সোনারগাঁও হোটেলে মনিরের আড়াই প্যাঁচ

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০১৭, ২০:২০

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস

প্যারিচাঁদ মিত্র তার ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাসে লিখেছেনÑ ‘যে সকল লোক জিলিপীর ফেরে চলে, তাহারা নানা কথা বলে।’ মানুষের মনের কুটিলতার তুলনা চলে জিলেপির সঙ্গে। এ নিয়ে জনপ্রিয় গানও আছে। বেশ কিছুদিন মানুষের মুখে মুখে ছিল ‘ডাবল ধামাল’ ছবিতে মল্লিকা শেরাওয়াতের আইটেম সং-‘জলেবি বাই’। বাংলার জিলেপিকেই হিন্দিতে বলে ‘জলেবি’। আবার আড়াই প্যাঁচ বললেও চেনে লোকে।

হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে পাঁচ বছর ধরে আড়াই প্যাঁচ নিয়ে আছেন মনির হোসেন। দারুণ হাত। না তাকিয়েই গরম ঘিয়ে আড়াই প্যাঁচের ফুল আঁকছেন। শনিবার সন্ধ্যায় সোনারগাঁও হোটেলের ক্যাফের সামনে দেখা তার সঙ্গে। সুন্দর সাজানো পরিবেশে তিনি জিলেপি ভাজছেন। কথা বলতে চাইলে বললেন, ‘পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন, জিলেপিগুলো নামিয়ে নিচ্ছি।’

উনুনের গরম ঘি থেকে জিলেপি নামিয়ে ছেড়ে দিলেন চিনির চকচকে সিরায়। কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে গরম গরম জিলেপি তুলে রাখলেন পাত্রে। বললেন, ‘বলুন কী বলবেন।’
-বেশ সুবাস ছড়াচ্ছে!

‘হ্যাঁ। গরম ঘিয়ে ভাজা। সুবাস তো ছড়াবেই।’
-সোনারগাঁওয়ের জিলেপির বিশেষত্ব কী?
‘বিশেষভাবে তৈরি। ঘি, ময়দা, বাটারওয়েল আর চিনির বাইরে কিছু নেই।’
-এই পেশায় কত দিন আপনি?

‘এই তো সাড়ে সাত বছরে পড়ল বলে।’
-জিলেপি কি সারা বছর তৈরি করেন? না শুধু রমজানে?
‘সারা বছরই কমবেশি বানাই। অর্ডার থাকলে বানাতে হয়। তবে রমজানে পুরো মাসই।’
-আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়?
‘শরিয়তপুরের ভেদরগঞ্জ।’

-কর্মজীবনের শুরু থেকেই কি এ পেশায়?
‘না, এর আগে ছোটখাটো ব্যবসা করতাম। পরে এক আত্মীয় এখানে এনেছেন।’
কথার ফাঁকে জানালেন এই পেশাতেই ভালো আছেন। বিয়ে করেছেন এক যুগের বেশি সময় আগে। দুই ছেলে। বড়টার বয়স ১২ বছর, আর ছোটটার পাঁচ বছর।

-যখন জিলেপি বানাতে হয় না তখন কী করেন?
‘তখন ব্রেড তৈরি করি। বিশেষ করে শর্মার জন্য ব্রেড করতে হয়।’
-দাম কত জিলেপির?

‘প্রতি কেজি এক হাজার ৫০০ টাকা। হাফ কেজি ৮০০ টাকা।’
-দাম তো কম না। বিক্রি কেমন হয়?

‘মাশা আল্লাহ ভালো। দুপুর থেকে বানাতে শুরু করি। একেবারে সন্ধ্যা পর্যন্ত বানাতে হয়। কেউ একবার এই জিলেপি খেলে দ্বিতীয়বার খাওয়ার ইচ্ছে হবেই।’

ইফতারের সময় হয়ে এসেছে। মনির হোসেন ব্যস্ত হয়ে পড়লেন গরম ঘিয়ে জিলেপির খামির ছাড়তে। গল্প করার ফুরসত নেই। বললাম, ‘ভালো থাকবেন, মনির। পরে কথা হবে।’

মুচকি হেসে আড়াই প্যাঁচের কুশলী বললেন, ‘ইফতারে তো আছেন। জিলেপি কেমন হলো চেখে দেখবেন।’
জিলেপি নিয়ে একটি কৌতুক-

এক লোক তার দোকানে জিলাপি বানাচ্ছিল। একজন উৎসুক পথচারী জানতে চাইলেন, ‘কত দিন ধরে জিলেপি বানাচ্ছেন?’ জবাবে দোকানি বলল, ‘ত্রিশ বছর।’ পথচারী অবজ্ঞার সুরে বলল ‘বুঝতে পারছি ত্রিশ বছর চেষ্টা করেও সোজা জিলেপি বানাতে শেখেননি।’

(ঢাকাটাইমস/৩জুন/মোআ)