আহা! মেয়েদের বাবারা কত অসহায়
এক. মাগুরা সদরের গোপীনাথপুর গ্রামে এক মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল স্থানীয় বখাটে সজীব হোসেন মোল্যা। মেয়েটির বাবা রাজি হয়নি। ২ জুন রাতে সজীব তার দলবল নিয়ে মেয়েটিকে তার বাড়ি থেকে তুলে আনতে যায়। বাবা বাধা দিলে সজীব ও তার লোকেরা বাবা-মেয়ে দুজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। তারা দুজনেই হাসপাতালে ভর্তি। মেয়েটি কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিল। সজীবসহ তিনজনকে ধরেছে পুলিশ। এর আগেও মেয়েকে বিরক্ত করতো সজীব। এ ঘটনায় মামলা হয়েছিল। পরে চাপ দিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করা হয়। মেয়েটির বাবার যদি অঢেল টাকা থাকতো, তবে? তিনি যদি প্রভাবশালী কেউ হতেন? তাহলে কি তাকে হুমকি-ধমকির মুখে মামলা তুলে নিতে হতো? আহা! মেয়েদের বাবারা কত অসহায়।
দুই.
বনানীর রেইনট্রির ঘটনায় ধর্ষণের কোনো আলামত পায়নি ফরেনসিক বিভাগ। মানে হচ্ছে, বিশ^বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়নি। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ বলেছেন, সবগুলো রিপোর্ট আমাদের হাতে পৌঁছেছে। এ সংক্রান্ত আর কোনো রিপোর্ট বাকি নেই। রিপোর্ট দেখে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই চূড়ান্ত রিপোর্ট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার মানে মেয়ে দুটো ধর্ষিত হয়নি।গত ২৮ মার্চ রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপর গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা হয়। আসামিরা হলেন, সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, বিল্লাল হোসেন, সাদনান ও সাকিফ। সবাই কারাগারে আছে। এদের মধ্যে চারজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। কোনটা ঠিক ফরেনসিক রিপোর্ট নাকি আসামিদের স্বীকারোক্তি? আসামিদের বাবারা প্রচুর সম্পদশালী। তাদের মতো মেয়েদের বাবারাও যদি অঢেল সম্পদের মালিক হতেন? সমাজের প্রভাবশালী কেউ হতেন? আহা! মেয়েদের বাবারা কত অসহায়।
তিন.
গাজীপুরের শ্রীপুরের কর্ণপুর গ্রামের হযরত আলী ও তার মেয়ে আয়েশা রেলের নিচে জীবন দিয়েছিল। গত ২৯ এপ্রিলের ঘটনা। মেয়েটির বয়স ছিল ১০। স্থানীয় বখাটে ফারুকের উৎপাতে বাবা-মায়ের আত্মাহুতি। মেয়ে আর স্বামীকে হারিয়ে হালিমার দিন কাটে একা। মামলার প্রধান আসামি ফারুককে ধরেছে পুলিশ। হযরত আলী বেঁচে থাকতে মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের বিচার চাইতে থানায় গিয়েছিলেন। পুলিশ শোনেনি। গিয়েছিলেন এলাকার মাতবর গোছের মানুষের কাছে, যারা জনপ্রতিনিধি। কাজ হয়নি। তারা পাগল বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। উগ্র ফারুক ক্ষোভে আলীর একা গরু ধরে নিয়ে খেয়েছে। সেই বিচারও পায়নি। আজ যদি হযরত আলী সমাজের প্রভাবশালী কেউ হতেন, তবে? তিনি কি বেঁচে থাকতে বিচার পেতেন না? মেয়েকে নিরাপত্তা দিতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে সন্তানকে বুকে নিয়ে আত্মহত্যা করতে হতো? আহা! মেয়েদের বাবারা কত অসহায়।চার. পর পর দুবার ময়নাতদন্ত করে সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা বলেছিলেন, মৃত্যুর আগে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হয়েছে। তবে এটা ধর্ষণ কি না তারা বুঝতে পারেননি। মেয়েটি কীভাবে মারা গেল তাও তারা বলতে পারেননি। গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুর লাশ পাওয়া যায়। জায়গাটি তনুদের বাসার দুই-তিন শ গজ দূরে। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী। কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন বাবাব। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। ইয়ার সাহেবের যদি অনেক ক্ষমতাধর কেউ হতেন। তবে মেয়ে হত্যার বিচার নিশ্চিত পেতেন। আহা! মেয়েদের বাবারা কত অসহায়।
মন্তব্য করুন