‘মোরা’র পর বৃষ্টিতে ভাসল চট্টগ্রাম
১২৬ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে যাওয়া ‘মোরা’য় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বটে। উপকূল অতিক্রম করায় স্বস্তিও ছিল নগরজীবনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘মোরা’ কেঁদেই অকূলে ভাসিয়ে দিল চট্টগ্রামকে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে মঙ্গলবার দিনগত রাত সোয়া ১টায় অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। আজ বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে অবিরাম বর্ষণ। মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামবাসী সেহরি খাওয়ার সময় বুঝতেই পেরেছিল সকালের পরিণতি। কারণ সেহেরির সময়েই নিচু এলাকা সয়লাব হয়ে গিয়েছিল বৃষ্টির পানিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ৪১নং ওয়ার্ডের কোনো এলাকা বাকি নেই পানিতে ডুবেনি। সব ওয়ার্ডের পাহাড়ি ও উঁচু এলাকায় একমাত্র পানিমুক্ত। নিচু এলাকার এমন কোনো ভবন নেই নিচতলা পানিতে ডুবেনি। ডুবে গেছে বিভিন্ন অভিজাত বিপনি বিতান।
বিশেষ করে চট্টগ্রামের সবচেয়ে নিচু এলাকা বন্দর, পতেঙ্গা, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, হালিশহর, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, চান্দগাঁও, চকবাজার, মোহরা, ফরিদের পাড়া, সমশেরপাড়া, বহদ্দারহাট, নাসিরাবাদ, কাট্টলী, নিউমার্কেট, মুরাদপুরসহ সব এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।
নগরীর সবকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিজ নিজ এলাকা ডুবে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরমধ্যে রয়েছেন, নগরীর ৩৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডের সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, ১০নং ওয়ার্ডের নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, ৪১নং ওয়ার্ডের সালেহ আহমদ, ২৯নং ওয়ার্ডে গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের, ১৮নং ওয়ার্ডের হাজী হারুনর অর রশিদ।
তাদের ভাষ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ গত মঙ্গলবার ভোরে উপকূল অতিক্রম করার সময় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। ছিল দমকা হাওয়া। তাতে কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ডালপালা ভাঙা ছাড়া তেমন আর কিছুই ক্ষতি হয়নি। তবে রাতের অঝোর বর্ষণে নগরীর পুরো এলাকা ডুবে যাওয়ার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে মালামালের। ব্যবসা-বাণিজ্যেও আঘাত এসেছে।
প্রশ্নের জবাবে চকবাজারের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটি কোনো জলাবদ্ধতা নয়। ভারী বর্ষণ আর সাগরের প্রবল জোয়ারের প্লাবন এটি। আল্লাহর রহমত যে, ভোর ৫টায় বৃষ্টি থেমেছে। পানিও কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি না হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পানি কমে যাবে।’
এদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহীন ইসলাম জানান, মোরা উপকূল অতিক্রম করার পরও বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। তাই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বরে আনা হয়েছিল। মোরা চলে গেলেও অঝোরে কেঁদে ভাসিয়ে দিল চট্টগ্রামকে।
আবহাওয়াবিদ বলেন, মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মোরা উপকূল অতিক্রমের সময় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। আর মঙ্গলবার রাত সোয়া ১টা থেকে বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত ১৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মোরা’ এখন ভারতে অবস্থান করছে। তবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের ওপর ‘মোরা’র প্রভাব এখনো কাটেনি। আরও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিকালে সাগরে আবারও প্রবল জোয়ার সৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি ও জোয়ারে চট্টগ্রাম নগরী দুই থেকে তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ শাহীন ইসলাম।
(ঢাকাটাইমস/৩১মে/আইকে/জেবি)
মন্তব্য করুন