রাজনীতি আর চিকিৎসায় সমান ব্যস্ত বি. চৌধুরী

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ জুন ২০১৭, ১১:১৫ | প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০১৭, ০৮:১৯

প্রবীণ চিকিৎসক, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ। ছিলেন বিএনপি সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। সব সময়ই ব্যস্ততার ভেতর কেটেছে জীবন। অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, যিনি বি. চৌধুরী নামে সমধিক পরিচিত, এখনো ব্যস্ত সময় কাটান রাজনীতি-চিকিৎসাসহ নানা কাজে। তবে রাজনৈতিক ব্যস্ততা অনেকটাই কমিয়েছেন তিনি।

জিয়াউর রহমানের সময় বিএনপির মাধমে রাজনীতিতে যাত্রা বি. চৌধুরীর। দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিবও ছিলেন তিনি। এখন অবশ্য নিজের রাজনৈতিক দল বিকল্পধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি এই দলের প্রেসিডেন্ট।

তবে নিজ দল বিকল্পধারার খুব বেশি কার‌্যক্রম নেই। ফলে রাজনৈতিক ব্যস্ততাও কম। নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, সময় দেন। সপ্তাহে দুই দিন বারিধারায় নিয়ম করে রোগী দেখেন বি. চৌধুরী।

১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর জন্ম নেয়া বি. চৌধুরী বিএনপির মনোনয়নে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিজ নির্বাচনীএলাকা মুন্সিগঞ্জ-১ আসন ( সিরাজদিখান-শ্রীনগর) থেকে। বিভিন্ন সময়ে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জয় লাভের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। পরবর্তীকালে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। তবে বেশিদিন এই পদে থাকতে পারেননি তিনি। নিজ দল বিএনপির সঙ্গে একটি বিতর্ককে কেন্দ্র করে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ ও বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন বি. চৌধুরী।

২০১৪ সালের মার্চে তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যার প্রেসিডেন্ট হন তিনি। এখনো তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

ছেলে মাহী বি. চৌধুরীকে এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিব পদে বসান। ওই বছর উপনির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে জয়লাভ করে বিকল্পধারা। বর্তমান সংসদে দলটির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। সবকিছু মিলে দলের কার‌্যক্রম খুব বেশি নেই।

সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলের তেমন কার্যক্রম না থাকায় দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি নিজের পেশাগত কাজে সময় দিচ্ছেন বি. চৌধুরী। এর বাইরে বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া, পরিবারকে সময় দেয়া আর বাগান পরিচর্যা করেন তিনি।

প্রবীণ এই রাজনীতিক নিজের বারিধারার বাসার ছাদে একটি বাগান করেছেন। সময়ে সময়ে বাগান পরিচর্চার জন্য ছাদে উঠে যান। গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জেও তিনি একটি বড় পরিসরে নার্সারি করেছেন। বেশ কয়েকজন লোক সেটি পরিচর্চার দায়িত্বে রয়েছে। বাড়ি গেলে তিনি নার্সারিতে ঢুঁ মারেন।

বি. চৌধুরীর ব্যস্ততা নিয়ে তার প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তার (বি চৌধুরী) বয়স হয়েছে। হয়তো অনেকে ভাবেন এখন তার কোনো ব্যস্ততা নেই। কিন্তু তিনি আগে যেমন ব্যস্ত ছিলেন, এখনো সেই রকমের ব্যস্ত সময় কাটান।’

কোন ধরনের কাজে ব্যস্ত থাকেন জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার নিয়ম করে বারিধারায় রোগী দেখেন। এই দুই দিন তিনি অন্য কোনো কাজ রাখেন না। প্রতি সোমবার উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজে সময় দেন। প্রতিষ্ঠানটির তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। সেখানে তিনি একটি ক্লাসও নেন। এ ছাড়া অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ, মিটিং থাকলে অংশ নেন।’

বারিধারার বাসার ছাদে সুন্দর একটি বাগান আছে উল্লেখ করে বি. চৌধুরীর প্রেস সচিব বলেন, সময় পেলে সেখানে একটু পরিচর্চার কাজ করেন। প্রায় প্রতি মাসেই গ্রামের বাড়ি যান। সেখানে তার বেশ বড় ধরনের নার্সারি আছে। লোকজন আছে তারা নার্সারি দেখভাল করেন। কিন্তু বি. চৌধুরী গেলে তিনি নিজেও বাগান পরিচর্চায় হাত লাগান বলে জানান জাহাঙ্গীর।

তাহলে কি রাজনৈতিক ব্যস্তাতা নেই বি. চৌধুরীর। তা আছে তবে কম। বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা নানা সমস্যা নিয়ে দলীয় প্রধানের কাছে আসেন। তিনি তাদের সমস্যা শোনেন, এবং তা সমাধান করার চেষ্টা করেন। তিনি বিকল্প ধারার দলীয় প্রধান হলেও ছেলে মাহী বি চৌধুরীই মূলত দেখভাল করেন দলের কাজ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিকল্পধারার হয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করেন মাহী। তখন দলকে বেশ তৎপর দেখা গেছে। ওই নির্বাচনে অবশ্য বিকল্পধারা আশা করেছিল বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন মাহী। কিন্তু শেষ পর‌্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মনোনয়ন দেন আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে। এরপর থেকে বিএনপির সঙ্গে বিকল্পধারার টানাপোড়েন শুরু।

এর জেরে গত বছরের ১১ জুন রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে রাজনীতিবিদদের সম্মানে খালেদা জিয়ার ইফতারে যাননি বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বিচ. চৌধুরী। দলের কোনো প্রতিনিধিকেও পাঠাননি তিনি।

এখন আবার গুঞ্জন শোনা যায়, বিএনপিতে ফিরছেন বি. চৌধুরী। তবে তা নিয়ে ধোঁয়াশাও থাকলেও আগামী ৫ জুন খালেদা জিয়ার আমন্ত্রণে ইফতারে যাচ্ছেন বি. চৌধুরী- এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের ইফতারেও তিনি যাবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে বি. চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, একাধিক রাজনৈতিক দলের লোকজন, কখনো তাদের প্রতিনিধি বি. চৌধুরীর সঙ্গে জোট করার বিষয় নিয়ে আলাপ করছেন।

বিকল্প ধারার একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জোট করা নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত জানা যাবে না। নির্বাচনের সময় আসুক তখনই জানতে পারবেন আমরা বিএনপি না আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করতে যাব। অপেক্ষা করুন।’

বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানতে মোবাইল ফোনে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :