উঠবেন। পাকিস্তানি নরপিশাচদের নির্মমতার সাক্ষী যেন এই গ্যালারি। দেখে অজান্তে ভিজে উঠবে আপনার চোখ।

অতঃপর ঝাপসা চোখে দেখতে পাবেন বিজয়পর্ব। স্বাধীন বাংলাদেশ! বিজয় উল্লাস! সেই সময়ে ধারণ করা মুক্তিযুদ্ধের ভাষণ, স্লোগান, গুলির শব্দ, মানুষের আর্তচিৎকার শোনা ও দেখা যাবে। সেই সাথে যুদ্ধকালীন গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়ে যাওয়ার লোমহর্শক দৃশ্য, মানুষের পালানো, ট্রেন স্টেশনে হামলা, সেতু-কালভার্টে হামলা, ট্রলার-স্টিমার চলা প্রভৃতি চোখের সামনে দেখা যাবে। যা আপনার স্মৃতি, বিবেককে স্বাধীনতার আত্মত্যাগের জন্য, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে শেখাবে। জাগ্রত হবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ।

এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অনেক মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, লেখক ও কবি-সাহিত্যিকের ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, পাজামা, শার্ট-প্যান্ট, বেল্ট, ক্যাপ, ব্যাগ, প্রতীক-ব্যাজ, প্রেসার মাপার যন্ত্র, কাঁচি, কলম, চশমা, ক্যামেরা, দূরবীক্ষণ, সাঁতার কাটা পাদুকা, পোশাক, প্যারাসুট, টর্চ লাইট, চাবি, ছাইদানি, হাতে লেখা চিঠি, হাতঘড়ি, ব্রাশ, ডায়েরি, টেলফোন, টেলগ্রাফ, পতাকা, দেয়ালিকা, রেকর্ডযন্ত্র, গ্রামোফোন, ফাঁশির বেদির ইট, থালা, মগ, রান্নার পাতিল প্রভৃতি দেখা যাবে। আছে যুদ্ধের সময় পারাপারে ব্যবহৃত নৌকা। মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল, ঢাল, তলোয়ার, বল্লম, সড়কি।

কিছু গ্যালারিতে ঢুকলে আপনার মনে হবে আপনি একাত্তর সালের কোনো টিনের তৈরি বাড়ির ভেতর অবস্থা করছেন। সেভাবেই সেগুলো জানালা-দরজা-দেয়াল সহকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। পোড়া কাঠ, গাছের গুঁড়ি সবই চোখের সামনে দেখতে পাবেন। দেখতে দেখতে গায়ের ভেতর কেমন এক শিহরণ চলে আসবে আপনার।

সে সময় উদ্বাস্তু শিবিরে ঠাই নেওয়া মানুষের করুণ জীবনচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বড় বড় স্থির আলোকচিত্রের মাধ্যমে। রাস্তার পানি ও পয়োনিষ্কাশনের জন্য নির্মিত কংক্রিটের বড় বড় পাইপের ভেতরে জীবনচিত্র; বাস্তবসম্মত করে চোঙ বসানো হয়েছে।

রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নদী পারাপারে ব্যবহৃত নৌকা। আছে ভাঙা ট্রেনের অংশবিশেষ, রেললাইন, পাথর, রেললাইনের স্লিপার, জিপ গাড়ি, চাবুক প্রভৃতি।

দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতার বালিগঞ্জ রেডিও স্টেশনে ব্যবহৃত রেডিও রিসিভার। রিসিভারের সাহায্যে বিভিন্ন দেশে প্রচারিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের খবরের উল্লেখযোগ্য খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত প্রচার করা হতো।

আছে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর হলোগ্রাম-সংবলিত পত্র। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য কৃষ্টি-সভ্যতার স্মারক মাটির তৈরি কিছু নিদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোর স্থিরচিত্র দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি সে সময়ে প্রকাশিত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সংবাদ ও চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে।

মূল জাদুঘর ভবন ছাড়াও রয়েছে সামনে শিখা অনির্বাণ, ছোট হলঘর, প্রশাসনিক ভবন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক স্মারক ও বই বিক্রয়কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া এবং আঙিনার এক কোনায় মুক্তমঞ্চ।

এই জাদুঘর ভবন নির্মাণে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক জুরিবোর্ডের মাধ্যমে ৭০টি নকশার মধ্যে স্থপতি দম্পতি তানজিম ও ফারজানার স্থাপত্যকর্মটি চূড়ান্ত হয়। সেটি অনুসরণেই ০.৮২ একর জমির ওপরে ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় জাদুঘর ভবন। এর বেশির ভাগ অর্থই দিয়েছেন দেশের সাধারণ জনগণ।

