পুরান ঢাকায় কত বাহারি শরবত

পরিতোষ আচার্য্য, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ জুন ২০১৭, ১৩:৩৮ | প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০১৭, ১১:৪৯

এই গরমকালে দিনভর সিয়াম সাধনায় রোজাদাররা প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। ইফতারে তাই এক গ্লাস শরবত প্রশান্তি এনে দেয়। হোক তা লেবু-চিনিতে বানানো কিংবা পেস্তাবাদাম দুধে মিশিয়ে অভিজাত পানীয়।

সারা দিনের ক্লান্তি দূর করার পানীয় ঘরেই বেশি তৈরি হয়। এ ছাড়া পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর অনেক ইফতার বাজার ও রেস্টুরেন্টেও নানা ধরনের শরবত বিক্রি হয়। তবে শরবতে ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে আছে পুরান ঢাকা। কত রকমের শরবত যে এখানে পাওয়া যায় তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এখানকার কোনো কোনো শরবতের দোকানের বয়স ৬০-৭০ বছরের বেশি।

এসব দোকানে সারা বছরই শরবত বিক্রি হয়। ক্রেতারা কেউ দোকানেই পান করেন, অনেকে কিনে নিয়ে যান বাড়িতে। তবে রমজান মাসে স্থায়ী দোকানগুলো ছাড়াও চকবাজারের পথেঘাটে, রাস্তার ধারে, অলিতে-গলিতে শরবতের হাট বসে প্রতিদিন। এমন সব শরবত পাবেন, যার অনেকগুলোর নামই হয়তো শোনেননি আপনি।

পেস্তাবাদামের শরবত, কাজুবাদামের শরবত, এরাবিয়ান শরবত, মিশরীয় শরবত, লাবাং, মাঠা, বোরহানি, লাসসি, ফালুদা- আরও কত পদ!

এসব শরবত বানাতে ব্যবহার করা হয় নানা উপাদেয় উপাদান। চকবাজারের এক শরবত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হারুণ-উর-রসিদ জানালেন নানা পদের শরবত বানানোর প্রাথমিক নিয়ম আর উপাদানের কথা। যেমন- পেস্তার শরবত তৈরি হয় জাফরান, দই, চিনি, এলাচি আর পেস্তাবাদাম দিয়ে।

কাজুবাদামের শরবতও তৈরি করা যায় প্রায় একই উপায়ে, পেস্তার বদলে দেয়া হয়ে থাকে কাজুবাদাম।

দেখতে অনেকটা দইয়ের মতো লাবাং তৈরি করা হয় খাঁটি দুধ দিয়ে। সঙ্গে টক-দই, বিট লবণ ও সামান্য পরিমাণে চিনির শিরা দেয়া হয়।

বোরহানি তৈরি হয় টকদই, মিষ্টিদই, সাদা সরিষা, কালো সরিষা, বিটলবণ, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা- এসব উপদান পরিমাণমতো নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে।

আর লাসসি তো সবারই জানা। মিষ্টি দইয়ের সঙ্গে বরফ কুচি আর চিনি ভালো করে মিশিয়ে তৈরি হয় এই পানীয়।

নানা উপাদানে বানানো এসব শরবত যে দামে বিক্রি হয় তা খুব বেশি নয় বলে দাবি বিক্রেতাদের। ভালো দোকানের পেস্তাবাদামের শরবত প্রতিলিটার বিক্রি হয় ১৫০ টাকা, আধা লিটার ১০০ টাকা। বোরহানি ১ লিটার ১০০ টাকা, আধা লিটার ৫০ টাকা। এরাবিয়ান লাবাং ১ লিটার ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, আধা লিটার ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর মাঠা বিক্রি হয় দোকান ও মানভেদে লিটারপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা।

নানা পদের ইফতার সামগ্রীর পাশাপাশি প্রায় সবাই শরবত কেনেন বলে জানান দোকানিরা। তাই শরবতের চাহিদা তুলনামূলক বেশি।

শরবত ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ তো বলেন, ‘শরবতের চাহিদা অন্যান্য ইফতার আইটেমের তুলনায় বেশি। কারণ যারা এখানে ইফতার কিনতে আসে, তারা কোনো না কোনো শরবত কেনেই। তাই শরবতের প্রচুর ক্রেতা।’

প্রতিদিন কী পরিমাণ শরবত বিক্রি হয়- জানতে চাইলে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমার কাছে পেস্তাবাদাম শরবত, লাবাং, লাসসি, ফালুদা ও বোরহানি রয়েছে। আমি প্রতিদিন সব মিলিয়ে গড়ে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার শরবত বিক্রি করতে পারি।’

তবে শুরুর দিকে শরবতের বাজারে পুরান ঢাকার ক্রেতা বেশি থাকলেও এখন ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতার ভিড় বেড়েছে।

চকবাজারে সারা বছর শরবত বিক্রি করে এমন একটি দোকান নূরানী কোল্ড ড্রিংকস। ৭০ বছর ধরে এখানে লাসসি আর লেবুর শরবত বিক্রি করছে তারা। তাদের শরবত বানানোর একজন কারিগর আছেন, যিনি ৫৫ বছর ধরে শুধু শরবতই বানিয়ে চলেছেন। নূরানী কোল্ড ড্রিংকসে লেবুর শরবত বিক্রি হয়ে থাকে প্রতি গ্লাস ১৫ টাকা ও লাসসি প্রতি গ্লাস ৩০ টাকা। প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার গ্লাস শরবত বিক্রি করে থাকে নূরানী কোল্ড ড্রিংকস। এমনটিই জানিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী এ দোকানটির মালিক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন।

শরবত কিনতে আসা দুই ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় ঢাকাটাইমসের। যানজট ডিঙিয়ে এখানে কেন আসা- এমন প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতার আইটেমে শরবত রাখতেই হয়। আর আমি চকবাজারে ইফতার কিনতে এলে পেস্তাবাদামের শরবত কিনিই, যদিও এটা দামে একটু বেশি।’

আক্তার আলী খান এসেছিলেন স্বামীবাগ থেকে। তার এলাকায় শরবত পাওয়া গেলেও তিনি প্রতিদিন এখানেই আসেন শরবত কেনার জন্য। তিনি বলেন, ‘বাসায় তো আমরা লেবু দিয়ে শরবত করিই। কিন্তু সে তো আর স্পেশাল কিছু না। চকবাজারের লাবাং, বোরহানি, বাদামের শরবত আর লাসসি আমার ও পরিবারের সবার অনেক ভালো লাগে। তাই যানজট পেরিয়ে ছুটে আসি চকবাজারে।’

(ঢাকাটাইমস/৩জুন/কেএস/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :