১০ বছর ধরে শিকলবন্দী দিনাজপুরের আজাদ

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০১৭, ১০:৫৯

শাহ আলম শাহী, দিনাজপুর

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে লোহার শিকলেবন্দী জীবনযাপন করছেন চলিলশ বছরের আজাদ আলী।  তিনি মানসিক রোগী বলে পরিবারের অভিযোগ।

পার্বতীপুর উপজেলার ৫ নং চন্ডিপুর ইউনিয়নের ম্যারেয়া বড় হরিপুর গ্রামের আবতাব উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে আজাদ আলী। তার মায়ের নাম রওশন আরা।

পরিবার বলছে, প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে হয় আজাদের। কয়েক মাস পর তাকে ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে যায় তার স্ত্রী। এর পর থেকে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্যাঁতস্যাঁতে অসাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে বাড়ির পেছনের জঙ্গলে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে আছেন আজাদ। দু’চাখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন তিনি। তার পরিবারের দাবি- সে মানসিক রোগী এবং তাকে বেঁধে না রাখলে মানুষের ওপর চড়াও হয়, কামড় দিয়ে জখম করে। ফলে বিশাল প্রাচীর ঘেরা বাড়ির মধ্যে কোন স্থানেই তার থাকার মত জায়গা হয়নি। বিছানা, মশারিবিহীন ভেজা মাটিতে জঙ্গলের মধ্যে শিকলবন্দী পড়ে আছেন তিনি। আজাদ এখন প্রায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তার বর্তমান অবস্থা এমন করুণ যে, নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসও করা যাবে না। আজাদ সারাদিন শুয়ে থাকে। কেউ তার কাছে গেলে ধরে তাকে কামড়ে দেয়। তবে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আজাদ আলীর বড় ভাই আফতাব উদ্দীন জানান, সে দীর্ঘ ১০-১২ বছর থেকে অসুস্থ। আমরা রংপুরের রফিকুল ডাক্তার এবং পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। পাবনায় তাকে দুইবার রেখে আসি। সেখানে প্রতিবার প্রায় তিনমাস করে রাখা হয়। পরে পাবনা থেকে আমাদের বলেছে, সে ভালো হবে না। পাবনা থেকে আনার পর বিভিন্ন কবিরাজকে দেখানো হয়েছে। তারা বলে, জ্বিনের দৃষ্টি আছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি- ভালো হয়নি। শিকল খুলে দিলে মানুষের ওপর চড়াও হয়, কামড় দিয়ে জখম করে, মানুষকে মারতে চায়। তাই শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।

তবে বাড়ির ভেতরে না রেখে বাড়ির পেছনের জঙ্গলে স্যাঁতস্যাঁতে অসাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে রাখার কারণ জানতে চাইলে কোন প্রকার সদোত্তর দিতে পারেননি আজাদের বড় ভাই আফতাব উদ্দীন।

আজাদ আলীর ছোট ভাবি জানান, সে ১০ বছর ধরে মানসিক রোগে ভুগছে। দ্বিতীয়বার পাবনায় রেখে আসার পর সেখানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে ফেলে এবং মারামারি করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, আপনাদের রোগী আপনারা নিয়ে যান- সে আর ভালো হবে না। তাকে আর রাখেনি। শরীরে কাপড় রাখতে চায় না। কাপড় দিলে তা ছিঁড়ে ফেলে। মাঝখানে একটু ভাল ছিল।

তবে এলাকাবাসী বলছেন, ভিন্ন কথা। আজাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ তার এ অবস্থা। তার প্রতি যত্নবান হলে এবং সঠিক চিকিৎসা করা হলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে বলে তারা মনে করছেন। তার পরিবারের লোকেরা ইচ্ছে  করেই কোন প্রকার চিকিৎসা করছে না বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।

পার্বতীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩জুন/নিজস্ব প্রতিবেদক/এলএ)