এটি শুধু একটি জাদুঘর নয়। এখানে বসে গবেষণা করা যাবে মুক্তিযুদ্ধের ওপর। বড় পরিসরে করা হয়েছে গবেষণাগার। বিজ্ঞানের নবতর ভাবনার স্পর্শে তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভবনটির স্থপতি হিসেবে কাজ করছেন তানজীম হাসান সালিম ও নাহিদ ফারজানা।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মহাব্যবস্থাপক মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর জনগণের জন্য নিবেদিত। জাদুঘরটি সম্পূর্ণ ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। তবে সবে মাত্র শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নীতিমালা এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। পুরনো যেসব নিয়ম-কানুন ছিল সেগুলো অনুসরণ করেই আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ৭০-৮০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।’

প্রায় দুই লাখ বর্গফুটের এই জাদুঘর সপ্তাহের প্রতি রোববার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২০ টাকার প্রবেশ ফিতে পরিদর্শন করা যায়। তবে শীতকালে খোলা রাখা হয় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। জানালেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের টিকিট বিক্রেতা নাজমা সুলতানা।

এখানে আসা দর্শনার্থীদের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমরা দুটি পদ্ধতিতে জাদুঘর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে থাকি। একটি ‘আউট রিচ প্রোগ্রাম’, অন্যটি ‘রিচ আউট প্রোগ্রাম।’ ‘রিচ আউট প্রোগ্রাম’-এ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে এখানে নিয়ে এসে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। আর আউট রিচ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে আমরা ভ্র্যাম্যমাণ জাদুঘরের মাধ্যমে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গিয়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে থাকি। এ ছাড়া এখানে অসুস্থ বা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা আছে। লিফটের ব্যবস্থাও করা আছে।

তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে সারা দেশের স্কুলগুলোতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন ‘নেটওয়ার্ক শিক্ষক’ নির্বাচন করা হয়েছে। তারা স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে সহায়তা করেন। ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের দুটি বাস দেশের ৫৫টি জেলার সব উপজেলায় তুলে ধরেছে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা।’

নতুন ভবনে চারটি স্থায়ী ও একটি অস্থায়ী গ্যালারি, তিনটি সেমিনার কক্ষ, একটি মিলনায়তন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থের লাইব্রেরি ও আর্কাইভ আছে। এ ছাড়াও দুটি রিসার্স ইনস্টিটিউটও তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিট রিসার্স ইনস্টিটিউট এবং সেন্টার ফর স্টাডি অব বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার। অস্থায়ী গ্যালারিতে চিত্রকর্ম, আলোকচিত্রসহ নানা ধরনের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কোন গ্যালারিতে কী

গ্যালারি কোঅর্ডিনেটর আমেনা বেগমের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় দুই বিঘা জায়গার ওপর নির্মিত এই ভবনের ব্যবহারযোগ্য আয়তনের পরিমাণ ১ লাখ ৮৫ হাজার বর্গফুট। গ্যালারিগুলোতে সংগৃহীত নিদর্শন সাজানো হচ্ছে। চারটি গ্যালারি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রথম গ্যালারিতে থাকছে বাংলার প্রাচীন সভ্যতা থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সকল সংগ্রহ। ওই সময়ের মধ্যে এই জনপদের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতœনিদর্শন।

দ্বিতীয় গ্যালারিতে থাকছে ১ জানুয়ারি ১৯৭১ সাল থেকে ৩০ এপ্রিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সকল সংগ্রহ। থাকবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ঘটনা থেকে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় প্রবাসী সরকার গঠন পর্ব। শব্দ ও আলোর প্রক্ষেপণের একটি বিশেষ প্রদর্শনী থাকবে এই গ্যালারিতে। ২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বর্বরতার চিত্র ফুটে উঠবে এই গ্যালারিতে। এছাড়া সারা দেশের গণহত্যার নিদর্শনও থাকবে।

তৃতীয় গ্যালারিতে থাকছে যুদ্ধচলাকালীন সময় অর্থাৎ ১ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল স্মৃতি। চতুর্থ গ্যালারিতে থাকছে বিজয় স্মৃতি। বাঙালির প্রতিরোধ গড়ে তোলার নিদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযুদ্ধ, যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, গণমানুষের দুরবস্থা, যৌথ বাহিনীর অভিযান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিজয়, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ঢাকায় পাকিস্তানি দখলদারদের আত্মসমর্পণসহ নানা চিত্র ক্রমান্বয়ে দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা।

আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ সেগুনবাগিচার একটি ভবনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

(ঢাকাটাইমস/৩১মে/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :