ফেসবুক পর্ব-১

দিলরুবা শরমিন
| আপডেট : ০১ জুন ২০১৭, ১১:২৭ | প্রকাশিত : ০১ জুন ২০১৭, ১১:২৬

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্রমবিকাশ বাংলাদেশে খুব বেশি দিনের নয়। যতদূর মনে করতে পারি এক দশক বা একযুগ। কিন্তু এই মাধ্যমটার ব্যবহার যে পরিমাণ বেড়েছে বা যেমন জনপ্রিয় হয়েছে তেমনি অন্যান্য মাধ্যমগুলো এখনও হয়নি। এটা একটা ভাল দিক। জনবান্ধব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণবান্ধব মাধ্যম যাই বলি না কেন, কমবেশি সকলেরই একটা ‘ফেসবুক’ অ্যাকাউন্ট আছে। না থাকাটা একটা বড় রকমের অনুচিত কাজ আর যুগের থেকে পিছিয়ে থাকা আরকি। পাশাপাশি নিজের মেধা, মনন, রূপ, রস, যোগ্যতা যতভাবে, যখন তখন প্রকাশ/বিকাশ করা যায় এই মাধ্যমে এত সহজে আর কি কোন মাধ্যমে করা যায়?

বাঙালি আনন্দপ্রিয় জাতি। তার উপরে ভাতজাতীয় খাবার খেয়ে একটু আয়েশে স্বল্প কষ্ট ও সময় ব্যয় করে এর চেয়ে সহজে আমরা হাতের কাছে আর কোন যোগাযোগ মাধ্যম পাই?

ফেসবুক আমারও খুব প্রিয়। কত হারানো বন্ধু, পরিচিত প্রিয়জনকে পেয়েছি এর মাধ্যমে। আবার কত অপরিচিত মানুষ নিকটজন হয়ে উঠেছে। কতজনকে না দেখে ঘুমাতে যেতে ইচ্ছে করে না আবার কতজনের চেহারা সকালে উঠেই দেখি। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি।

একেবারে গোড়ার দিকে যখন ফেসবুক ব্যবহার শুরু করলাম সেটা ২০০৭ কিংবা ২০০৮ সালের কথা। খুব একটা আনন্দ পেতাম না। কারণ দেশে তখনো খুব বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী ছিল না। তবে যাদের সাথেই সংযুক্ত হতাম উৎসাহিত করতাম আরও অনেক বন্ধুকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে। আসলে দূরে বসে নিজের দেশের মানুষের মুখ দেখা, মনের কথা জানা কত যে আবেগের ব্যাপার সেটা বলার নয়, অনুভবের বিষয়।

কালক্রমে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারী বেড়েছে। এখন শুধু বেড়েছে বললে কথাটা ভুল হবে। কারণ, খাই না খাই স্মার্টফোন কিনি ফেসবুক ব্যবহারের জন্যই। বাংলাদেশে গ্রামেগঞ্জে, মফস্বলে, রাস্তার মোড়ে ব্যাঙের ছাতার মত যেমন আছে বিউটি পার্লার, ‘বিকাশ’ এর দোকান, তেমনি ‘এখানে ২০ টাকা দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয় বা ৫০ টাকা দিয়ে ফেসবুক পরিচালনা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়’ নামের সাইনবোর্ড বা লেখনি দেখলেও অবাক হওয়ার জো নেই। বাহ, বেকারত্ব দূরীকরণ, জ্ঞানদান, জ্ঞানার্জন, সামাজিক কাজকর্ম সবই হচ্ছে।

আমি একটু স্বপ্নদ্রষ্টা; একটু না, বেশিই। অনেক বিষয় নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নগুলো আমাকে সাহায্য করে কাজ করতে, বেঁচে থাকতে, এমনকি ঘুমাতেও। কেউ কেউ এটা নিয়ে অবশ্য আমাকে অনেক টিপ্পনিও কাটে।

তো এই ফেসবুক প্লাটফর্মটা নিয়েও আমার কিছু স্বপ্ন ছিল, আছে। ঘরে বসে, রাস্তায় কাজ এর ফাঁকে বা অবসরে বা একাকি সময় অনেক বড় সঙ্গী। আমরা অনেক দূরে থাকলেও এই যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের সাথে দেখা হবে, কথা হবে, হবে বন্ধুত্বও। হবে জ্ঞানের আদান প্রদান। আমরা অনেক কিছু জানব, শিখব। আরও যে কত কি!

কিছু নিকটাত্মীয় দূরে ছিল, কাছে এসেছে, কিছু শিশুকালের বন্ধু পেয়েছি, কিছু নতুন বন্ধু, জ্ঞানী মানুষ, কিছু একপেশে ভালোবাসার মানুষ, সব মিলিয়ে খারাপ না।

ফেসবুক নিয়ে লিখতে গেলে এত কথা লিখতে হবে যা মহাভারতের চেয়ে বেশি পাতার হয়ে যেতে পারে। বরং একটু ফিরে আসি কেন এই লেখা।

যেই ফেসবুক কে আমরা নিত্যদিনের সঙ্গী বলে ভাবার, বোঝার চেষ্টা করছি সেই ফেসবুক অনেক অঘটন পটিয়শী বলে নানা মহল অনেক দিন দাবি-দাওয়া করে আসছেন। এমনকি আমাদের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী মহোদয় তো কথায় কথায় ভাইবার, হোয়াটস আপ, ফেসবুক নিয়ে আমাদের এত ‘Treat’ এর মধ্যে রাখেন যে দেশে ‘হৃদয় বেদনা’ সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হঠাৎই বেড়ে যায়।

এই রকম অবস্থার মাঝে ফেসবুকের নানা ছলাকলা দেখি। কেউ লাশ দাফন করতে করতে সেলফি দেয়, কেউ ত্রাণ বিতরণ করতে করতে। কেউ অপারেশন করতে করতে কেউ বা আবার ধর্ষিতার সাথে- এইভাবে ক্রমাগত ফেসবুকের পসরা নানাদিকে প্রবাহিত হতে থাকে। শাখা প্রশাখা নানাদিকে নানাভাবে বয়েই চলেছে।

ফেসবুক এখন বহতা নদী। জীবন বরং থেমে গিয়েছে ফেসবুকের মাঝে ----

(চলবে)

লেখক: আইনজীবী ও মানিবাধিকার কর্মী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :