লন্ডনে দুধের লিটার ৬০, তেল ১১০ টাকা

দেলোয়ার হোসেন, লন্ডন, ইংল্যান্ড থেকে
| আপডেট : ০৩ জুন ২০১৭, ১৯:২৮ | প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০১৭, ১০:০৯

ওভাল স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে আমার পাশের সিটে বসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আরিফুল ইসলাম রনি। প্রতিভাবান রনি একসময় প্রথম আলোতে ছিলেন। এখন কাজ করছেন দেশের সবচেয়ে নামকরা এই অনলাইন নিউজ পোর্টালে।

বাংলাদেশ ইংল্যান্ড ম্যাচের ব্যস্ততার ফাঁকে তাকে বললাম ‘শুনেছেন, ঢাকাতে নাকি খেজুরের কেজি ২৪০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে? ‘তাই নাকি, ওই খেজুরে নিশ্চয়ই স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে!’ ঢাকাটাইমসের এই রিপোর্টে অন্য সবার মতো তিনিও বিস্মিত। আমি বললাম, ‘এটা কেবল সোনার বাংলাদেশেই সম্ভব। রনি হাসলেন’।

দেশের বাইরে কোথাও আসলে সেখানকার দ্রব্যমূল্য দেখার একটা কৌতূহল আমার মধ্যে খুব কাজ করে। শনিবার লন্ডনে পৌঁছেছি। ওইদিনই কয়েকটা দোকান ঘোরা হয়ে গেছে আমার। মেগা শপে গিয়েছি। ঘুরে ঘুরে দেখেছি কোন জিনিসের কেমন দাম।

ঢাকার বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে কয়েকটি খেজুরের দোকান আছে। যেখানে ৪০০ টাকার নিচে কোনও খেজুর পাবেন না। ৮০০, ১০০০ এবং এমনকি ১৫০০ টাকা দাম চাওয়া হয় কোনও কোনও খেজুরের!

লন্ডনের সুপার শপগুলোতে আমি খেজুরের দাম দেখতে লাগলাম। দেখি, এভাবে ১৫০০ বা ২৪০০ টাকা দামের সোনার প্রলেপ দেওয়া খেজুর পাওয়া যায় কিনা। না, মেলেনি। দেখলাম, বিশ্বের অন্যতম ধনী শহরের চেয়ে ঢাকাতে খেজুরের দাম বেশি! এখানে ৩০০ টাকায় পাওয়া যায় ভালো মানের খেজুর। অত্যন্ত ভালো মানের যে খেজুর দেখলাম যেগুলো বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না, সেগুলো বাংলাদেশি টাকায় ৫০০ টাকার উপরে নয়।

লন্ডনে সবচেয়ে সস্তা হলো দুধ। দুধের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। লো ফ্যাট, ফুল ক্রিম, জিরো ফ্যাট ইত্যাদি। দুধের প্রকারভেদে দামেও পার্থক্য। তবে সাধারণ ক্রীমযুক্ত দুধ এখানে বাংলাদেশি টাকায় ৬০ টাকার উপরে নয়। বাংলাদেশি টাকায় ৫০ টাকাতেও ভালোমানের দুধ পাওয়া যায় এখানে। ঢাকাতে আড়ং এবং মিল্কভিটা কোম্পানির দুধ যেখানে লিটার ৭০ টাকা খামারের দুধ তো ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আবার এসব দুধের মান নিয়েও আছে অনেক প্রশ্ন। ইংল্যান্ডে শুধু নয়, কোনও উন্নত দেশেই খাদ্য দ্রব্যের মান নিয়ে কোনোরকম প্রশ্নের সুযোগ নেই। ভেজাল শব্দটা শুধু বাংলাদেশের অভিধানে।

শুধু দুধ নয়, অনেক খাদ্যপণ্যের মূল্যই ঢাকার চেয়ে লন্ডনে কম দেখলাম। লন্ডনে পেঁয়াজ বাংলাদেশি টাকায় ৩০ টাকা। নাড়িভুঁড়ি, চামড়া সবকিছু বাদ দেওয়া মুরগির মাংস কেজি ৩০০ টাকার বেশি নয়। হাতছাড়া গরুর মাংস ৬০০ টাকা। ডিমের হালি ৪০ টাকাতেও কেনা যায়। চিংড়ি মাছের দামটা বেশি, কিন্তু অন্যসব মাছ বেশ সস্তা। নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ কিনতে পারবেন কেজি প্রতি ৪০০ টাকায়।

বাংলাদেশিদের দোকানে পাওয়া যায় বার্মা ও ইন্ডিয়া থেকে আসা ইলিশসহ নানা জাতের মিঠা পানির মাছ। বড় বড় বোয়াল, আইড়, পাবদা ইত্যাদি। এগুলোর কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার উপরে পড়বে না। মাথাবিহীন কুটে রাখা রুই জাতীয় মাছ ৩০০ টাকার মতো। ইলিশের দামটা বেশি, কেজি বিক্রি হয় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়।

চার পাউন্ডে মিলবে চার লিটার তেল। মানে বাংলাদেশে টাকায় ১০০ টাকার একটু বেশি। বাসমতি চালের দাম ১০০ টাকার মতো। সাধারণ মানের চাল ৫০ থেকে ৬০ টাকায়ও পাওয়া যায়। আটার কেজি ৫০ টাকার মতো।

আছে হরেক রকম খাঁটি জুস, এগুলোও বেশ সস্তা। আপেল, কমলা, আনারস, স্ট্রবেরির মজাদার জুসের লিটার বাংলাদেশি টাকায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকার বেশি পড়বে না। একটা বড় এবং ভালো মানের স্যান্ডউইচের দাম এক পাউন্ড। আইসক্রিম, বিস্কুট, কেকের দামও বাংলাদেশের চেয়ে তেমন বেশি না।

শুধু খাদ্যপণ্য নয়। ঢাকার চেয়ে লন্ডনে অনেক জিনিসই তুলনামূলক সস্তা। অথচ বাংলাদেশের একজন মানুষ গড়ে বছরে আয় করেন ১৫০০ ডলার। আর ইংল্যান্ডে সেটা ৫০ হাজার ডলারের কম নয়।

লন্ডন শহরে ব্যয়বহুল হলো বাসা ভাড়া। এখানে তিন রুমের ছোটখাটো একটি বাসার ভাড়া মাসে বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ টাকার কম নয়। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলও এখানে অনেক বেশি।

(ঢাকাটাইমস/৩ মে/ডিএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :