ভাঙা প্লেটের টুকরোয় ভোলার ‘বুড়ির মসজিদ’
ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নে শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ‘বাপ্তা জামে বুড়ির মসজিদ’টি স্থানীয় স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য উদাহরণ। রঙ-বেরঙের ফুল, লতাপাতা আর তারকাখচিত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি সৌন্দর্যপিপাসুদের আকৃষ্ট করে। দেয়ালের ভেতর-বাইরে ভাঙা প্লেটের টুকরোয় টাইলস করা মসজিদটি দেখতে অনেকে আসেন দূরদূরান্ত থেকে।
বাপ্তার ইলিশা সড়কের পাশে বাংলা ১৩২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বুড়ির মসজিদটি। এই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বৃদ্ধা ওমরজান বিবি মসজিদ এবং তার সাথে একটি পুকুর খননের জন্য এক একর জমি দান করেন। বুড়ির দানকৃত জমির ওপর মসজিদটি স্থাপিত হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি ‘বুড়ির মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।
১০০ বছর আগে মসজিদটি প্রথমে তৈরি হয় ছন দিয়ে। পরবর্তী সময়ে টিন এবং স্বাধীনতার পর এটিকে দালানে রূপান্তরিত করা হয়। মসজিদের কারিগর ছিলেন ওই গ্রামের রাজমিস্ত্রি মরহুম আব্দুল মালেক রাজ। তিনি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে দীর্ঘ নয় মাসের পরিশ্রমে মসজিদটি নির্মাণ করেন।
মসজিদের আলাদা বিশেষত্ব হলো এর ভেতর-বাইর সর্বত্র চিনামাটির ভাঙা প্লেটের টুকরোর ব্যবহার। নিতান্তই ফেলে দেয়া ভাঙা প্লেটের টুকরোর ব্যবহার ভিন্নমাত্রা দিয়েছে স্থাপত্যশিল্পে। স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে দূরদূরান্ত থেকে কুড়িয়ে আনেন এসব প্লেটের টুকরো।
মসজিদের মূল ভবনের দৈর্ঘ ৩০ ফুট, প্রস্থ ২০ ফুট। ১০ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি। ঘরের মাঝখানে মাত্র দুটি পিলারের ওপর ছাদ। ছাদের চার কোনায় চারটি গম্বুজ। তবে বারান্দার অংশে চারটি পিলার রয়েছে।
সেই সময়ে সুপেয় পানির অভাব পূরণের জন্য মসজিদের সাথে প্রায় ৮০ শতাংশ জমির ওপর একটি পুকুর খনন করা হয়। তিন চার গ্রামের মানুষ তখন ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করত। এখন এই পুকুরের পানি কেউ পান না করলেও গ্রামবাসীর কাছে পুকুটির গুরুত্ব কমেনি। জ্যৈষ্ঠে খরতাপে একটু স্বস্তির জন্য এখনো গ্রামবাসী এসে ভিড় করে পুকুরে গোসল করার জন্য। স্থানীয় লোকজনের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকাতা দিয়ে মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হোক।
মসজিদের বর্তমান মোতাওয়াল্লি মো. কাজল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, তার দাদার দাদি ওমরজান বিবি ১০০ বছর আগে এক একর জমি দান করেন। সেই জমির ওপরই এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় মুসল্লি মো. শাজাহান বলেন, মসজিদটি ভোলার ঐতিহ্য বহন করে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে আসেন। মসজিদটি সরকারিভাবে মূল স্থাপত্য ঠিক রেখে সংস্কার করলে এটিই একদিন ভোলার মানুষের কাছে সৌন্দর্যের নিদর্শন বহন করবে। তাই মসজিদটি সংস্কারে সরকারি সহায়তা চান তারা।
ভোলা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার মো. তাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, মসজিদটিতে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক স্থাপত্যবিদ্যার কোনো নিদর্শন না থাকলেও স্থানীয় রাজমিস্ত্রি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও মননশীলতার যে স্বাক্ষর রেখেছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে।
(ঢাকাটাইমস/৩জুন/প্রতিনিধি/জেবি)
মন্তব্য করুন