আমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি...
তিনি একজন রাজনীতিক। সংসদ সদস্য। কিন্তু তিনি যে একজন গীতিকার, একজন কবি, এ কথা খুব একটা প্রচলিত নয়। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসেন শ্রমিকদের সঙ্গে মাটি কাটা, তাদের সঙ্গে বসে পান্তা খাওয়ার কর্মকাণ্ড দিয়ে। অনাহারে কাটানো রাস্তার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মুখে অন্ন তুলে দেয়ার ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একজন এমপি হিসেবে তার এ উদারতা ও দায়িত্ববোধ তাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে একজন এমপির যে চিরাচরিত ছবি চিত্রায়িত, তা থেকে বেরিয়ে আসতেই তার এই প্রচেষ্টা।
ইউপি চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য হওয়া জগলুল হায়দারের আলোচিত কর্মকাণ্ডকে অনুকরণীয় বলছেন অনেকে। বিস্তারিত জানতে শুক্রবার সকালে তার মুখোমুখি হয় ঢাকাটাইমস। সেখানে উঠে আসে তার ব্যতিক্রমী কাজের পেছনের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মহিউদ্দিন মাহী।
কেমন আছেন?
ভালো আছি। এলাকায় থাকলে তো অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। ঢাকায় এসে একটু বিশ্রাম নিই।
এলাকায় কেমন ব্যস্ততা?
প্রতিদিন ২০ ঘণ্টা সময় জনগণের পেছনে দিই। মানুষের সঙ্গে কাজ করি। তাদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি।
সম্প্রতি আপনার দুটি ঘটনা বেশ আলোচিত হয়েছে…
এটা আমার জনসেবারই অংশ। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করি। এর কাণ্ডারি জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে একটি উন্নত ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছেন। তার একজন অনুসারী ও কর্মী হিসেবে আমাদের কাজের পরিধি সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও বেশি প্রসার করতে হবে। আমরা যারা জাতীয় সংসদের সদস্য আছি, তাদের সাধারণ মানুষের পাশে পৌঁছাতে হবে। সরকারের উন্নয়নের তথ্য মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ, যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের অর্থনীতি চাঙা রাখে, তাদের সঙ্গে মিলেমিশে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেগবান করতে হবে। আমি শ্রমজীবী মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে যেতে চাই।
শ্রমিকদের সঙ্গে আপনার মাটি কাটার দৃশ্য খুবই আলোচিত। এসব কর্মকাণ্ড আপনি কখন থেকে শুরু করেছেন?
আসলে আমি অনেক আগে থেকেই এসব কর্মকাণ্ডে অভ্যস্ত ছিলাম। আমি যখন ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন থেকেই এই কাজ করে আসছি। ২০১১ সাল পর্যন্ত আমি ইউপি চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার কাজ সম্পর্কে জানেন আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আমি ফের সাধারণ মানুষের সেবায় মনোনিবেশ করি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যেসব কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাদের অনুকরণে আমি শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কাজ করছি।
কিন্তু মিডিয়ায় এসব খবর আগে দেখা যায়নি।
কী কারণে মিডিয়ায় আগে এসব খবর আসেনি সেটা আমি বলতে পারব না। তবে আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করছি শুরু থেকেই। আর আমৃত্যু করে যাব। তবে সম্প্রতি যেসব মিডিয়ার বন্ধুরা আমার এসব ইতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। এর মধ্য দিয়ে আমি আরও অনুপ্রাণিত বোধ করছি।
এই উৎসাহ, অনুপ্রেরণার উৎস কী?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন আমার কাছে বড় অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার বাস্তব জীবন থেকে আমি শিখি। তাকে আমি অনুসরণ করি। প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা যেভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে যান, রিকশা-ভ্যানে চড়ে যেভাবে মানুষের দুঃখ-দুদর্শা দেখেন, সেখান থেকে আমি শিক্ষা নেই। আমি তো তারই কর্মী।
আপনার এসব কাজে সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
আমি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে আমার মাটি কাটার খবর আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। অনেক সিনিয়র নেতা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমি খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় এসব কাজ আমি করে যাচ্ছি। এ ছাড়া আমার কাজ দেখে সারা দেশে অনেক জনপ্রতিনিধিই এখন এমন কাজের দিকে ঝুঁকছেন- এমন খবর পাচ্ছি। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক।
আপনি বাঁধ নির্মাণের কাজে শ্রমিকদের সঙ্গে মাটি কাটছেন। আসলে আপনার এলাকার মূল সমস্যাটা কী?
আমরা উপকূলীয় এলাকার মানুষ। আয়লা, সিডর দুর্গত এলাকার মানুষ। ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে আমার এলাকার মানুষ বেড়ে ওঠে। ঘূর্ণিঝড়ে অনেক বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ নির্মাণই আমার এলাকার বর্তমান মূল চ্যালেঞ্জ।
এতে সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছেন কেমন?
সরকার যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসহযোগিতা ও অবহেলার কারণে আমার এলাকার মানুষ ভোগান্তির মুখে পড়েছে।
কী ধরনের অসহযোগিতা করছে?
তারা সময়ের কাজ সময়ে করছে না। তাদের কর্মকাণ্ড হতাশাজনক। কর্তব্য পালনে চরম অবহেলা আছে তাদের। কাজ করতে দেরি করায় অনেক বাঁধ রক্ষা করা যায়নি।
এলাকার সাংসদ হিসেবে আপনি এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?
আমি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানিয়েছি। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।
সেই সঙ্গে এমপি হিসেবে নিজে মাটি কেটে অবহেলার প্রতিবাদ করছেন।
এটাকে সরাসরি প্রতিবাদ বলা যাবে না। আমি নিজ থেকেই নিজের বিবেকের তাড়নায় এসব কাজ করছি। তবে যারা নিজেদের কাজ নিজে ঠিকভাবে করে না, তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চেয়েছি- দেখো আমার কাজ না হওয়া সত্ত্বেও আমি মাটি কাটছি। আর তোমরা তোমাদের নিজের দায়িত্বটুকুও পালন করছো না।
আপনার এসব কর্মকাণ্ডে নির্বাচনী ভাবনা কাজ করছে বলে অনেকে বলছেন।
আমি একজন রাজনীতিক। একজন জনপ্রতিনিধি। নির্বাচন নিয়ে তো ভাবনা থাকবেই। নির্বাচনের মাধ্যমেই একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। আমি ভালো কাজ করলে আমার পক্ষে মানুষ রায় দেবে। আর খারাপ কাজ করলে দেবে না। এটা জনগণই বিচার করবে।
কেউ কেউ আবার একে লোক দেখানো বলছেন।
সমাজে মানুষ দুই শ্রেণির। কিছু মানুষ আছে যারা ভালো কাজের মধ্যেও নেতিবাচক কিছু খোঁজে। নিন্দুকরা কী বলল সেটা বড় কথা নয়। আমি আমার কাজ করে যাব। বিচার করবেন জনগণ। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য আমি এসব কাজ করি না। এলাকার মানুষ জানেন। আমি ধারাবাহিকভাবে দেশ ও জাতিকে নতুন কিছু দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
দুঃস্থ-অসহায়দের নিয়ে সাংগঠনিক বা কাঠামোবদ্ধ কিছু করার পরিকল্পনা আপনার আছে কি না?
আমাদের সরকারেরই এমন কিছু প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে অসহায় হতদরিদ্রদের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ আছে। সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আর আমি তো অসহায় মানুষদের নিয়েই বেশি কাজ করি। রমজানে যখন বড় বড় রাজনীতিবিদরা ইফতার পার্টি নিয়ে ব্যস্ত, তখন আমি ভিক্ষুক, হতদরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের ঘরে গিয়ে ইফতার করি। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য আমি কাজ করি।
আগামী নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন?
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় আমি কাজ করে যাচ্ছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় আমি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। আমি মনে করি আরও দুই টার্ম স্বাধীনতার পক্ষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা উচিত। দেশের উন্নয়নের জন্য এই সরকারের বিকল্প নেই। ভিশন বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আসতে হবে। দেশের প্রয়োজনেই এই সরকার বারবার দরকার।
আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চয় আশা করছেন।
আমি জনগণের জন্য কাজ করি। নমিনেশন দেয়ার মালিক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সেটি আমি বাস্তবায়নে কাজ করেছি। তাই আমি নমিনেশন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। আজীবন যেন তার অনুগত কর্মী হিসেবে থাকতে পারি সে চেষ্টাই করি।
একটু রাজনীতির বাইরে যাই। আপনার লেখালেখির মতো সৃজনশীল কাজের কথাও জানা যাচ্ছে।
আসলে আমি ছোটবেলা থেকেই গান করি। কবিতা লিখি। সুর করি। খুলনা বেতারের আমি একজন নিয়মিত গীতিকার। মানুষকে আমি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও উৎসাহ জোগাই।
আপনার কোনো প্রকাশনা আছে?
না। আমার সৃষ্টিকর্মগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আমি এগুলো সংগ্রহ করছি। সামনে বই আকারে বের করার পরিকল্পনা আছে। তবে আমি প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলাম। সেটি বাঁধানো আছে। আমি তাকে এটি জন্মদিনে উপহার দিয়েছি।
সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
ঢাকাটাইমস ও আপনাকেও ধন্যবাদ।
(ঢাকাটাইমস/০২জুন/মোআ)
মন্তব্য করুন